নিজস্ব প্রতিনিধি :
কালিগঞ্জ থানা পুলিশের জব্দকৃত ৮১৭ বস্তা কাবিখার গম সাইক্লোন আম্পানে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত আশাশুনি ও শ্যামনগরের ৬ টি দুর্গত ইউনিয়নে বিতরণের আদেশ দিয়েছেন সাতক্ষীরার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত। ৭ জুন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান এই আদেশ প্রদান করেন।
আদালতের আদেশে জব্দকৃত ৪৭ হাজার ৮৫০ কেজি গমের ৫ কেজি নমুনা সরূপ আলামত হিসেবে রেখে সমুদয় গম আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ও প্রতাপনগর এবং শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালীনি এবং কৈখালী এই ৬টি ইউনিয়নের জনগণের মাঝে বিলিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ আদেশকে অনুকরণীয় উল্লেখ করে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার) তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ডেইলি সাতক্ষীরাকে বলেন, সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক এই গম ৬টি ইউনিয়নের দুর্গতদের মাঝে সমানভাবে বন্টন করবে। …………এ বিষয়ে বিস্তারিত সংবাদ আসছে।
উল্লেখ্য, সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে পাচার করা কাবিখা প্রকল্পের ৮১৭ বস্তা গম কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের সুলতানপুরের মেসার্স মনি মুক্তা রাইস মিলের গুদাম থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় ছয়জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মেসার্স মনিমুক্তা রাইস মিলের মালিক আব্দুল গফ্ফারের ছেলে মনিরুল ইসলাম মনি, মিলের ম্যানেজার দেবহাটার আশকারপুর গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে মুজাহিদুল ইসলাম মুকুল ও শ্যামনগর উপজেলার কৈখালি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য পবিত্র মণ্ডল।
শ্যামনগর থেকে সরকারি গম পাচার করে কালিগঞ্জের একটি রাইস মিলে রাখা হয়েছে, এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলামের নেতৃত্বে কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হুসাইনসহ সঙ্গীয় ফোর্স ২৭ মে বিকেলে উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের সুলতানপুর কলোনির মনিমুক্ত রাইস মিলের গোডাউনে অভিযান চালায়। এসময় সেখান থেকে সরকারি বস্তা ভর্তি ৮১৭ বস্তা গম জব্দ করে পুলিশ। এর বাজার মূল্য প্রায় ১৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। বিপুল পরিমাণ এই গম উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার সকালে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় খুলনার পরিদর্শক নীল কমল পাল কালিগঞ্জ থানায় আসেন।
তিনি সার্বিক বিষয়ে তদারকির পর গ্রেফতার তিনজনসহ ছয়জনের নামোল্লেখ করে এবং কয়েকজনকে অজ্ঞাতপরিচয় দেখিয়ে দঃ বিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৮/৪৭১/ ৪৭৭(ক)/১০৯ তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় একটি মামলা রুজু করেন। মামলা নং-১১ তারিখ ২৮.০৫.২০।
মামলাটি তিনি নিজেই তদন্তভার গ্রহণ পূর্বক পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, গম উদ্ধারের পরপরই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে মিল মালিকের ছেলে মনিরুজ্জামান মনি, মিলের ম্যানেজার মুকুলকে বুধবার রাতেই আটক করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্য এবং ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় বৃহস্পতিবার সকালে শ্যামনগরের কৈখালি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য পবিত্র কুমার মণ্ডলকে তার নিজ বাড়ি পরানপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়।
জানা গেছে, শ্যামনগর উপজেলার কৈখালি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ও রাস্তা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ হওয়া বিপুল পরিমান এই গমের কাজ না করেই তা সংস্কার দেখিয়ে গম উত্তোলন করে বিক্রি করা হয় কালো বাজারে। এরপর ওই গম শ্যামনগর থেকে কালিগঞ্জের মনি মুক্ত রাইস মিলের গোডাউন ঘরে মজুদ রাখে।
অভিযোগ রয়েছে, জনপ্রতিনিধির ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী মোহাম্মাদ আলীর কাছ থেকে কালিগঞ্জের আরেক ব্যবসায়ী আব্দুল গফফার ৫০টন গম ক্রয় করেন।
তিনি জানান, আমি শ্যামনগরের মোহাম্মাদ আলীর কাছ থেকে ৪৯ টন ২শ কেজি বিভিন্ন ডিও লেটারের গম ক্রয় করেছি।
এদিকে, দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় খুলনার পরিদর্শক নীল কমল পাল জানান, সরকারি গম কাজ না করেই আত্মসাত করার ঘটনার সামনে পেছনে যারাই আছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।