জাতীয় ডেস্ক :
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সরকারের কার্যকর পদক্ষেপে বর্তমানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ‘মিসইউজ ও অ্যাবিউজ অনেক কমেছে।
রাজধানীর বনানীতে ঢাকা আর্ট গ্যালারিতে শনিবার (২২ অক্টোবর) এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের উদ্যোগে ’ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিতর্ক’ বিষয়ক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
আনিসুল হক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাকস্বাধীনতা বা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করার জন্য হয়নি। এটি জনস্বার্থে করা হয়েছে। কেউ যদি মনে করেন, এ আইন সাংবাদিকদের টার্গেট করে করা হয়েছে, তা ঠিক নয়। সরকার এ আইনের মিসইউজ ও অ্যাবিউজ বন্ধ করার চেষ্টা করছে এবং করবে। এ আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রশাসন যাতে ‘ওভার রিঅ্যাক্ট’ না করে সেটাও দেখবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে এখন ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে, পেনাল কোডের ধারায় চুরি! এটি হতো আগে ফিজিক্যালি, এখন যেই মুহূর্তে চুরি ডিজিটালি হওয়া শুরু করল তখন এটাকে কি ফিজিক্যাল আইনে পেনাল কোডের ধারায় শাস্তিযোগ্য করা যাবে? পারবেন না। পেনাল কোডের অনেক ধারাতেই ডিজিটাল মাধ্যমে অবমাননার কথা নেই। যার জন্য এসব বিষয়কে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
বিভিন্ন দেশের আইন পর্যালোচনা করা হয়েছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘গুড প্র্যাক্টিসেস নিয়ে এখনও আলাপ করছি। একই সময়ে হয়তো বলবেন, আলোচনা করা হচ্ছে, কিন্তু আইনের তো অপব্যবহার হচ্ছে। আমি এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বসেছি। আমরা একমত হয়েছি যে, এ আইনে মামলা করার সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকদের আগেই গ্রেফতার করা হবে না। পাশাপাশি যে কেউ মামলা করুক না কেন, সেটাকে এই মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হবে না। যে অভিযোগগুলো আসছে সেগুলো ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের যে ধারাগুলো আছে সেগুলোর কমপ্লেইন কি না, নাকি হয়রানি করা হচ্ছে। এগুলো দেখার জন্য আইসিটি অ্যাক্টের একটি সেল আছে। সেই সেলটিকে কার্যকর করে এই অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের কোনো ধারার মধ্যে পড়ে কি না, সেটা দেখে তারপর যখন কোর্টে কিংবা থানায় পাঠানো হবে, তখনই এটা মামলা হিসেবে রুজু করা হবে। এই যে একটা ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছি আমরা। এখন আমি তো কোর্টকে বলে দিতে পারি না যেহেতু বিচার বিভাগ স্বাধীন। সাইবার ক্রাইমের যে ট্রাইব্যুনাল সেখানে প্রসিকিউশনে বলে দেয়া হয়েছে যে প্রথমেই যেন ওয়ারেন্ট দেয়া না হয়, সমন জারি করা হোক। যাতে তিনি (অভিযুক্ত) আদালতে আসেন, তার বক্তব্য বলেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘অজামিনযোগ্য মানে এই নয় যে, আসামি কোনোদিন জামিন পাবেন না। অজামিনযোগ্য অর্থ আসামিকে পুলিশ থানা থেকে ছাড়তে পারবে না। আদালত বিবেচনা করবেন তাকে জামিন দেবেন কি দেবেন না। আপনাদের এ আইনভীতি দূর করার জন্য কী কী করা দরকার, আমরা আপনাদের সঙ্গে বসে করব।’
আনিসুল হক বলেন, উপাত্ত সুরক্ষা আইন নিয়ে আরও আলোচনা হবে। এরপর সারা বিশ্বের উপাত্ত সুরক্ষার জন্য যে স্ট্যান্ডার্ড আইন আছে, সে রকম আইন করা হবে। তিনি নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, এ আইন কারো উপাত্ত নিয়ন্ত্রণের জন্য করা হবে না। এটা করা হবে শুধু উপাত্ত সুরক্ষার জন্য।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন এডিটর্স গিল্ডের যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক ইশতিয়াক রেজা, মানবাধিকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, কবি, সাংবাদিক ও কলামিস্ট সোহরাব হাসান, আর্টিকেল-১৯-এর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ফারুক ফয়সাল, বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা কামার আহমেদ সায়মন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু। সূত্র বাসস।