হোম জাতীয় বন্যায় জ্বরে মৃত্যু হওয়া বাবাকে রান্নাঘরে দাফন

জাতীয় ডেস্ক :

নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর সদরের পানি কিছুটা কমলেও অন্যান্য উপজেলায় বেড়েই চলেছে। কোমরপানিতে ঘরবন্দি মানুষ। বাড়ি থেকে মূল সড়কে যেতে লাগে নৌকা। মরদেহ দাফন করতে হয়েছে রান্নাঘরে।

বুধবার (২২ জুন) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে তেমন কোনো উন্নতি নেই নেত্রকোনা জেলার। পুরো এক সপ্তাহে ১০ উপজেলার ৫ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রথম বন্যাকবলিত কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর এলাকায় সেনাবাহিনীসহ প্রশাসন এবং নানা সংগঠনের উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চালু থাকলেও কংশ নদীর পানির ঢল এখন অন্যান্য এলাকায় ধাবিত হচ্ছে।

এদিকে মঙ্গলবার (২২ জুন) জ্বরে স্বরমুশিয়া ইউনিয়নের মাদল গ্রামের আলী উসমানের ছেলে সলিমুদ্দিন (৬৫) মারা গেছেন। কবরস্থানসহ গ্রামীণ সড়কেও পানি থাকায় রান্নাঘরেই তাকে সমাহিত করেন স্বজনরা।

সলিমুদ্দিনের ছেলে বলেন, ‘বাবা বেশ কিছুদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। গতকাল সকালে শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু কোমর পরিমাণ পানির কারণে হাসপাতালেও নেয়া যায়নি। দুপুরের দিকে বাবা মারা যান। কোমরপানির মধ্যে কবরস্থানেও দাফন করার কোনো সুযোগ নেই। পরে কোনো উপায় না পেয়ে কোনো রকম জানাজা দিয়ে রান্নাঘরের ভেতর কবর দিতে হয়েছে। তবে সেখানেও পানি ওঠে।’

মাইঝপাড়া গ্রামের বকুলা আক্তার বারান্দায় চুলা বসিয়ে দুদিন পর হাঁড়িতে চাল দিয়েছেন। স্বামী সেকান্দর সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০ দিন আগে মারা যান। বাড়িতে ৪০ দিনের আয়োজন তো দূরের কথা, কোনো হুজুরকেও খাওয়াতে পারছেন না। সে কারণে বারান্দায় চুলা পেতে মাদরাসার দুই এতিম ছাত্রকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন।

এদিকে যাদবপুর, সিংরাজনা, বিছরাকান্দা, মাদল এলাকার শত শত বাড়িতে হাঁটুসহ কোমর পরিমাণ পানি জমলেও নেই কোনো সহযোগিতা। অনেকের নেই ডুবে যাওয়া সড়ক পেরিয়ে খাবার আনার উপায়। বেশ কিছু মানুষ চলে যাচ্ছে ট্রলারে চড়ে অন্যত্র। আবার কিছু পরিবার আটপাড়া নেত্রকোনা মেইন সড়কের পাশে খালি জায়গায় গবাদি পশুসহ নিয়েছে আশ্রয়। ঘরবন্দি অসংখ্য মানুষ।

বাড়িঘর থেকে বের হতে পারছেন না নারী ও শিশুরা। একমাত্র ভরসা তাদের নৌকা। এক বাড়ির ডিঙি নৌকা এখন কয়েক বাড়ির ভরসা। ছোট ছোট শিশু থেকে শুরু করে সবাইকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নৌকায় চলতে হচ্ছে। চুলাগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আটপাড়া উপজেলার যাদবপুরের অর্ধশত পরিবারে রান্না বন্ধ রয়েছে।

এদিকে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বিভিন্ন দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে প্রায় প্রতিদিন দিচ্ছেন ত্রাণ সহায়তা। দুর্গাপুরে ত্রাণ সহায়তাসহ উদ্ধার কাজে নেমেছেন ১৯ পদাতিকের জিওসি মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী।

নেত্রকোনা পৌরসভার উদ্যোগে বারহাট্টার দশধার এলাকায় দিচ্ছেন ৫০০ প্যাকেট ত্রাণ সহায়তা। আওয়ামী শ্রমিক লীগের উদ্যোগে বড়াইল এলাকায় দেয়া হচ্ছে ২০০ প্যাকেট শুকনো খাবার।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন