হোম আন্তর্জাতিক ইউক্রে‌ন অভিযানের প্রথম ধাপ শেষ: রাশিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানের প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার (২৫ মার্চ) বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য নিশ্চিত করেন দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সামরিক বাহিনীর জেনারেল স্টাফ’স মেইন অপারেশনস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান সের্গেই রুডস্কয়।

বিবিসিকে রুডস্কয় বলেন, ‘ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর বিশেষ সামরিক অভিযানের প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধ করার মতো সক্ষমতাও ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে আমরা এখন আমাদের মূল লক্ষ্যে মনযোগ দিচ্ছি। আর সেটি হলো— দনবাস রিপাবলিককে স্বাধীন করা।’

কিন্তু রুশ বাহিনী রাজধানী কিয়েভ ও তার আশপাশের এলাকাগুলোতে কেন হামলা চালাচ্ছে— বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে রুডস্কয় বলেন, দনবাস থেকে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর মনযোগ অন্যদিকে সরানোর কৌশল হিসেবে কিয়েভ ও তার আশপাশের এলাকায় বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছে।

রুডস্কয়ের ভাষায়, ‘তবে আমরা মূলত সামরিক স্থাপনাগুলোতেই মনযোগ দিচ্ছি। বেসামরিক স্থাপনাগুলো এড়িয়ে চলতে সেনা সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

বিবিসিকে সাক্ষাতকারের মধ্যদিয়ে এই প্রথম রাশিয়ার কোনো কর্মকর্তা সুনির্দিষ্টভাবে ইউক্রেন অভিযানের কারণ ব্যাখ্যা করলেন। এর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অবশ্য বেশ কয়েকবার বলেছেন, ইউক্রেনে অভিযান চালানোর লক্ষ্য দেশটিকে ‘নাৎসিবাদীদের’ কবল থেকে মুক্ত করা।

পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে বেশ কয়েক বছর ধরেই টানাপোড়েন চলছিল দুই প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। মূলত এই টানাপোড়েনের সূত্রপাত ২০০৮ সালে।

ওই বছরই ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করে ইউক্রেন। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করার পর আরও বাড়ে এই দ্বন্দ্ব।

ন্যাটোর সদস্যপদের আবেদন প্রত্যাহারে ইউক্রেনকে চাপে রাখতে গত নভেম্বর মাস থেকে প্রায় তিন মাস ইউক্রেন সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করে মস্কো। কিন্তু এই কৌশল কোনো কাজে আসেনি। উপরন্তু এই তিন মাসে প্রায় প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অভিযোগ করে গেছে, যে কোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী।

অবশেষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। এবং এর দু’দিন পর ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

দোনেস্ক ও লুহানস্ককে একত্রে দনবাস রিপাবলিক বলে অভিহিত করা হয়। এই দুই অঞ্চলেই ব্যাপকভাবে সক্রিয় রুশপন্থী স্বাধীনতাকামীরা। রুশ অভিযান শুরুর আগে থেকেই দুই অঞ্চলের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

বিবিসিকে রুডস্কয় জানান, রুশ অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত লুহানস্কের ৯৩ শতাংশ ও দোনেস্কের ৫৪ শতাংশ এলাকা স্বাধীনতাকামীদের দখলে চলে এসেছে। এছাড়া অভিযানে এ পর্যন্ত ‍মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৩৫১ জন ও আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৮২৫ জন রুশ সেনা।

এই সংখ্যা অবশ্য ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের দাবির চেয়ে অনেক কম। তাদের দাবি— অভিযানে এ পর্যন্ত ১৫ হাজারেরও বেশি ‍রুশ সেনা নিহত হয়েছেন।

 

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন