আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মিসরের শারম আল শেখে অনুষ্ঠিত বহুপাক্ষিক গাজা সম্মেলনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তে বাতিল করতে বাধ্য হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কারণ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান হুমকি দিয়ে ট্রাম্পকে বলেছিলেন, নেতানিয়াহুকে আমন্ত্রণ বহাল থাকলে তাকে বহনকারী বিমান শারম আল শেখে অবতরণ করবে না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
সূত্রের বরাতে খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে সোমবার সকালে ইসরায়েল থেকে নেতানিয়াহু সম্মেলনে যোগ দিতে সম্মতি জানান। এই সম্মেলনটি ট্রাম্প ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির যৌথ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু এরদোয়ানের আপত্তির পর পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নেয়। জানা গেছে, তুর্কি প্রেসিডেন্ট তার বিমানে বসেই মিসরের আকাশসীমা থেকে সিসিকে ফোন করে আপত্তি জানান। পরে নেতানিয়াহুর পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ বাতিলের ঘোষণা আসে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দফতর এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে আজকের সম্মেলনে যোগ দিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রণের জন্য কৃতজ্ঞতা জানালেও ধর্মীয় ছুটির কাছাকাছি সময়ের কারণে অংশ নিতে না পারার কথা জানিয়েছেন।
তবে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রীরা সতর্ক করেছিলেন, নেতানিয়াহু সম্মেলনে গেলে তারা পদত্যাগ করবেন। ফলে অভ্যন্তরীণ চাপও আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যানের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। যদিও মিসর ওই আদালতের সদস্য নয়, তবুও নেতানিয়াহুর উপস্থিতি আরব দেশগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারত। সম্মেলনে ২০টির বেশি দেশের নেতারা অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
নেতানিয়াহুর উপস্থিতি নিয়ে এই বিরোধ নতুন করে দেখিয়ে দিলো, ট্রাম্প যে উপায়ে মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন, তা কতটা জটিল ও সংবেদনশীল।
এরদোয়ানের জন্যও বিষয়টি ছিল রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর। নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনার ছবি কিংবা করমর্দনের দৃশ্য তুরস্কে তার জন্য মারাত্মক রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারত। একই সঙ্গে গাজায় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য গঠিত হতে যাওয়া আন্তর্জাতিক বাহিনীতে তুরস্কের অংশগ্রহণ নিয়েও প্রশ্ন উঠত।
এরদোয়ান বারবার ইসরায়েলের গাজা অভিযানকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাই নেতানিয়াহুর সঙ্গে একই মঞ্চে উপস্থিত হওয়া তার জন্য রাজনৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য ছিল।