জাতীয় ডেস্ক :
খাগড়াছড়িতে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ছয়টি হোস্টেল ভবন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ধসে পড়ার আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছেন এর আশপাশের বাসিন্দারা।
খাগড়াছড়ির দুর্গম এলাকার পিছিয়ে পড়া প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে সরকার ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ছয়টি আবাসিক হোস্টেল নির্মাণ করে। এর মধ্যে তিনটি কোনো রকম চালু হলেও বাকি তিনটি এখনও তালাবদ্ধ। এর মধ্যে পানছড়ি সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের পেছনের দেয়ালটি এরই মধ্যে ধসে পড়েছে। সামান্য হেলে পড়েছে মূল ভবনও। যেকোনো মুহূর্তে ভবনটিও ধসে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি স্থানীয়দের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া পাহাড়ি ছাত্রছাত্রীদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাসের লক্ষ্যে সরকার উপজেলা সদরে একটি করে তিনতলাবিশিষ্ট আবাসিক হোস্টেল নির্মাণ করে। প্রতিটি হোস্টেল নির্মাণে খরচ হয় ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এসব আবাসিক হোস্টেলে ৫০ জন ছাত্র ও ৫০ জন ছাত্রী থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে।
কিন্তু জনবল নিয়োগসহ পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় হোস্টেলগুলোতে আজও ছাত্রছাত্রী থাকার পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। প্রায় এক যুগ ধরে এসব আবাসিক হোস্টেল তালাবদ্ধ থাকায় এর আসবাবপত্র যেমন নষ্ট হয়ে গেছে, তেমনি ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কয়েক দিন আগে পানছড়ি উপজেলা সদরে পানছড়ি বাজার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আবাসিক হোস্টেল ভবনের পেছনের অংশ ধসে পড়ে, পাশাপাশি ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে।
ভবনের পেছনে বসবাসকারীরা জানান, কোনো ব্যবস্থা নেয়া না হলে যেকোনো সময় দেয়াল ও ভবন ধসে পড়ে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটতে পারে। তাই দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি স্থানীয়দের। একই অবস্থা দুর্গম লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার ছাত্রাবাসটিও।
দিঘীনালা আবাসিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গুইমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় চালু করা হয়েছে। বাকি হোস্টেলগুলো বন্ধ থাকায় সীমান্তবর্তী ও দুর্গম উপজেলা মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি ও পানছড়ির পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী বিদ্যালয়ের আশপাশে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছে। আর যাদের সামর্থ্য নেই তাদের অনেকেরই বাধ্য হয়ে লেখাপড়া বন্ধ করতে হচ্ছে। ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা হোস্টেলগুলো চালুর দাবি জানিয়েছেন।
পানছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপাশা সরকার জানান, বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের দেয়াল এরই মধ্যে ভেঙে পড়েছে, ভবনটিও আছে ঝুঁকিতে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াছমিন বলেন, ২০১০-১১ সালে নির্মিত ছাত্রাবাসটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, গার্ড ওয়ালের কিছু অংশ এরই মধ্যে ধসে পড়েছে। তিনি লিখিতভাবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে জানিয়েছেন। তিনি আশা করছেন, ছাত্রাবাসগুলো চালুর বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত পেয়ে যাবেন।