বাণিজ্য ডেস্ক:
চার দেশীয় (বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভূটান) স্থলবন্দর পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা। এ বন্দরটিতে নতুন বছরে ডলার সংকটে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ডলার সংকটে নতুন এলসি (ঋণপত্র) না পাওয়ায় কমেছে পাথর আমদানি। এদিকে পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা কমায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বন্দরের অনেক শ্রমিক।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, চলমান ডলার সংকটে নতুন এলসি না পাওয়ায় চাহিদা মতো পাথর আমদানি করতে পারছে না আমদানিকারকরা। গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরে আগের দেয়া এলসিতে পাথর আমদানি হচ্ছে। এদিকে আমদানি কম হওয়ায় ডলার সংকটকে দায়ী করলেন ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা।
আলম এন্টার প্রাইজের সিএন্ডএফ এজেন্ট আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত মাসে আমাদের আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও বর্তমানে জাতীয় নির্বাচনসহ ডলার সংকটে নতুন এলসি না হওয়ায় তা কিছুটা কমে এসেছে। ডলার সংকট কেটে নতুন করে এলসি দেয়া শুরু হলে আবারও আগের অবস্থায় আমদানি শুরু হবে।
একই কথা জানান সিএন্ডএফ এজেন্ট শাকিল আহম্মেদ। তিনি সময় সংবাদকে জানান, বর্তমানে ডলার সংকটে এলসির পরিমাণ কিছুটা কম। আমরা আশা করি নতুন বছরের সময় বৃদ্ধির সাথে আমদানি আবারো স্বাভাবিক হবে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী বলেন, ডলার সংকটের কারণে বিশ্ব যেখানে থমকে গেছে। বাংলাদেশও সেখানে গেছে। যার কিছুটা প্রভাব বাংলাবান্ধায় পড়েছে। এতে করে চার দেশীয় এ বন্দরে আমদানি-রফতানি অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে। আমরা আশা করছি সরকার এই ডলার সংকটের সমস্যা সমাধান দ্রুত করবেন।
তবে দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় এ স্থলবন্দরে আশানুরূপ পাথর আমদানি না হওয়ায় ১০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই সরকারের দৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।
বন্দরের লোড-আনলোড শ্রমিক আব্দুল হাই বলেন, বিদেশি ট্রাক বাংলাদেশে কম আসায় আমাদের আয় কমে গেছে। এতে নানান সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
শ্রমিক নেতা ইদ্রিস আলী বলেন, এই বন্দরে শ্রমিকের কাজ করে ১০ হাজার মানুষ সংসার চালান। তবে গাড়ি ঠিকমতো না আসায় সকলেই খুবই দুর্ভোগে পড়ছে। একদিন বন্দরে কাজ হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ গাড়ি না আসায় দুই দিনই কাজ পায় না তারা। তাই সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করে সকল সমস্যা নিরসন করে বন্দরটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানি গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা মিলন বলেন, আমরা এ বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এবং বিভাগীয় ভাবে আলোচনা করছি। দ্রুত যেই ডলার সংকট নিরসন করে নতুন করে এলসি দেয়া হয়। যদি নতুন করে এলসি দেয়া শুরু হয় তাহলে আবারও প্রাণ ফিরে পাবে বন্দরের পাশাপাশি পুরো জেলা।
বাংলাবান্ধা ল্যান্ড পোর্টের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই বন্দরটি দিয়ে মাঝেমধ্যে অন্যান্য মালামাল বা পণ্য আমদানি-রফতানি হলেও মূলত পাথরের জন্য বাংলাবান্ধা বিখ্যাত। সব থেকে বেশি বন্দরটি দিয়ে পাথর আমদানি হয়ে থাকে। তবে ডলার সংকটে কিছুটা কম গাড়ি আসছে।
জানা গেছে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাস এ বন্দর দিয়ে ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৬০৯ মেট্রিক টন পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি হয়েছে। আর বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ২৫ হাজার ৯৯০ ভিনদেশি ট্রাক।