নিউজ ডেস্ক:
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রাম টেংরামারি। গ্রামের মোল্লার মোড়ে একটি চায়ের দোকান দিয়েছেন জিয়াউর রহমান। পদ-পদবি না থাকলেও স্থানীয় বিএনপির সক্রিয় কর্মী তিনি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়িছাড়া ছিলেন কয়েকবার। কয়েক দিন আগে তার দোকানে চা পান করার সময় তারেক রহমানের দেশে না আসার প্রসঙ্গ উঠালে জিয়াউর রহমান বললেন, ‘তারেক রহমান আগামী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। উনি দ্রুতই দেশে আসবেন, দলের হাল ধরবেন, নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করবেন। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে তাকে মামলা দিয়ে দেশে আসতে দেওয়া হয়নি।’
এক-এগারো সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ১৮ মাস কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে বিএনপির নেতারা নানা বক্তব্য দেন। কিন্তু তিনি ফিরতে পারেননি। সর্বশেষ গত ২৩ নভেম্বর তার মা খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হলে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠে রাজনীতি। এই পরিপ্রেক্ষিতে তারেক রহমান নিজেই ফেসবুকে স্ট্যাটাসে জানান, ‘এমন সংকটকালে মায়ের স্নেহস্পর্শ পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেকোনও সন্তানের মতো আমারও রয়েছে। কিন্তু অন্য আর সবার মতো এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। স্পর্শকাতর এই বিষয়টি বিস্তারিত বর্ণনার অবকাশও সীমিত।’
বিএনপির সমর্থকরাও তার ওপর ভরসা রাখছেন। বিগত চারদিনে বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিকেরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তরুণ, প্রবীণ ও বিশেষ করে আগামী নির্বাচনের ভোটার হবেন— এমন সমর্থকরাও তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে ‘রাজনৈতিক’ হিসেবেই বিবেচনা করছেন। কোনও কোনও কর্মীর অবশ্য মন খারাপ। বলছেন, তারেক রহমান না ফেরায় ভালো লাগছে না। এ কারণেই অনেকে তার দ্রুত ফেরা জরুরি বলে উল্লেখ করেছেন।
যশোরের টেংরামারি গ্রামের বিএনপি সমর্থক জিয়াউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, ‘রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে তিনি আসতে চেয়েছিলেন, আসেননি। তিনি এলে নেতাকর্মীরা চাঙা হয়ে যাবেন। অনলাইনে দেশ ও দলের নেতৃত্ব দিলেও প্রতিটি নেতাকর্মী তিনি যে যে নির্দেশনা দেবেন—সে অনুযায়ী কাজ করবেন। যেমনটি তার নির্দেশে বিগত আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছিল।’
সংবাদকর্মীরা রাজধানী, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, বরিশাল, যশোর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বিএনপির তরুণ, নবীন-প্রবীণ সমর্থকদের সঙ্গে আলাপ করেন। জানতে চান, তারেক রহমানের এখন পর্যন্ত দেশে না ফেরাকে তারা কীভাবে দেখছেন।
‘ফেরা নিয়ে ষড়যন্ত্র আছে, উড়িয়ে দেওয়া যায় না’
গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুল ইসলাম মিন্টু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারেক রহমান ১৮ কোটি মানুষের নেতা। আগামী দিনে তার দিকেই চেয়ে আছে দেশ। তবে তার বিরুদ্ধে এক ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। না হয় মায়ের এমন কঠিন মুহূর্তে কোনও সন্তান পাশে না থেকে পারেন না। আমরা মনে করি, তিনি নিজেও দেশে আসার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন।’
‘তার ফেরা নিয়ে এক ধরনের ষড়যন্ত্র আছে, এটিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এক্ষেত্রে সরকারকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। তার নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।’
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা বিএনপির সদস্য এ কে আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারেক রহমান একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে লন্ডনে গেছেন। এরপর ফ্যাসিস্ট সরকার তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়েছে। তাকে দেশে আসতে দেয়নি। এ মুহূর্তে তার দেশে আসা জরুরি। বিশেষ করে দলীয় চেয়ারপারসন ও জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তিনি যেকোনও কৌশলে ফিরবেন বলে আশা রাখি। কারণ তিনি না এলে দলীয় নেতাকর্মীরা আশাহত হতে পারেন। আমাদের বিশ্বাস তিনি দেশে আসার পূর্ণ প্রস্তুতি নিলে কোনও কিছুই বাধা হতে পারবে না।’
পল্টন থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল হোসেনের মন্তব্য, ‘তারেক রহমান নিশ্চয়ই দেশে আসবেন। তবে এখনও কেন আসতে পারছেন না, তা তার জন্য বলা কঠিন।’
‘তারেকের না ফেরায় ভালো লাগছে না’ জাকিরের
বিএনপির সমর্থক বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলা সদরের বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, ‘তারেক রহমানের দেশে না ফেরার বিষয়টি ভালো লাগছে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের লক্ষ্যে তার দেশে আসা প্রয়োজন।’
উজিরপুর উপজেলার ওটরা ইউনিয়নের বাসিন্দা ও বিএনপির সমর্থক জামাল উদ্দিন বলেন,‘ তারেক রহমান নিরাপত্তার কারণে দেশে আসছেন না। তবে তার দেশে আসা খুব জরুরি। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনের আগে দেশে আসলে তরুণ ভোটারের সঙ্গে সঙ্গে যারা তারেক রহমানের বাবা-মাকে ভালোবাসেন, তাদের ভোট বিএনপির পক্ষে যাবে। তা না হলে নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে।’
তরুণ সমর্থক হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘তারেক রহমানের স্লোগান ‘তরুণের প্রথম ভোট ধানের শীষের পক্ষে হোক’। এ স্লোগান বাস্তবায়ন করতে হলে নির্বাচনের আগে তাকে অবশ্যই দেশে আসতে হবে। তা না হলে তরুণদের ভোট হারানোর শঙ্কার রয়েছে বলে দাবি করেন এ তরুণ সমর্থক।’
নিরাপত্তার কারণে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে আসতে পারছেন না বলে মনে করেন বরিশালের প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবায়েদুল হক চান ও তরুণ সমর্থক জসিম উদ্দিন। জসিম উদ্দিনের মতে, তারেক রহমান নিরাপত্তার কারণে দেশে আসছেন না। দল এবং বাইরের শত্রু দ্বারা তিনি আক্রান্ত হতে পারেন। আর সরকারের নিরাপত্তায়ও তিনি বিশ্বাস করছেন না। তাকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে তিনি মনে করছেন। তবে সব ষড়যন্ত্রকে পেছনে ফেলে তার দেশে আসা প্রয়োজন বলে মনে করেন এ সমর্থক।
এবায়েদুল হক চান মনে করেন, বর্তমান সরকার তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি পরিষ্কার করলে তারেক রহমান দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশে ফিরে আসবেন। আর তার দেশে আসার অপেক্ষায় কোটি কোটি মানুষ। দলীয় নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত আছেন। তারা নির্বাচনের জন্য সহযোগী হিসেবে কাজ করবেন। তবে নির্বাচনের পূর্বে তার দেশে আসা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই প্রবীণ নেতা।
বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহিন বলেন, ‘তারেক রহমান দেশে আসার বিষয়টি নিয়ে শুধু আমরা চিন্তা করি তা না, তারেক রহমান নিজেও দেশে আসার চিন্তা করছেন। এখন পরিবেশ পরিস্থিতিসহ সবকিছ্রু বিবেচনা করবেন দলের হাইকমান্ড এবং তারেক রহমান নিজে। এটা তাদের উপরই নির্ভর করে।’
মহানগর বিএনপির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, ‘আমাদের অপেক্ষা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার জন্য। তিনি দেশে ফিরলে রাজনৈতিক যেটুকু অস্থিরতা রয়েছে তা শূন্যের কোঠায় চলে আসবে। নেতাকর্মী ও সমর্থকরা উজ্জীবিত হয়ে দলের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারবেন।’
খুলনা বিভাগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (ফাইল ফটো)
খুলনা বিভাগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (ফাইল ফটো)
‘দেশে আসা জরুরি’
লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদলের তৃণমূল পর্যায়ের একজন কর্মী মো. নোমান উদ্দিন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। সেই দলের প্রধান সেনাপতি বর্তমানে তারেক রহমান। দীর্ঘ ১৭ বছরের শোষণ বঞ্চনার পর সামনে যেই নির্বাচন, তা যুদ্ধের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। সেই যুদ্ধের আগে যদি প্রধান সেনাপতি মাঠে থেকে সৈন্যদের দিকনির্দেশনা না দেন, তাহলে যুদ্ধে জয়ী হওয়া কিছুটা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে।’
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা বিএনপির কর্মী সালাউদ্দিন আহমেদ। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘সামনে জাতীয় নির্বাচন। দেশের ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করবে এই নির্বাচন। কিন্তু এখনও আমাদের নেতা দেশে আসেনি। যার কারণে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কিছুটা বিভ্রান্তিতে আছেন। তাছাড়া দলের অভ্যন্তরেও বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজমান। খালেদা জিয়ার অবস্থাও সংকটাপন্ন। তার দেশে আসা খুব জরুরি।’
‘তিনি যদি দেশে এসে নেতাকর্মীদের আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্রিক দিকনির্দেশনা না দেন—তাহলে কিন্তু এই নির্বাচনে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা আছে। কারণ, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা সশরীরে বিভিন্ন জায়গায় উপস্থিত হয়ে নানান ধরনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের একটা আগ্রহর জায়গা— তারেক রহমান কেন দেশে আসেন না, কেন সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন না। এক্ষেত্রে আমরা যতই যুক্তি দেই না কেন, কোনোটাই বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায় না।’
