জাতীয় ডেস্ক:
পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার গৃহবধূ হালিমা আক্তার মিম স্বামী ও শাশুড়িকে ফাঁসাতে নিজেই গায়ে আগুন ধরানোর নাটক সাজিয়েছিলেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি অনুযায়ী, এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন তার চাচাতো ভগ্নিপতি মো. আরিফ হোসেন।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলেন পুলিশ সুপার বলেন, আরিফের ভাষ্যমতে, শাশুড়ি পিয়ারা বেগমের সঙ্গে গৃহবধূ মিমের সম্পর্ক ভালো ছিল না। শাশুড়ি মিম ও তার সন্তানকে প্রায়ই নির্যাতন করতেন। অতিষ্ঠ হয়ে আগুন লাগানোর একটি নাটকের পরিকল্পনা করেন মিম। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে নিজের ফাঁদে নিজেই ধরা খেয়েছেন। ঘটনার দিন আরিফকে ফোন করে বাসায় আসতে বলে ‘গায়ে কেরোসিন ঢেলে’ নিজেই নিজেকে বাঁধেন, এসময় তাকে বাধা দিলেও আরিফের কথা শোনেননি। পরে বাধ্য হয়ে আরিফ আগুন লাগিয়ে দরজা বন্ধ করে সেখান থেকে চলে যায়। পরে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্তান জিসানকে প্রতিপালনের জন্য আরিফকে অনুরোধ জানান মিম।
পুলিশ সুপার আরও জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে সন্দেহ হলে আমরা আরিফকে টার্গেট করি, পরে তাকে ঢাকা থেকে আটক করি। ঢাকায় তার বাসা থেকে নিহত মিমের মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাবাসাবাদে আরিফ বলেন, ভিকটিম মিম তার স্বামী ও শাশুড়িকে ফাঁসাতে আমাকে ঢাকা থেকে আসতে বলে। আমি তাকে বার বার এ ঘটনা না করতে অনুরোধ জানাই। একপর্যায়ে তার মোবাইল ফোন ধরা বন্ধ করে দেই। কিন্তু সে অন্য মোবাইল ফোন দিয়ে আমাকে বলে নতুন বাসায় উঠেছে। একপর্যায়ে আমি ঢাকা থেকে দুমকি আসি। মিম বলে তুমি শুধু আগুন দিয়ে বাহির থেকে দরজার ছিটকানি বন্ধ করে চলে যাবা। চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন আমাকে উদ্ধার করবে। সেই অনুযায়ী মিমের শিশু সন্তান জিসানকে সামনের একটি বিছানায় শুয়ে দিয়ে আসি। মিম নিজের শরীরসহ ঘরে বিভিন্ন জায়গায় আগে থেকে আনা ২ লিটার কেরোসিন তেল ঢেলে দেয় এবং নিজের চোখ হাত পা নিজেই বাঁধেন।
তার কথা অনুযায়ী, মশারীর কোণায় আগুন দিয়ে সামনের দরজা বন্ধ করে চলে যাই। পরবর্তীতে মিমকে ঢাকায় নিলে আরিফ মিমের সঙ্গে দেখা করে। সে সময় মিম বলে আমার বাচ্চাকে শাশুড়ির কাছে না দিতে। তার মায়ের কাছে দিতে বলে।
পুলিশ সুপার বলেন, আসামিকে কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে এবং তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। তবে এ ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা সে বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার ৮ জুন বিকেলে দুমকি উপজেলার নতুন বাজার এলাকায় হালিমা আক্তার মিমের শরীরে আগুন দিয়ে ঘরের দরজা সামনে থেকে লাগিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এসময় মিমের পাশাপাশি অগ্নিদগ্ধ হয় তার শিশু সন্তান ওয়ালিফ হোসেন জিসান। আর্তচিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। গত শুক্রবার ৯ জুন মিমের মামা ওমর ফারুক বাদী হয়ে দুমকি থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে শুক্রবার সকালে মিমের শাশুড়ি পিয়ারা বেগমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মিম। ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার রাতে দুমকিতে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।