স্বাস্থ্য ডেস্ক:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে সরকারি সেবা বন্ধ রেখে প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী দেখার বিষয়ে বাধা দেয়ায় তত্ত্বাবধায়কের ওপর চটেছেন হাসপাতালের তিন চিকিৎসক।
সোমবার (৩১ জুলাই) দুপুরে হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা ‘বন্ধ রেখে’ তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে ঢুকে অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ তাকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন তারা। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ চিকিৎসকরা হাসপাতালের শহীদ ডা. মিলনকক্ষে অর্ধশতাধিক চিকিৎসককে নিয়ে সভা করে তত্ত্বাবধায়কের কোনো নির্দেশনা মানবেন না বলেও তাকে জনিয়ে দেন।
এদিকে চিকিৎসকদের মতবিরোধের কারণে অন্তত এক ঘণ্টা হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। খবর পেয়ে সদর মডেল থানা পুলিশ হাসপাতালে যায়।
দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ আছে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রানা নূরুস শামস্ ও ফাইজুর রহমান ফয়েজ হাসপাতাল চলাকালীন তারা হাসপাতালে এসে হাজিরা দিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করার জন্যে বিভিন্ন ক্লিনিকে চলে যান। দীর্ঘদিন এমন অভিযোগ থাকার পর তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক।
এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ডা. ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, ‘চলতি মাসে আবাসিক চিকিৎসক রানা নূরুস শামস্ ও ফাইজুর রহমান ফয়েজ নিয়মিত দায়িত্ব পালন না করায় তাদের বেতন বন্ধ রাখার জন্যে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন দুই আবাসিক চিকিৎসক রানা নূরুস শামস্ ও ফাইজুর রহমান ফয়েজ। আজ সকালে এ দুই চিকিৎসক ও তাদের অপর সহকর্মী চক্ষু চিকিৎসক ওবায়দুল্লাহকে নিয়ে আমার কক্ষে আসেন। এ সময় তারা আমার কাছে বেতন বন্ধ রাখার কারণ জানতে চান।এক পর্যায়ে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। পাশাপাশি আমাকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন এবং হুমকি দেন। এ সময় হাসপাতালটির সিসি ক্যামেরার লাইন বন্ধ ছিল। কারা সিসি ক্যামেরা বন্ধ করেছে জানি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে তারা অন্য চিকিৎসকদের নিয়ে হাসপাতালের শহীদ মিলনকক্ষে সভা করেন। পরে তারা আমার কক্ষে এসে আমাকে জানান যে, তারা আমার কোনো আদেশ নিষেধ মানবেন না।’
তিনি বলেন, ‘ওই তিন চিকিৎসক আমার কক্ষে এসে বলেন, তিনদিন তারা বহিঃবিভাগের রোগী দেখবেন এবং তিনদিন বৈকালিক সেবা দেবেন। আমার কাছে মনে হয়েছে বহিঃবিভাগ বন্ধ থাকলে রোগীরা চিকিৎসক না পেলে অসন্তোষ হবেন। আমি তখন বলেছিলাম বহিঃবিভাগ সপ্তাহে ৬দিনই খোলা রাখা হোক, আর বৈকালিক সেবা প্রয়োজনে কমিয়ে আনা হউক। তখন তারা বলেন, আগে যেভাবে চলে আসছিল সেভাবেই আমরা করব, আপনার কথা আমরা মানব না। তখন চক্ষু বিভাগের চিকিৎসক ওবায়দুল্লাহ উচ্চবাচ্য করলে আমি বলেছি তুমি বেয়াদবের মতো কথা বলছো কেন? এ কথা বলার পর সে আমার কক্ষের দরজায় জোরে ধাক্কা দিয়ে ভেঙে বাইরে চলে যায়। আমি ঘটনাটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
এদিকে অভিযুক্ত আবাসিক চিকিৎসক ফায়েজুর রহমান ফয়েজ বলেন, ‘হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক অনেকটাই অসুস্থ। তার ডায়েবেটিস থাকে ৩০ থেকে ৩২ মাত্রায়। তিনি প্রায়শই চিকিৎসকদের সঙ্গে বাজে আচরণ করেন। তার বিরুদ্ধে হাসপাতালের প্রায় সব চিকিৎসকই ক্ষুব্ধ। আমরা আজ সভা করে তাকে জানিয়েছি, আমরা তার আদেশ নিষেধ আর মানব না।’
হাসপাতাল ফাঁকি দেয়ার প্রসঙ্গে ডা. ফয়েজ বলেন, ‘আমরা হাসপাতালে এসে চা-খেতে যাই। পরে রোগী দেখার কার্যক্রম শুরু করি। হাসপাতাল ফাঁকি দেয়ার অভিযোগটি মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।
অপর আবাসিক চিকিৎসক রানা নূরুস্ শামস বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো করেছেন তার কোনো ভিত্তি নেই। বরং উনি গত দুই বছর কী করেছেন সে হিসেব নিকেশ করা দরকার। আমরা উনার আচরণগত কারণে এবং অনৈতিক চর্চার কারণে আজ সকালে সব চিকিৎসককে নিয়ে বৈঠক করেছি। বৈঠকে উনার দুই বছরের কার্যক্রমের মূল্যায়ন করেছি। উনার প্রতি অধিকাংশ চিকিৎসকই ক্ষুব্ধ। আমরা তাকে জানিয়েছি যে, আগামী দিনগুলোতে আপনার আদেশ-নিষেধ আমরা আর মানব না। বিষয়টি আমাদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এবং আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমরা অবগত করেছি।’
চক্ষু বিভাগের চিকিৎসক ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘দায়িত্ব বণ্টন নিয়ে কথা বলার সময় তত্ত্বাবধায়ক সাহেব আমাকে বেয়াদব বলেছেন। আমি একজন উচ্চ ডিগ্রিধারী চিকিৎসক। তিনি এ ধরনের কথা আমাকে বলতে পারেন না। আমি বিষয়টি সহকর্মীদের জানাই। পরে তারা এনিয়ে উনার কক্ষে গিয়ে কথা বলেছেন।’
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসাইন বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিজেদের মধ্যে মতবিরোধে ঝামেলা হচ্ছে। এমন খবর পাওয়ার পর হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। পরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।’