স্টাফ রিপোর্টার, কেশবপুর (যশোর) :
যশোরের কেশবপুরে হঠাৎ করেই মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের বিস্তার বেড়েছে। লকডাউনের মধ্যে কেশবপুর শহর কেন্দ্রীক এলাকাসহ ১১টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামেও এর ভয়াবহতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। উঠতি বয়সী যুবক ও শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছে মাদকের সঙ্গে।
এর মধ্যে উপজেলার মঙ্গলকোট এলাকায় প্রতিনিয়ত স্থানীয় ও বহিরাগত যুবকেরা এসে মাদক ব্যবসাসহ সেবন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ঘিরে মাদকের আড্ডা জমে উঠেছে। বিভিন্ন সময়ে কেশবপুর থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে মাদক উদ্ধারসহ জড়িতদের গ্রেফতার করলেও থামছে না মাদকের ছোবল।
শুধু জুলাই মাসেই কেশবপুরের বিভিন্ন মাদক বিক্রির সম্ভাব্য জায়গাগুলোতে হানা দিয়ে থানা পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা মাদকদ্রব্যসহ ৮ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, মদ ও চাষকৃত গাঁজা গাছ। পুলিশ বলছে, কেশবপুরে মাদকের সঙ্গে যুক্ত হলে কোন ব্যক্তিই ছাড় পাবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ জুলাই যশোর গোয়েন্দা পুলিশ উপজেলার মঙ্গলকোট বাজার থেকে রামকৃষ্ণপুর এলাকার সবুজ হোসেন (২১) ও রাকিবুল ইসলাম হৃদয়কে (২১) ৪০ পিচ ইয়াবা এবং মঙ্গলকোট গ্রাম থেকে আব্দুল লতিফের ছেলে ওমর ফারুক রাব্বিকে (২৫) ৩ বোতল বিদেশী মদ ও ৫ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার করে।
কেশবপুর থানা পুলিশ গত ২৬ জুলাই উপজেলার গৌরিঘোনা ইউনিয়নের বুড়–লি গ্রামের আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের ছেলে কামরুজ্জামানের (৩০) মুরগির খামার থেকে ৩টি গাঁজাসহ উদ্ধারসহ তাকে গ্রেফতার করে। গত ১৪ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশ উপজেলার চিংড়া বাজারের কপোতাক্ষ ঘাট থেকে বিষ্ণুপুর গ্রামের রেজাউল ইসলামের ছেলে মিলন হোসেনকে (৩০) ২০ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার করে।
কেশবপুর থানা পুলিশ গত ৫ জুলাই উপজেলার টিটাবাজিতপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে তেঘরী গ্রামের হাসিয়ার রহমানের ছেলে রবিউল ইসলামকে (৩৩) গ্রেফতার করে।
অপরদিকে র্যাব-৬ যশোরের একটি টিম গত ৪ জুলাই উপজেলার মির্জানগর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ১৩০ পিচ ইয়াবাসহ পাশ্ববর্তী কলারোয়ার দেয়াড়া গ্রামের বদিউর রহমানকে (৫৪) গ্রেফতার করে। গত ২ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশ উপজেলার আলতাপোল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১ কেজি গাঁজাসহ একই গ্রামের গোষ্ঠ গোপাল রায়ের ছেলে জগন্নাথ রায়কে (৩৪) গ্রেফতার করে।
এছাড়া যশোর গোয়েন্দা পুলিশ গত ১১ জুন মঙ্গলকোট বাজার থেকে ৫০ পিচ ইয়াবাসহ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা এলাকার ইসমাইল খাঁর ছেলে আলমগীর হোসেনকে গ্রেফতার করে। এ সময় মঙ্গলকোট এলাকার মধ্যপাড়ার আমজাদ হোসেন বিশ্বাসের ছেলে কামরুজ্জামান মিন্টু দৌড়ে পালিয়ে যায়।
একইদিন কেশবপুর থানা পুলিশ উপজেলার দেউলি মোড় এলাকা থেকে বাগদহা গ্রামের জজ আলী মোড়লের ছেলে সাইফুল কবীর মিহিনকে ৭ পিচ ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে।
কেশবপুর পৌর শহরের রাসেল হোসেন বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার মধ্যকুল এলাকায় এক মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীর মধ্যে হাতাহাতির ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি এলাকায় মাদকদ্রব্য বিকিকিনি বৃদ্ধি পাওয়ায় সচেতন মহল বিষ্ময় প্রকাশ করেছে।
উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের শরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মঙ্গলকোট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিছনে বটগাছ তলায়, বসুন্তিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ও রামকৃষ্ণপুর এলাকার দিকে মাদক বিক্রেতা এবং সেবনকারীদের আনাগোনা দেখা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, কেশবপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের শীতলাতলা মোড় ও ৬ নম্বর কেশবপুর সদর ইউনিয়নের মূলগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিছনের বাগানে সন্ধ্যার পর স্থানীয় এবং বহিরাগতদের নিয়ে গাঁজা সেবনের আড্ডা জমে ওঠে।
উপজেলা নাগরিক সমাজের আহব্বায়ক অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক বলেন, এখনই যদি এদের রুখে দেওয়া না যায়, তাহলে যুবক ও শিক্ষার্থীরা ধ্বংস হয়ে যাবে। কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করেছেন। তিনি আরও বলেন, পৌর শহরসহ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ব্যাপক হারে মাদক ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বোরহান উদ্দীন বলেন, কেশবপুরে মাদকদ্রব্য বিক্রি ও সেবনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কেউ মাদকের সাথে কোন আপোষ নেই।
