রাজনীতি ডেস্ক:
বিরোধী দলবিহীন প্রহসনের নির্বাচন দেশবাসী রুখে দেবে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে নির্বাচনী তফসিল ইস্যুতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে বিক্ষোভ-পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আল-মাদানী বলেন, অবৈধ সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীন একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় দেশের জনগণ যেভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে, তাতে সরকারের আখের রক্ষা হবে না।
আসন্ন নির্বাচনে কোনো সহযোগিতা করা থেকে এবং ভোটদান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান মাদানী। তিনি ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পতাকা র্যালি কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মাদানী উল্লেখ করেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ জনসমর্থন হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে গেছে। সরকার প্রশাসননির্ভর হয়ে পড়েছে। জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। সরকার দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচণ্ড বিরোধিতা এবং আন্তর্জাতিক মহলের মতামত উপেক্ষা করে সরকার একতরফা প্রহসনের নির্বাচন করার অপরিণামদর্শী খেলায় মেতে উঠেছে। জনগণের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন করলে এটা দেশবাসী মানবে না। প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন থেকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে ফিরে আসতে হবে।
বেচাকেনার হাটের মতো প্রার্থী ও দলকে নির্বাচনে আনা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ১৪ দলের ইনু-রাশেদ খান মেনন খুব পেরেশানিতে আছেন তাদের সিট কনফার্ম না পেয়ে।
জাতীয় পার্টি প্রসঙ্গে মাদানী বলেন, জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত বিরোধী দল বানিয়েছে। জাতীয় পার্টি জাতির জন্য একটা বিষফোঁড়া। ২০১৪ সালে আবার ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন করে বৈধতা দিয়েছে। ওরা অংশীদার, মন্ত্রী হয়, তারা বিরোধী দল হয় কীভাবে। এটা তো ধোঁকাবাজি। অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলেন জিএম কাদের! এখন তারা নির্বাচনে চলে গেছেন।
‘এ ছাড়া তৃণমূল বিএনপি আওয়ামী লীগের তল্পিবাহক। টাকা ও সিট ছেড়ে আওয়ামী লীগ তাদের নিয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এই জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন মানুষের সঙ্গে আছে, প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত করবে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল বাতিল করতে হবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে স্বচ্ছ নির্বাচন করতে হবে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন আমরা চাই না। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন থেকে সরকারকে ব্যাক করানোর জন্য ইসলামী আন্দোলন রাজপথে নেমেছে। সরকারকে বলব ফিরে আসুন। আগামী দিনে যে রক্তপাত, গৃহযুদ্ধ হবে এর দায়দায়িত্ব আওয়ামী লীগ সরকারকে নিতে হবে।’
মাদানী অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ ১৫ বছরে দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। জাতীয় অর্থনীতি এখন ভয়াবহভাবে বিপর্যস্ত। ব্যাংকগুলোর আমানত ও দেশের রিজার্ভ লুটপাটের কারণে অর্থনীতি এখন ভয়াবহভাবে বিপর্যস্ত। ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে সরকার এখন পোশাক শিল্পকে মারাত্মক ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জনগণ যখন অভাবের তাড়নায় দিগ্বিদিক ও দিশেহারা, সরকার তখন খেল-তামাশার নির্বাচন নিয়ে আনন্দ-উল্লাস করছে।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের সম্পদ নষ্ট করে সরকার প্রহসনের নির্বাচন করছে। পছন্দের প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করে দিলে অন্তত দেশের সম্পদ নষ্ট হতো না। পাতানো নির্বাচনে খরচ করা টাকার হিসাব জনগণ নেবে। গৃহপালিত দল দিয়ে এবং সরকারি দলের প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে সব ডামি প্রার্থী উদগ্রীব। কথা হলো নৌকা নিয়ে নির্বাচিত দল আবার বিরোধী দল হয় কীভাবে? এভাবে ধোঁকার রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নতুন শিক্ষা কারিকুলামের বই বিতরণ করা যাবে না। কোনো ছাত্রছাত্রী এই বই পড়বে না। বিতর্কিত বই ছাপাতে যে টাকা খরচ হয়েছে, ওই টাকা শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, সরকার প্রধানের কার্যক্রম দেখে এটা পরিষ্কার যে প্রতিশোধপরায়ণ মানসিকতা নিয়ে তিনি দেশ শাসন করছেন। যখন দেশের ঘরে ঘরে অভাব, মানুষ যখন নির্যাতিত ও অধিকারবঞ্চিত—তখন ঢোল-তবলা নিয়ে আওয়ামী লীগের উল্লাস দেখে জনগণ ক্ষুব্ধ। আওয়ামী লীগ ও নৌকার প্রতি মানুষের ক্ষোভ ও ঘৃণা ক্রমেই বেড়ে চলছে। জনসমর্থন হারিয়ে দিশেহারা ও বিপর্যস্ত। এ জন্য সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে ভয় পায়।
সমাবেশ শেষে একটি বিশাল মিছিল বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড়, বিজয়নগর পানির ট্যাংক হয়ে পুনরায় বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে এসে শেষ হয়।
সমাবেশে আর বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম আতিকুর রহমান, প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা মোহাম্মদ নেছার উদ্দিন, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, মাওলানা নূরুল ইসলাম নাঈম, ডা. শহিদুল ইসলাম, নুরুজ্জামান সরকার, মুফতি ফরিদুল ইসলাম, মাওলানা কেএম শরিয়াতুল্লাহ, হাফেজ মাওলানা মাকসুদর রহমান ও মুফতি মাছউদুর রহমান।