আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
গরু পাচার-কাণ্ডে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডলকে ডেকেছিল সিবিআই। বীরভূম থেকে কলকাতায় এসে অনুব্রত সিবিআই অফিসে যাওয়ার কথা থাকলেও শরীর খারাপ বলে হাসপাতালে ভর্তি তিনি। সিবিআই-কে অনুব্রত বলেছেন, তারা চাইলে হাসপাতালে এসে জেরা করতে পারে। কিন্তু তিনি সিবিআই অফিসে যেতে পারবেন না। ডাক্তারদের রিপোর্টও সিবিআইকে পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে খবরটি নিশ্চিত করেছে।
সিবিআই এ নিয়ে চারবার গরু পাচার-কাণ্ডে অনুব্রতকে ডেকে পাঠাল। একবারও তিনি সিবিআই অফিসারদের জেরার মুখোমুখি হননি। মঙ্গলবার তিনি কলকাতায় এসেছিলেন, কিন্তু বুধবার শরীর খারাপ হয়েছে বলে তিনি এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। সেখান থেকেই সিবিআই-কে চিঠি পাঠান তিনি।
সূত্র জানাচ্ছে, অনুব্রতের চিঠি দিল্লিতে সিবিআই সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। সেখানে আইনজীবীদের মতামত নেওয়া হচ্ছে এই ব্যাপারে।
সিবিআই এখন বেশ কয়েকটি বিকল্প নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে। তার মধ্যে আছে নিজেদের চিকিৎসক দল গঠন করে অনুব্রতের শারীরিক অবস্থা যাচাই করা। দ্বিতীয়ত, হাসপাতালে গিয়ে অনুব্রতকে জেরা করা। তৃতীয়ত, আদালতের দ্বারস্থ হওয়া এবং তাদের নির্দেশে অনুব্রতকে জেরা করা। চতুর্থত, অনুব্রতের শরীর ভালো হওয়ার অপেক্ষা করা এবং তারপর তাকে জেরা করা। আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করেই সিদ্ধান্ত নেবে সিবিআই।
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের মতামতের ওপর তো আমরা সাধারণত কিছু বলতে পারি না। তবে একটা কথা বলা যেতে পারে, এটা ভারতে চেনা ছক। তার মতে, সাধারণ মানুষ নিজেদের মতো করে এ ঘটনার একটা অর্থ করে নিচ্ছেন। দোর্দণ্ড প্রতাপ অনুব্রত বিরোধীদের ভয় দেখানোর জন্য বিখ্যাত। মানুষের মনে এই ধারণা হচ্ছে, তিনি এখন ভয় পেয়ে হাসপাতালে।
বীরভূমের অনুব্রত মন্ডল বরাবরই বিতর্কে জড়িয়ে থাকেন। ক্যামেরার সামনে পুলিশকে হুমকি দিয়েছেন তিনি। প্রকাশ্য জনসভায় পুলিশের ওপর বোমা মারার কথা বলেছেন, বিরোধীদের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। সম্প্রতি রামপুরহাট-কাণ্ডেও তার নাম উঠে এসেছে।
রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে তদন্ত করতে গিয়ে সিবিআই জানিয়েছে, এ ঘটনার পেছনে বালি, পাথর ও গরু পাচারের বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে তাদের অনুমান। আপাতত সেই বিষয়টি সামনে রেখেই তারা তদন্ত চালাচ্ছে।
সিবিআইয়ের এক অফিসার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, এলাকার স্থানীয় নেতাদের রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তাদের ভাবাচ্ছে। পাচারের কাঁচা টাকা জেলার বিভিন্ন স্তরের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ব্যক্তির কাছে পৌঁছাত বলে তাদের সন্দেহ। বস্তুত, এর আগে বীরভূমে গরু পাচারের তদন্তে নেমে বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মন্ডলকে চারবার সমন পাঠিয়েছিল সিবিআই। এবার রামপুরহাট-কাণ্ডেও সরাসরি তার নাম জড়িয়ে যেতে পারে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন।
বগটুইয়ের ঘটনা ঘটার পর অনুব্রত বলেছিলেন, সেখানে টিভি ফেটে আগুন লেগেছে। এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বগটুইয়ে যান। সেখানেও মুখ্যমন্ত্রীর গাড়িতে ছিলেন অনুব্রত।