হোম অন্যান্যস্বাস্থ্য এডিস মশা প্রতিরোধে সারাবছরই কার্যক্রম চালাতে হবে

স্বাস্থ্য ডেস্ক:

ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গু মোকাবিলায় সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ও কীটতত্ত্ববিদ ও অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার।

তিনি বলেছেন, এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু এখন আর মৌসুমি রোগ নয়। এটি এখন সারাবছরই থাকবে এবং সারা বছরই এডিস মশা নিধন বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে কার্যক্রম চালাতে হবে।

আর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। অন্তত সবাইকে দেখতে হবে; তাদের নিজের বাড়ির ছাদে পানি জমলো কিনা। বাড়ির পাশে পরিষ্কার আছে কিনা। নিজে বাঁচতে হলে এটি সবার নিজ দায়িত্বে করতে হবে। কারণ সবাই যদি নিজের জীবন রক্ষা করতে সচেষ্ট হই, তাহলে অন্যের জীবনটা রক্ষা করতে পারব।

সম্প্রতি সাংবাদিকদের দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন এই বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকাসহ দেশজুড়ে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে নতুন করে এডিসের বংশ বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলেও এখনও কাঙ্ক্ষিত সচেতনতার ছিটেফোঁটাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না মানুষের মধ্যে। বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, উন্মুক্ত স্থান, পার্কসহ বিভিন্ন স্থাপনায় খোঁজ মিলছে এডিসের লার্ভার। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন ও জনগণের যৌথ উদ্যোগ ও সচেতনতার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

পরিষ্কার আকাশ হঠাৎ করেই মেঘে পরিপূর্ণ হয়ে যায় এ বর্ষাতে। সেই মেঘ কখনও হালকা আবার কখনও ঝুম বৃষ্টিতে রূপ নিচ্ছ। তবে মেঘ গলে নেমে আসা এ বৃষ্টি শুধু শান্তি নয়, ভয়েরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সেই ভয় বৃষ্টিতে জমে থাকা পানির। যেখানে জন্ম নিচ্ছে এডিসের লার্ভা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন পান্থকুঞ্জ পার্ক। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত পাকর্টির যেখানে সেখানে জমে থাকা ময়লা আবর্জনার সঙ্গে পড়ে থাকা এক একটি পাত্র যেন মশার উর্বর প্রজণনক্ষেত্রের দেখা মিলেছে। ড্রেনে জমে থাকা পানি, রিকশার টায়ার, ডাবের খোসাতেও কিলবিল করছে এডিসের লার্ভা। এতো গেল উন্মুক্ত স্থানের চিত্র। মানুষের বাসাবাড়ির অবস্থাও যে ভালো সেটিও বলার সুযোগ নেই। সচেতন না হওয়ায় কারও কারও বাড়িতে চোখের সামনেই বংশবৃদ্ধি করছে এডিস। নির্মাণাধীন বাড়ির বেজমেন্টসহ, ফুলের টব, ফেলে রাখা হাঁড়ি পাতিল এমন কী এক প্রস্থ পলিথিনে জমে থাকা পানিতেও মিলছে লার্ভা।

চলতি বছর প্রায় ৯ হাজার মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে ডেঙ্গু ভাইরাস। তবে সব থেকে আতঙ্কের খবর অর্ধশতাধিক আক্রান্তের মৃত্যু।

আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে এডিসের প্রাদুর্ভাব আরও বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদ ও অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ। তারা মূলত সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

এদিকে সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ নিয়ে সারা দেশে ডেঙ্গুতে মোট ৫২ জনের মৃত্যু হলো।
সোমবার (৩ জুলাই) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৪৩৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ১৭৪ জন ঢাকার এবং বাকি ২৬২ জন ঢাকার বাইরের। সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ১৫৩১ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ঢাকার ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ১০২২ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫০৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৯১৯৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬৬৫৫ জন। আর ঢাকার বাইরে ২৫৩৮ জন।

এদিকে ভর্তি রোগীদের মধ্যে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৭৬০৬ জন। এরমধ্যে ঢাকায় ৫৫৮৯ জন এবং ঢাকার বাইরে ২০১৭ জন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন