হোম অন্যান্যসারাদেশ ইউএনও খালিদ ডিসিকে চিঠি দিলেও দেবহাটা থেকে সরানো হয়নি উদ্দাপকে

দেবহাটা প্রতিনিধি:

দেবহাটা উপজেলা ভূমি (এসিল্যান্ড) অফিসের আলোচিত ও বেপরোয়া নিরাপত্তা প্রহরী উদ্দাপ কুমার পালের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সুপারিশসহ নতুন নিরাপত্তা প্রহরী পদায়ন দেয়ার জন্য দু’বছর আগেই সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দিয়েছিলেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী।

২০২১ সালের ২৫ জুলাই ইউএনও খালিদ হোসেন সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত ০৫.৪৪.৮৭২৫.০০১.১০.০২১.২২-৬৬৩ (যুক্ত) স্মারকের পত্রটি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়। এমনকি পত্রের সাথে ইউএনও’র নাম ভাঙিয়ে বিতর্কিত নিরাপত্তা প্রহরীর ঘুষ গ্রহণের অডিও ও ভিডিও ক্লিপ সংযুক্ত করে জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছিলেন খালিদ হোসেন সিদ্দিকী।

নওয়াপাড়া ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা নাজমুল হাসান চৌধুরীর থেকে ইউএনও কে ম্যানেজ করার নাম করে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ এবং দিবাকালীন সময়ে অফিসে উপস্থিত থেকে নিরাপত্তা প্রহরী উদ্দাপ পাল কর্তৃক সেবাপ্রার্থীদের হয়রানীর বিষয়টি সুষ্পষ্টভাবে চিঠিতে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি নতুন নিরাপত্তা প্রহরী পদায়নের জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানিয়েছিলেন ইউএনও খালিদ হোসেন সিদ্দিকী। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ঘুষ গ্রহণের অডিও ও ভিডিও ক্লিপসহ খোঁদ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দেয়া চিঠির দুবছর পেরিয়ে গেলেও বিতর্কিত ও নানা দুর্নীতি অনিয়মের সাথে জড়িত ওই নিরাপত্তা প্রহরীকে দেবহাটা থেকে অপসারণ বা তার বিরুদ্ধে কোন আইনগত পদক্ষেপ নেয়নি জেলা প্রশাসন।

মঙ্গলবার দৈনিক কালের চিত্র সহ সাতক্ষীরার বিভিন্ন সংবাদপত্রে দেবহাটা উপজেলা ভূমি অফিসের বেপরোয়া ও দুর্নীতিগ্রস্ত এ কর্মচারিকে নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের পর রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয় দেবহাটার অফিস পাড়ায়। এরই মধ্যে উদ্দাপ পালের আরও বেশ কিছু ঘুষ বানিজ্য ও অপকর্মের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এমনকি প্রতিবেদকের হাতে পৌঁছেছে অফিস চলাকালীন উপজেলা ভূমি অফিসের গুরুত্বপূর্ন পদে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তার কম্পিউটারে বসে উদ্দাপ পালের নামজারি সংক্রান্ত কাজ করার ভিডিও ফুটেজ। আর ঘুষের টাকা ফেরত চেয়ে মঙ্গলবার বিকেলে তার বিরুদ্ধে দেবহাটা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন শরিফুল ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগী চা দোকানি।

আউট সোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত উদ্দাপ পাল তালা উপজেলার ইসলামকাঠি গ্রামের সাধন কুমার পালের ছেলে। ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, সরকারি জমিতে স্থাপনা থাকা বা জমি নিয়ে বিপদগ্রস্ত কিংবা সরকারি গাছ কাটার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং উপজেলা ভূমি অফিসের সেবাপ্রার্থীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ও সরকারি ঘর বরাদ্দ দেয়ার নাম করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া, নামজারিসহ বিভিন্ন কেসের দালালি, এসিল্যান্ড অফিসের গোপনীয় নথিপত্রের রেকর্ড রুমে অবাধ যাতায়াত ও সরকারি নথিতে নয়-ছয়, গুরুত্বপূর্ন পদে দায়িত্বরত অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কম্পিউটার ব্যবহার, উপজেলার আশপাশের ব্যবসায়ীদের থেকে বাকিতে মালামাল নিয়ে পরে ঋনের টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো হুমকি ধামকি দেয়াসহ অগণিত অভিযোগ রয়েছে উদ্দাপ পালের বিরুদ্ধে। প্রতিনিয়ত তার বেপরোয়া কর্মকান্ডে সরকারি গুরুত্বপূর্ন এ দপ্তরের সেবার মান ও সুনাম ক্ষুন্ন হওয়ায় তাকে অবিলম্বে দেবহাটা থেকে অপসারণের পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন