হোম অন্যান্যসারাদেশ কাউখালীর মানবতার ফেরীওয়ালা খসরুর পথ চলা

কাউখালীর মানবতার ফেরীওয়ালা খসরুর পথ চলা

কর্তৃক
০ মন্তব্য 111 ভিউজ

পিরোজপুর অফিস :

আজ থেকে ২০ বছর আগে মানুষের সেবা করার ব্রত নিয়ে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার আব্দুল লতিফ খসরু অভাব, অনটন, অসহায় আর অসুস্থদের পাশে দাড়ান। এখন তার সেবা করা নেশা হয়ে দাড়িয়েছে। তিনি উপজেলার কেউন্দিয়া গ্রামের আব্দুল আউয়াল তালুকদারের পুত্র।
মানুষের সেবা করার জন্য তিনি কি শীত, বৃষ্টি, রৌদ্র, এমনকি ঝড়-বন্যা কোন কিছুতেই তার পথ চলা থেমে নেই। শুধুই ছুটে চলা দিন-রাত। তার উদ্দেশ্য একটাই অসহায়, দুঃস্থ, অসুস্থ্যদের জন্য কিছু একটা করা। উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ান আব্দুল লতিফ খসরু। দিন রাত পুরোটা সময়ই কাটে তার মানুষের সেবা করে। তিনি উপজেলার যেকোন এলাকার মানুষের অভাব অনটন বা অসুস্থ্যের সংবাদ পেলে নিজের সাধ্যমত সহযোগীতা নিয়ে তাদের পাশে দাড়ান। তবে এখন তার এ কাজে সহযোগীতা করার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন অনেকেই। আর যে যখন যা সাহায্য দিচ্ছেন, তাই নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন অসহায়দের কাছে। তিনি অসহায়দের কখনো খাবার, কখনো বা কাপড় নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ান।
তিনি শুধু অসহায়দের অন্য বস্ত্র দিয়েই সহযোগীতা করছেন তা নয়। তিনি এই সব অসহায় পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য শিক্ষা উপকরণ হিসাবে বই, খাতা, কাগজ, কলম কিনে দিচ্ছেন। শুধু তাই নয় নিজেই শিক্ষক হিসেবে এসব শিশু শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। কখনো নদীর পাড়ে, বাড়ির উঠানে কখনো বা নৌকায় করে নদীতে ভাসমান পাঠশালার মাধ্যমে তাদের লেখা পড়া করান।
উপজেলার অনেক অসহায় পরিবারের সন্তানরা তার সহযোগীতায় লেখাপড়া করে এস,এস,সিতে জিপিএ ৫ পেয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছে। এদের মধ্যে আলামীন, জান্নাতী মাওয়া মীম, মঞ্জিলারাও রয়েছে।
শিক্ষার্থী মঞ্জিলা বলেন, আমার বাবা একজন জেলে। তিনি যা আয় করেন তা দিয়ে আমাদের ভরণ পোষণই চলছিল না। এ কারনে আমার লেখাপড়ার খরচ আমার পরিবারের পক্ষে চালানোর সম্ভব ছিল না। আমার লেখা পড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, ঠিক এমনি সময় খসরু কাকা আমার লেখা পড়ার জন্য সহযোগীতা নিয়ে এগিয়ে আসেন। আমি তার এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষকগনের সহযোগীতা ও উৎসাহের জন্যই এস, এস, সিতে জিপিএ ৫ পেয়েছি। তিনি আমার উচ্চ শিক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের মাধ্যমে লেখাপড়ার খরচ চালানোর ব্যবস্থা করে দেন।
আব্দুল লতিফ খসরু প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার জন্য তৈরি করেছেন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়।
তিনি কোন মানুষের শরীর অসুস্থতার খবর পেলে ছুটে যান তার বাড়িতে। তার সাধ্যমত চেষ্টা করেন তাকে চিকিৎসা করানোর জন্য। উপজেলার দাশেরকাঠী গ্রামের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া ও আমরাজুড়ী আবাসনের সোহাগ কিডনী রোগে ভুগছিলেন। এদের বিষয় খসরু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পোষ্ট দিয়ে সকলের মাঝে তুলে ধরেন। ফেইসবুকে তার এই পোষ্ট দেখে অসুস্থ্য সুমাইয়ার চিকিৎসার জন্য অনেকের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন। সেই সহযোগীতা নিয়ে চিকিৎসা করে সুমাইয়া এখন সুস্থ্য জীবন যাপন করছে। তেমনি অসুস্থ্য সোহাগের কথা লিখে ফেইসবুকে পোষ্ট দেন। সেই পোষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ খালেদা খাতুন রেখা দেখে নিজেই সকলের কাছে তার চিকিৎসার জন্য সহযোগীতা কামনা করেন। তিনি আবাসনে গিয়ে অসুস্থ্য সোহাগকে নিয়ে এসে চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন এবং তার পরিবারের এক মাসের খাদ্য সামগ্রী প্রদান করেন।
সারা বিশ্বের ন্যায় বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসে দেশের মানুষ আক্রান্ত হলে সরকার সকলকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার নির্দেশ দেন। সরকারের এই নির্দেশনা সাধারণ মানুষের মাঝে প্রচারের জন্য খসরু হ্যান্ড মাইক ও লিফলেট নিয়ে সচেতনতার জন্য প্রচারণা চালান। এর কিছুদিন পরে সরকার করোনা ভাইরাসের কারনে সকলকে ঘরে থাকার জন্য নির্দেশনা দিলে অসহায় দিন মজুররা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকে। তিনি এই সব পরিবারকে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন ব্যক্তিদের সহযোগীতায় খাদ্য সামগ্রী তাদের বাড়িতে পৌছে দেন। শিশুদের জন্য খেলনা সহ শিশু খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন।
করোনার মধ্যেই দেশে ঘূর্ণিঝড় আমফান আঘাত হানেবে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্ব আভাস দেয় এবং পিরোজপুরে ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত জারি করে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বআভাস অনুযায়ী ওই দিন সকাল থেকে কাউখালীতে শুরু হয় দমকা বাতাস ও বৃষ্টি। এই সময় খসরু নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রতিকুল আবহাওয়ার মধ্যে হ্যান্ড মাইক নিয়ে সকলকে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য প্রচারনা চালান এবং ঝড়ের পরে রাস্তা ঘাটের উপরে পরে থাকা গাছ পালা উপজেলা প্রশাসনের সাথে থেকে অপসারণে সহোযোগীতা করেন।
খসরু শুধু অসহায়, দুঃস্থদেরই সহযোগীতা করছেন তা নয়। তিনি ভবঘুরে ও মানুষিক ভারষম্যহীনদের নিজ হাতে গোসল করিয়ে তাদেরকে নতুন পোষক পড়িয়ে খাবার খাইয়ে দেন। এরপরে তাদেরকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তিনি শহরের তার পৈতৃক বাড়িতে গড়ে তুলেছেন তথ্যশালা ও পাঠাগার। তিনি সমাজ থেকে মাদক নির্মূল ও বাল্য বিয়ে বন্ধের জন্য বাই সাইকেলে করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের এর কুফল সম্পর্কে অবহিত করেন এবং তাদেরকে মাদক ও বাল্য বিবাহ থেকে বিরত থাকার জন্য শপথ বাক্য পাঠ করান।
এব্যপারে আব্দুল লতিফ খসরু বলেন, অসহায় ও দুঃস্থদের জন্য কিছু করতে পারাটাই আমার আনন্দ। এসব কাজ করতে না পারলে দিনটি আমার কোন ভাবেই ভাল কাটে না। সেজন্যই দিনের বেশী সময় কাটে অসহায় ও দুঃস্থদের সেবা করে। সকাল হলেই শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াই তাদের খোজ খবর নেওয়ার জন্য। আমি এই অসহায় ও দুঃস্থদের মাঝে জীবনের বাকী সময় যেন কাটিয়ে দিতে পারি, এটাই আমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আমার এই সব কাজে এখন সমাজের অনেকেই সহযোগীতা করছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন