হোম ফিচার গণঅধিকার পরিষদ: নুর ও রাশেদকে সাময়িক অব্যাহতি দিলেন কিবরিয়া

রাজনীতি ডেস্ক:

গণঅধিকার পরিষদের সদস্যসচিব পদ থেকে নুরুল হক নুরকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব করা হয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও অধিকার পরিষদের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা হাসান আল মামুনকে।

মঙ্গলবার (২০ জুন) রাতে রেজা কিবরিয়া নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গণঅধিকার পরিষদের গঠনতন্ত্র, ২১ দফা কর্মসূচী, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং মূলনীতিবিরোধী কাজ করা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধান, মানি লন্ডারিং আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠা, ইসরাইলসহ বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যোগাযোগ, অনৈতিক আর্থিক লেনদেন, গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে সভা আয়োজন ও অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনোনয়ন করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতাদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে গণঅধিকার পরিষদের সদস্যসচিব মো. নুরুল হককে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হলো।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করায় কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খাঁনকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হলো। উভয়কে দলের দফতর বরাবর আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়া হলো। একইসঙ্গে আমি ড. রেজা কিবরিয়া, আহ্বায়ক, গণঅধিকার পরিষদ সাংগঠনিক ক্ষমতাবলে পরবর্তী নির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সদস্যসচিব হিসেবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও অধিকার পরিষদের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা হাসান আল মামুনকে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব হিসেবে মনোনিত করছি।

রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের দ্বন্দ্বের কারণে ভাঙনের মুখে পড়েছে গণঅধিকার পরিষদ। এর আগে আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে দলের ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। সোমবার রাতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যায় দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়ার গুলশানের বাসায় শীর্ষ নেতাদের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দলীয় শৃঙ্খলা আনয়নের ক্ষেত্রে সদস্য সচিবের কাছে আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি এবং রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের কারণ জানতে চান রেজা কিবরিয়া। পরে এ নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখন রেজা কিবরিয়া সভা স্থগিত করেন।

পরদিন সোমবার দলের সদস্যসচিব নুরুল হক নুরের সভাপতিত্বে বিকেল থেকে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সভা বসে। রাত পর্যন্ত চলা সভায় যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খাঁনকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নির্বাচিত করা হয়।

ফেসবুকে দুই নেতার পাল্টাপাল্টি পোস্ট
রোববার সভা শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সাংগঠনিক এক বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করেন রেজা কিবরিয়া। তাতে উল্লেখ করা হয়, ‌‘সভায় দলীয় শৃঙ্খলা আনয়নের ক্ষেত্রে সদস্য সচিবকে আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের কারণ ব্যাখ্যা চেয়ে আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার মতামত দিলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি উদ্ভব হয়। বয়োজেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ এমন পরিস্থিতিতে চরম অস্বস্থিতে পড়েন। এমতাবস্থায় সভার সভাপতি সভা স্থগিত করে সভাস্থল ত্যাগ করেন।’

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘সভায় প্রবাসী অধিকার পরিষদের কমিটি পুনর্গঠন, এরমধ্যে সংগৃহীত অর্থের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং সুষ্ঠু হিসাব ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা, দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে হুমকি এমন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও ইসরাইলের বিতর্কিত মোসাদ সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে গোপন বৈঠক, দলীয় নেতৃবৃন্দদের নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে অসত্য সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে সদস্য সচিব ভিপি নুরুল হক নুরকে দায়ী করা হয়।’

তবে নুরুল হক নুর অপর এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট পরিচয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় মাসুদ করিম/এনায়েত করিমের বিএনপি ভাঙা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উকিল আব্দুস সাত্তার মডেলে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কথিত সরকারবিরোধী প্রোগ্রামের নামে রেজা কিবরিয়ার ব্যাংকক, কাঠমান্ডুতে একাধিকবার মিটিংয়ে অংশ নেয়া এবং দেশে এসে মনোনয়ন বিক্রি ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শওকত মাহমুদের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ এবং সবশেষ ইনসাফের প্রোগ্রামে অংশ নেয়ার বিষয়ে গতকাল রেজা কিবরিয়ার বাসায় জরুরি মিটিংয়ে জবাবদিহি চাওয়া হয়। তবে তিনি সদুত্তর না দিয়ে নেতৃবৃন্দের প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে বাসার ছাদের মিটিং স্থান ত্যাগ করে বাসায় ঢুকে আর মিটিংয়ে আসেননি।’

নুর আরও বলেন, ‘যে কারণে আমরা তার উপস্থিতিতে আর মিটিং করতে পারিনি। তাই উপস্থিত সদস্যদের মতামতে আমরা বাকি আলোচনা সম্পন্ন করে আজকে (সোমবার) পূর্ব নির্ধারিত মিটিংয়ে অসমাপ্ত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে সবাই একমত হই।’

নিজের অপকর্ম ঢাকতে রেজা কিবরিয়া মিথ্যাচার করছেন উল্লেখ করে নুর আরও বলেন, ‘রেজা কিবরিয়া কতটুকু অযোগ্য, সেটা তার কাজকর্মে এরইমধ্যে আপনারা পর্যবেক্ষণ করেছেন। গণ অধিকার পরিষদের মতো একটা সম্ভাবনাময় দলের আহ্বায়ক হয়েও তিনি ওইভাবে দলের মিটিং-মিছিল, কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন না। বরং টাকার লোভে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার ফাঁদে পড়ে তিনি বিএনপি ভেঙে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দুঃস্বপ্নে বিভোর।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন