হোম অন্যান্যসারাদেশ ফকিরহাট হাসপাতালে তিন টাকায় চিকিৎসাসহ দেয়া হচ্ছে ওষুধ ও চশমা

মান্না দে, ফকিরহাট (বাগেরহাট) :

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার কাঁঠালতলা গ্রামের কুলসুম বেগম (৪৩) বেশ-কিছুদিন ধরে চোখে ঝাপসা দেখা সহ অনবরত চুলকানোর সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি ফোলা আর লাল হয়ে যাওয়া চোখ নিয়ে এসেছেন ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বহির্বিভাগ থেকে তিন টাকার টিকিট নিয়ে হাসপাতালের কমিউনিটি ভীষণ সেন্টার গেলেন। সেখানে চোখের চিকিৎসার দায়িত্বে আছেন দু’জন প্রশিক্ষিত নার্স। তাঁরা কুলসুমকে আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে পরীক্ষা করলেন। এরপর গোপালগঞ্জের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ আবদুল হাই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুলসুমের সাথে চোখের সমস্যা নিয়ে কথা বললেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে ওই চিকিৎসক অনলাইনে ব্যবস্থাপত্র পাঠিয়ে দিলেন। ব্যবস্থাপত্রের সাথে নূপুরকে বিনামূল্যে দেওয়া হল দামী চোখের ড্রপ আর চশমা।

শনিবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে কুলসুমের মতো এভাবে একে একে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হল তুলিয়া খানম, সনাতন মণ্ডল, মর্জিনা বেগম, ফয়সাল শেখ সহ অন্তত ৩৫জন চক্ষু রোগীকে। ৫ বছরের শিশু থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধাও চোখের ডাক্তার দেখিয়েছেন এখানে। চিকিৎসা পেয়ে তাঁরা সরকারি সেবায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। শুক্রবার ব্যতীত সপ্তাহে ৬দিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টি পর্যন্ত মেলে চিকিৎসা সেবা।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে হাসপাতালের আই ভীষণ সেন্টার থেকে ৮৪০ জন রোগী চোখের চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৭১১ জন রোগী বিনামূল্যে ওষুধ ও চশমা পেয়েছেন। এছাড়া রোগীদের দেওয়া উচ্চ মূল্যের টিয়ার, প্যাটানল ও এন্টিবায়োটিক ড্রপ রয়েছে।

ফকিরহাট কমিউনিটি ভীষণ সেন্টারের দায়িত্বে আছেন এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ নার্স পূর্ণিমা রানী ও বিউটি এডবর। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ দুজনকে ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও ভারতের অরবিন্দ আই হসপিটাল থেকে দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ দিয়ে এনেছে।

পূর্ণিমা রানী জানান, এখানে চোখ পরীক্ষার যাবতীয় যন্ত্রপাতি আছে। এগুলো দিয়ে রোগীদের চোখের পরীক্ষা করা হয়। অনলাইনে নিবন্ধন করে রোগীর পরীক্ষার যাবতীয় তথ্য অনলাইনে পাঠানো হয়। রোগীর এ তথ্যগুলো দেখে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞরা ব্যবস্থাপত্র অনলাইনে পাঠিয়ে দেন। প্রয়োজনে রোগীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন চিকিৎসকেরা। তবে গ্লুকোমা, কর্নিয়া আলসার, ছানিসহ জটিল রোগের জন্য ওই চিকিৎসকেরা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতালে যেতে বলেন। সেখানে অস্ত্রোপচারসহ সব ধরনের চিকিৎসা বিনা মূল্যে দেওয়া হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু সাদাত মোহাম্মদ মফিদুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল আই কেয়ার বিভাগ এটি পরিচালনা করে। ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিপুল সংখ্যক রোগী এ বিশেষায়িত সেবা পাচ্ছেন।

ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাশ বলেন, স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া জনগণের মৌলিক অধিকার। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে ফকিরহাটে এই ভীষণ সেন্টারের মাধ্যমে গ্রামের অসহায় ও দরিদ্র জনগণ যে সেবা পাচ্ছে তা প্রশংসার দাবী রাখে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন