হোম খেলাধুলা আফগানদের হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ

আফগানদের হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 48 ভিউজ

স্পোর্টস ডেস্ক:
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ১৮ ওভরে ১৪৪/৪ (সোহান ১০*, সাইফ ৬৪*; পারভেজ ১৪, তানজিদ ৩৩, জাকের ১০)

ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী

ম্যাচসেরা: সাইফ হাসান

সিরিজসেরা: নাসুম আহমেদ (৫ উইকেট)

আফগানিস্তান ২০ ওভারে ১৪৩/৯ (বশির ২*, মুজিব ২৩*; ইব্রাহিম ৭, গুরবাজ ১২, তারাখিল ১১, অটল ২৮, ওমরজাই ৩,নবী ১, রশিদ ১২,আহমদজাই ০, রাসুলি ৩২)

তিন ম্যাচেই বাংলাদেশের দাপুটে পারফরম্যান্সের সামনে টিকতে পারেনি আফগানিস্তান। তৃতীয় টি-টোয়েন্টি তো তাদের সামনে ব্যাট-বলে পুরোপুরি অসহায় ছিল আফগান দল। শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজে আফগানদের হোয়াইটওয়াশ করেছে জাকের আলীর দল। আফগানিস্তানকে দ্বিতীয়বার এই ফরম্যাটে ধবলধোলাই করার কীর্তি দেখালো বাংলাদেশ দল। তবে শারজার মাটিতে টাইগারদের এমন কীর্তি এবারই প্রথম।

বোলারদের ভূমিকায় শুরুতে আফগানদের ১৪৩ রানে আটকে রাখে বাংলাদেশ। জবাবে ২৪ রানে প্রথম উইকেট হারালেও বাংলাদেশের জয়ের মঞ্চ গড়েন সাইফ হাসান ও তানজিদ হাসান। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৫ রান যোগ করেন তারা। তানজিদ ৩৩ রানে আউট হলেও প্রান্ত আগলে ঝড়ো ব্যাটিংটা ধরে রাখেন সাইফ। ১৪তম ওভারে মুজিব জোড়া আঘাতে জাকের, শামীমকে ফিরিয়ে ছন্দ পতন ঘটানোর চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি। সাইফ ছক্কা বৃষ্টিতে ঝড়ো ফিফটিতে ১২ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করেছেন। ৩৮ বলে ২ চার ও ৭ ছক্কায় ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। সঙ্গে ৯ বলে ১০ রানে অপরাজিত থাকেন সোহান।

আফগানদের হয়ে ২৬ রানে দুটি উইকেটনেন মুজিব উর রহমান। একটি করে নেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই ও আব্দুল্লাহ আহমদজাই।

৩২ বলে সাইফের চতুর্থ ফিফটি

মুজিব জোড়া আঘাতে মোমেন্টাম বদলের সুযোগ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু একপ্রান্ত আগলে ছিলেন সাইফ। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ত্রাস ছড়াচ্ছিলেন। ১৬তম ওভারে বশিরের বলে টানা দুটি ছক্কায় আবার চড়াও হন তিনি। ৩২ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি।

মুজিবের জোড়া আঘাত

তানজিদ-সাইফের জুটি ভাঙার পর ছন্দ পতন ঘটেছে বাংলাদেশের। অধিনায়ক জাকের আলী বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ১৪তম ওভারে ১০ রানে তাকে এলবিডাব্লিউতে ফেরান মুজিব উর রহমান। রিভিউ নিয়েও অবশ্য এবার রক্ষা পাননি। ওভারের শেষ বলে নতুন নামা শামীমকে (০) করেন বোল্ড। তাতে ১০৯ রানে পতন হয় চতুর্থ উইকেটের। তখন ৩৬ বলে জিততে দরকার ৩৫ রান।

রিভিউতে রক্ষা পেলেন জাকের

১১.৩ ওভারে রশিদ খানের বলে জাকের আলীকে এলবিডাব্লিউ আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তার পর রিভিউ নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তাতে রক্ষা পান জাকের। বল লেগ সাইডের বাইরে পিচ করেছিল।

তানজিদের বিদায়ে ভাঙলো পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটি

২৪ রানের ওপেনিং জুটির পর বাংলাদেশকে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে এগিয়ে নিচ্ছিলেন তানজিদ হাসান ও সাইফ হাসান। ৩৯ বলে ৫৫ রান যোগ করেন তারা। ১০.৪ ওভারে তানজিদ ক্যাচ তুলে ফিরলে ভাঙে দারুণ এই জুটি। তাতে ৭৯ রানে পড়ে দ্বিতীয় উইকেট। তানজিদ ৩৩ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩৩ রানে ফিরেছেন।

সাইফের ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে ৪৭

পারভেজ ফিরলেও রানের চাকা গতি পায় সাইফ হাসান ব্যাটিংয়ে নামলে। পঞ্চম ওভারেই ছক্কা হাঁকান তিনি। ষষ্ঠ ওভারেও হাঁকান ছক্কা। শেষ ওভারে তার আগে তানজিদও মারেন বাউন্ডারি। তাতে পাওয়ার প্লেতে এক উইকেট পড়লেও স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৪৭ রান।

পঞ্চম ওভারে ফিরলেন পারভেজ

শুরুটা দেখে শুনে করেছিলেন দুই ওপেনার তানজিদ হাসান ও পারভেজ হোসেন। ৪ ওভারে যোগ করে ২৪ রান। পঞ্চম ওভারে শুরুর জুটি ভাঙেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। সফট ডিসমিসালে ক্যাচ তুলে ফেরেন পারভেজ হোসেন। বাংলাদেশ ওপেনার ১৬ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় ফেরেন ১৪ রানে।

আফগানিস্তান থামলো ১৪৩ রানে

সিরিজের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করতে তাদের ১৪৩ রানে থামিয়েছে বাংলাদেশ। ৯ উইকেটে আফগানরা সংগ্রহ করেছে ১৪৩ রান।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে ইনিংস শুরু করেছিল আফগানিস্তান। কিন্তু শুরুতেই বাংলাদেশ চাপে ফেলে দেয় তাদের। তৃতীয় ওভারেই শরিফুল ইসলামের বলে বিদায় নেন জাদরান। এরপর নাসুম আহমেদ শামীম হোসেনের দুর্দান্ত এক ক্যাচে গুরবাজকে ফেরান। পাওয়ারপ্লেতে আফগানরা একেবারেই ছন্দ খুঁজে পায়নি। মাত্র ৩৯ রানে তারা হারায় তিন উইকেট।

সেদিকুল্লাহ অটল কিছুটা স্থিতি আনলেও ড্রিঙ্কস ব্রেকের পর তাকেও ফিরতে হয় সাজঘরে। মাঝের ওভারগুলোতে বাংলাদেশ বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় আফগানিস্তান। ডট বলের চাপ বাড়তে থাকায় রান তোলার চেষ্টায় ব্যাটাররা ভুল টাইমিংয়ে কিংবা বলের লাইন ভুল পড়ে আউট হন একে একে।

এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল আফগানদের গুটিয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। ৯৮ রানে হারায় ৮ উইজেট! কিন্তু রাসুলির ১৯ বলে ৩২ রান ও মুজিবুর রহমানের ১৮ বলে ২৩ রানের ছোট কিন্তু কার্যকর ইনিংস আফগানিস্তানকে শেষ দিকে লড়াকু স্কোর এনে দেয়। শেষ দিকের দুই পার্টনারশিপে তারা যোগ করে ৪৫ রান।

৩ ওভারে ১৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার ছিলেন সাইফউদ্দিন। ২৪ রানে দুটি নেন নাসুম আহমেদ ও তানজিম হাসান সাকিব। একটি করে নেন শরিফুল ইসলাম ও রিশাদ হোসেন।

৩৪ রানের নবম উইকেট জুটি ভাঙলেন সাইফউদ্দিন

৯৮ রানে অষ্টম উইকেট পতনের পর দ্রুত অলআউট হওয়ার শঙ্কায় ছিল আফগানিস্তান। সেখান থেকে দলের স্কোর ১৩২ রানে নিয়ে গেছেন রাসুলি ও মুজিব। ১৮.২ ওভরে রাসুলিকে স্লোয়ারে কাবু করেছেন সাইফউদ্দিন। রাসুলি ২৯ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৩২ রানে। তাতে ভাঙে ৩৪ রানের জুটি।

তানজিমের জোড়া আঘাতে ৮ উইকেট নেই আফগানিস্তানের

বাংলাদেশের নিয়মিত আঘাতে উইকেটের মিছিল চলতে থাকে আফগানদের। তার পরও রশিদ খান নেমে মারমুখী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ১৫তম ওভারে তাকে ক্যাচ আউট করান তানজিম হাসান সাকিব। রশিদ ৭ বলে আউট হন ১২ রানে। পরের বলে তানজিম তুলে নেন নতুন ব্যাটার আব্দুল্লাহ আহমদজাইকেও (০)। তাতে ৯৮ রানে ৮ উইকেট হারায় আফগান দল।

নবীকে বোল্ড করলেন নাসুম

ওমরজাই আউট হওয়ার পরের ওভারে নাসুমের আঘাতে বোল্ড হন মোহাম্মদ নবীও। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটারের আউটে আরও বিপদ বাড়ে আফগানদের। এক রানের ব্যবধানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় তারা। দলীয় ৮২ রানে নবী বিদায় নেন ১ রান করে।

ওমরজাইকে ফেরালেন রিশাদ, পঞ্চম উইকেট হারালো আফগানিস্তান

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে আফগানদের রান বাড়তে দিচ্ছে না বাংলাদেশ। তাতে চাপ বাড়ছে ব্যাটারদের। সেই চাপের মুখে নতিও স্বীকার করছেন তারা। ১১.৩ ওভারে রিশাদের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে নুরুল হাসান সোহানকে ক্যাচ দেন ওমরজাই। ৩ রানে বিদায় নেন তিনি।

সাইফউদ্দিনের দ্বিতীয় শিকার অটল

৩৯ রানে তৃতীয় উইকেট পতনের পর হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন সেদিকুল্লাহ অটল। ১০ ওভারে তার ব্যাটে স্কোর দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৭৩। ১১তম ওভারে আক্রমণে এসেই অটলকে ক্যাচ আউট করেন সাইফউদ্দিনের। তার বলে মেরে খেলতে গিয়ে তানজিদ তামিমকে ক্যাচ দেন অটল। তার ২৩ বলের ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ১টি ছয়।

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে সাইফউদ্দিনের শিকার তারাখিল

পাওয়ার প্লেতেই আফগানদের ব্যাক ফুটে রেখেছে বাংলাদেশ। শরিফুল, নাসুমের পর ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে সাইফউদ্দিনের বলে বোল্ড হয়েছেন তারাখিল। তাতে ৬ ওভারে ৩৯ রানে পতন হয়েছে ষষ্ঠ উইকেটের। তারাখিল সাইফউদ্দিনের ফুলটস বলে বোল্ড হয়েছেন ১১ রানে। তার ১৩ বলের ইনিংসে ছিল ১টি ছক্কা।

গুরবাজকে ফেরালেন নাসুম

শরিফুলের আঘাতের পরের ওভারে আঘাত হানেন নাসুম। তার বলে ১২ রানে বিদায় নেন বিপজ্জনক গুরবাজ। তিনি আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করছিলেন। নাসুমের প্রথম বলে মেরে খেলতে গিয়ে শামীমের তালুবন্দি হন তিনি।

শরিফুলের আঘাতে ফিরলেন ইব্রাহিম

প্রথম দুই ওভারে ২০ রান তুলে ফেলেন আফগান দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। তৃতীয় ওভারে এসে ইব্রাহিমকে ক্যাচ আউটে ফিরিয়েছেন শরিফুল। তার শর্ট লেংথের বলে মেরে খেলতে গিয়ে ৭ রানে কাটা পড়েন ইব্রাহিম। তার ৬ বলের ইনিংসে ছিল ১টি চার।

শেষ টি-টোয়েন্টিতেও বোলিংয়ে বাংলাদেশ, নেই মোস্তাফিজ

শারজায় এক ম্যাচ হাতে রেখেই টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্য নিয়ে তারা আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে আবারও টস জিতে বোলিং নিয়েছে।

বাংলাদেশ সিরিজ জেতায় আফগানদের টানা জয়ের রেকর্ডে ছেদ পড়েছে। ২০১৫ সালের পর মরুর বুকে প্রথমবার দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ হার দেখেছে রশিদ খানরা। তার আগে জিতেছে টানা ৯টি সিরিজ।

একাদশে কারা

বাংলাদেশ একাদশে একটি পরিবর্তন এনেছে। একাদশে নেই মোস্তাফিজুর রহমান। তার জায়গায় এসেছেন তানজিম হাসান সাকিব। আফগানদের দলেও পরিবর্তন একটি। নূর আহমেদ খেলছেন না, তার জায়গায় অভিষেক হচ্ছে বশির আহমেদের।

বাংলাদেশ একাদশ: জাকের আলী (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান, পারভেজ হোসেন, সাইফ হাসান, নুরুল হাসান, শামীম হোসেন, সাইফউদ্দিন, তানজিম হাসান সাকিব, রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম।

আফগানিস্তান একাদশ: রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, সেদিকুল্লাহ অটল, দারউইশ রাসুলি, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, রশিদ খান (অধিনায়ক), মোহাম্মদ নবী, ওয়াফিউল্লাহ তারাখিল, মুজিব উর রহমান, আব্দুল্লাহ আহমদজাই ও বশির আহমেদ।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন