আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন,তিনি রাশিয়ার ওপর কঠোরতর নিষেধাজ্ঞা দিতে প্রস্তুত। তবে ন্যাটো দেশগুলোকে রুশ তেল কেনা বন্ধ করতে হবে। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন,ন্যাটো দেশগুলো একমত হলে এবং একই পদক্ষেপ শুরু করলে তিনি ‘রাশিয়ার ওপর বড় নিষেধাজ্ঞা’ দিতে প্রস্তুত। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ট্রাম্প বারবার মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তবে ক্রেমলিন তার নির্ধারিত সময়সীমা ও নিষেধাজ্ঞার হুমকি উপেক্ষা করেছে। তারপরও এতদিন কোনও পদক্ষেপ নেননি তিনি।
রুশ তেল কেনাকে তিনি ‘চমকপ্রদ’ বলে বর্ণনা করেছেন। ন্যাটোকে চীনের ওপর ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন। দাবি করেছেন এটি রাশিয়ার ওপর চীনের ‘শক্ত নিয়ন্ত্রণ’ দুর্বল করবে।
পোস্টটিকে ট্রাম্প ন্যাটো দেশগুলোকে লেখা চিঠি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, “আমি প্রস্তুত, তোমরা যখন প্রস্তুত, তখনই। শুধু বলো,কবে?”
তিনি আরও লেখেন, ‘কিছু দেশের মাধ্যমে রুশ তেল কেনা সত্যিই চমকপ্রদ! এটি রাশিয়ার সঙ্গে তোমাদের আলোচনার অবস্থান এবং দরকষাকষির ক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে দুর্বল করে।’
ট্রাম্প আরও দাবি করেছেন,রুশ জ্বালানি কেনা বন্ধ করা এবং চীনের ওপর ভারী শুল্ক আরোপ করা সংঘাত অবসানে ‘বড় সহায়তা’ দেবে। যুদ্ধ শেষে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রাশিয়ার জ্বালানির ওপর ইউরোপের নির্ভরশীলতা মস্কোর পূর্ণমাত্রার ইউক্রেন আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে নাটকীয়ভাবে কমে গেছে।
২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রায় ৪৫ শতাংশ গ্যাস রাশিয়া থেকে আমদানি করত। এ বছর তা প্রায় ১৩ শতাংশে নামবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ট্রাম্পের কথায় বোঝা যায় তিনি মনে করেন এ হ্রাস যথেষ্ট নয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই বার্তা এসেছে এমন সময়ে যখন ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে রাশিয়ার উত্তেজনা বেড়েছে। বুধবার এক ডজনেরও বেশি রুশ ড্রোন পোল্যান্ডের আকাশসীমায় প্রবেশ করে।
ওয়ারশ বলেছে,এই অনুপ্রবেশ ছিল ইচ্ছাকৃত। তবে মস্কো ঘটনাটিকে হালকাভাবে নিয়ে বলেছে, পোল্যান্ডের কোনও স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করার পরিকল্পনা নেই তাদের।
গত সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছে রুশ তেল ও গ্যাস কেনা বন্ধ করার দাবি জানান।
এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের রাশিয়া থেকে যে কোনও ধরনের জ্বালানি কেনা বন্ধ করতে হবে। আর হ্যাঁ,কোনও অবস্থাতেই রাশিয়ার সঙ্গে কোনও চুক্তি করা যাবে না। আমরা যদি তাদের থামাতে চাই,তাহলে রাশিয়ার সঙ্গে কোনও চুক্তিই করা যাবে না।’
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার’-এর হিসাবে, ২০২২ সাল থেকে ইউরোপীয় দেশগুলো রুশ তেল ও গ্যাস কিনতে প্রায় ২১০ বিলিয়ন ইউরো (১৮২ বিলিয়ন পাউন্ড) ব্যয় করেছে। এই অর্থের বড় অংশই ইউক্রেনে আগ্রাসনে ব্যবহার হয়েছে।
ইইউ আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ২০২৮ সালের মধ্যে রুশ জ্বালানি কেনা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করবে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে এই প্রক্রিয়া দ্রুত হোক।
তবে ট্রাম্পের বার্তাটি ছিল ন্যাটোর উদ্দেশ্যে, ইইউর উদ্দেশ্যে নয়। এতে রাশিয়ার বড় ক্রেতা তুরস্কও অন্তর্ভুক্ত। জোটের অন্য যেকোনও সদস্যের চেয়ে মস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে তুরস্ক।
চলতি সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে,রাশিয়ার ওপর কঠোরতর নিষেধাজ্ঞার সর্বশেষ হুমকি দেন ট্রাম্প; যখন ক্রেমলিন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ গোলাবর্ষণ চালায়।
এর আগে রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল-যার মধ্যে ২৫ শতাংশ ছিল জরিমানা। ট্রাম্পের মতে, এই লেনদেনই ইউক্রেন যুদ্ধের অন্যতম অর্থায়নের উৎস।