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার ৩ নম্বর চরপোড়াগাছা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাস্টার আব্দুল কাদের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষের মতো আমাদেরও প্রত্যাশা—তারেক রহমান দেশে এসে সামনে থেকে দলের নেতৃত্ব দেবেন।’
‘তারেকের দেশে না আসাটাই পজেটিভ’ নাজমা আলমের কাছে
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি নাজমা আলম বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তফসিল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত তারেক রহমানের দেশে ফেরার দরকার নেই। তিনি অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাই দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তার প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়েছে। তাই এখন দেশে না আসাটাই আমি পজিটিভ ও মঙ্গলজনক বলে মনে করছি।’
যদিও পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি খাইরুল ইসলাম মনে করেন, এখন উপযুক্ত সময় এসেছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার। শত বাধা উপেক্ষা করে হলেও দেশে ফিরে আসা উচিত বলে আমি মনে করি।’
পবা উপজেলার নওহাটা পৌর যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক শাহিন আলী জানান, ‘তারেক রহমানই এখন আমাদের আন্দোলনের প্রতীক। তিনি দেশে না থাকলেও তার নির্দেশনায় দলের সবাই এক প্ল্যাটফর্মে থাকতে পারছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি অবশ্যই দেশে ফিরবেন। নিরাপদ রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত হলে তারেক রহমান দেশে ফিরে নেতৃত্ব দেবেন এবং সেটিই হবে দলের জন্য এক নতুন মোড়।’
রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন অবশ্য তারেক রহমানের মতোই বললেন, ‘দেশে ফেরার বিষয়টি তার একার সিদ্ধান্ত নয়—এতে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় জড়িত। এ বিষয়গুলো পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত দেশে ফিরে আসা তার ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।’
খুলনা ও সিলেটের সমর্থকেরা যা বলছেন
খুলনা ৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পি বলেন, ‘‘তারেক রহমান দেশে আসবেন। কিছু কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। সেগুলো সম্পন্ন করেই তিনি দেশে আসবেন।’’
খুলনা মহানগর বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিলটন বলেন, ‘‘তারেক রহমানের দেশে ফেরা কেবল তার ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিষয় নয়, দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক বাস্তবতাও বিবেচ্য এখানে।’’
পাইকগাছা পৌরসভা বিএনপির সভাপতি আসলাম পারভেজ বলেন, ‘‘শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা চান— তারেক রহমান দেশে আসবেন। তার জন্য আমরা অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি।’’
পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সমর্থক মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা চাই, তারেক রহমান দেশে আসবেন। তবে তিনি সময় সুযোগ বুঝেই আসবেন বলে শুনেছি।’’
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন । যে কারণে সব কিছু কুইট (ত্যাগ) করে তাকে দেশে আসতে কিছুটা সময় যাচ্ছে। তবে, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বিশ্বাস, নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু হবার পর তিনি দ্রুতই দেশে ফিরবেন। তার নেতৃত্বেই দল নির্বাচনে অংশ নেবে। এ নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনার কোনও সুযোগ নেই।’’
ওয়ার্ড বিএনপি নেতা তারা মিয়া বলেন, ‘দলের নেতা তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রতীক্ষায় রয়েছেন।’
সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এখনও সময় আছে। তিনি যেকোনও সময় দেশে আসতে পারেন।’’ দ্রুত দেশে ফিরে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন’ বলে তার আশা।
সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর তিনি দ্রুতই দেশে ফিরবেন। দলের নেতাকর্মীরা তাকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচন করবেন।’ বলে জানান তিনি।
কোম্পানীগঞ্জের পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘দলের নেতা তারেক রহমান সময়মতোই দেশে আসবেন।’ তফসিল ঘোষণার পর তার দেশে আসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানান তিনি।
ময়মনসিংহের ত্রিশাল রাধাকানাই ইউনিয়ন যুবদলের কর্মী রাহাত খান (২৫) জানান, বিএনপির চেয়ে অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরাই বেশি চিন্তিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন। এতে বুঝা যায় মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি। আমরা এ নিয়ে কোনও কিছুই ভাবছি না। সময় মতোই তিনি ফিরে আসবেন জানান।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের ওয়ার্ড ছাত্রদল কর্মী কামরুল হাসান (২০) জানান, আমরা জানি— জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন। তিনি লন্ডনে বসে সব দায়িত্ব পালন করতে পারছেন। তার নেতৃত্বে বিএনপি এখন যথেষ্ট শক্তিশালী। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রায় নিয়ে আগামী দিনে বিএনপি সরকার গঠন করবে এটা আমরা প্রত্যাশা করি।
ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ্ শিব্বির আহাম্মদ বুলু জানান, তার নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় এনে দেশে কখন আসবেন সেটা তিনিই ভাববেন। এ নিয়ে আমরা বিএনপির নেতাকর্মীরা খুব একটা চিন্তিত না।
জেলা বিএনপির কর্মী ও কেওয়াটখালি এলাকার বাসিন্দা নুরঢান মিয়া বলেন, ‘‘তারেক ‘জিহাদের’ দেশে সময় মতোই ফিরে আসবেন। তিনি লন্ডনে থাকলেও বিএনপির রাজনীতিতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না।’’
ময়মনসিংহ মহিলা দলের কর্মী শামসুন্নাহার (৪৫) মন্তব্য করেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরা না ফেরা নিয়ে আমরা বিএনপির কর্মীরা কখনই চিন্তিত না। আমাদের নেতা তারেক রহমান সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।
যশোরের মনিরামপুর রোহিতা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা তো আশা করি আমাদের নেতা সশরীরে আমাদের নেতৃত্ব দেবেন। তবে তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের ওপর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।’
‘আমি নিশ্চিত তিনি আসছেন’
রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নিশ্চিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসছেন। তার আগমন নির্বাচন উপলক্ষে তার দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাওয়ার কর্মসূচি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান দেশে ফিরে অবশ্যই জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাইদের বাসা রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে আসবেন কবর জেয়ারত করবেন, পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারেক রহমান দেশে তো আসবেনই এ ব্যাপারে সামান্যতম কোনও শঙ্কা নেই আমাদের মাঝে। তিনি সিলেট শাহজালাল (রা.) মাজার জিয়ারত করে নির্বাচনি শুরু করতে পারেন। এমনকি আবু সাইদের কবর জিয়ারত করেও করতে পারেন। তার সফর সূচি দেশব্যাপী নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করা একশ ভাগ নিশ্চিত।’
রংপুরের সদর উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি আফতাব উদ্দিন মনে করেন, তার (তারেক) দেশে ফেরা নিয়ে কোনও আশঙ্কা রয়েছে বলে আমরা তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা একবারও পোষণ করি না। তারেক রহমান দেশে আসবেন না— এটা আমরা বিশ্বাস করি না। শেষ পর্যন্ত তিনি আসবেন এবং তার নেতৃত্বেই বিএনপি নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসবে।’
রংপুর মহানগর মহিলা দলের সভাপতি রেবেকা সূলতানা ফেন্সি বলেন, তিনি একশ ভাগ নিশ্চিত তারেক রহমান নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার আগে অথবা পর-পরই দেশে আসবেন।
রংপুর জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল হোসেন নাজুর ভাষ্য— ‘তারেক রহমান অবশ্যই দেশে আসছেন। তিনি নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেবেন। তার নেতৃত্বেই আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি।’
তারেকের ফেরার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে বিএনপি
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য কথা বলেছেন বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে। নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পরপরই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন বলে জানান তারা। উল্লেখ করেন, দলের পক্ষ থেকে খুব দ্রুত আনুষ্ঠানিকভাবে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে ব্রিফ করবে বিএনপি। ইতোমধ্যে ফেরার প্রস্তুতি নিয়ে সর্বোচ্চ গতিতে কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে।
আগামীকাল বুধবার (১০ ডিসেম্বর) জাতির উদ্দেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য রেকর্ড হওয়ার কথা রয়েছে। তবে তা সম্প্রচার কবে হবে, তা নিয়ে কোনও নিশ্চিত তথ্য মেলেনি।
বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণা হলে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান।
# প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন বাংলা ট্রিবিউনের নিজস্ব প্রতিবেদক মহসীন কবির ও আতিক হাসান শুভ, খুলনা প্রতিনিধি হেদায়েৎ হোসেন, সিলেট প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম, যশোর প্রতিনিধি জাহিদ হাসান, রংপুর প্রতিনিধি লিয়াকত আলী বাদল, বরিশাল প্রতিনিধি সালেহ টিটু, ময়মনসিংহ আতাউর রহমান জুয়েল ও রাজশাহী প্রতিনিধি দুলাল আবদুল্লাহ।
