হোম অন্যান্যসারাদেশ সাতক্ষীরার তালার চাঞ্চল্যকর গৃহপরিচারিকা শারমিন ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় প্রেমিক আব্দুল হালিমের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড

নিজস্ব প্রতিনিধি :

সাতক্ষীরার তালায় চাঞ্চল্যকর গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ গুম করার চেষ্টার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে এক ব্যক্তির যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ্বন্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের বিনাশ্রম কারাদ্বন্ডাদেশ প্রদান করেছে আদালত। সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এমজি আযম রবিবার এক জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় দেন।

সাজাপ্রাপ্ত আসামীর নাম আব্দুল হালিম বিশ্বাস। সে যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার ভাল্লুকঘর গ্রামের খলিল বিশ্বাসের ছেলে। তবে আসামী খলিল পলাতক রয়েছে।

মামলার বিবরনে জানা যায়, কেশবপুরের ভাল্লুকঘর গ্রামের আব্দুল হালিম বিশ্বাস মায়ের সঙ্গে ১৯৯৮ সাল থেকে তার মামার বাড়ি তালা উপজেলা সদরের শিবপুরে থাকতো। অপরদিকে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলা সদরের আবু বক্কর সানার মেয়ে শারমিন সুলতানা অভাবের তাড়নায় তার নানা তালা উপজেলার বারুইহাটি গ্রামের আব্দুল সরদারের বাড়িতে থেকে বিভিন্ন বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতো। ২০০১ সালে হালিমের সঙ্গে শারমিনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০০৩ সালের ২১ জুলাই বিকেলে নানার বাড়ি থেকে গুল কিনতে এসে সে আর বাড়ি ফেরেনি।২৩ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তালা উপজেলা পরিষদের সামনে মোজাম্মেল হকের বাড়ির পাশের ডোবা থেকে পুলিশ শারমিনের লাশ উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় ২৮ জুলাই তালা থানার উপপরিদর্শক মশিয়ার রহমান বাদি হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ শারমিনের প্রেমিক আব্দুল হালিমকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়। রিমান্ড শেষে সাতক্ষীরা নালিশী আদালত-খ অ লের বিচারক ইব্রাহীম খানের কাছে সেসহ বারুইহাটির হাবিবুর রহমান, জেঠুয়ার মিন্টু, গোনালী নলতার মেহেদী ও ঘোষনগরের খলিল শারমিনকে ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করে লাশ ডোবার পানিতে ফেলে লাশ গুম করার চেষ্টা করার চা ল্যকর কাহিনী তুলে ধরে বিচারকের কাছে।

মামলার প্রথম তদন্তকারি কর্মকর্তা তালা থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল হাই আব্দুল হালিম ও মোজাম্মেল হকের বাড়ির পাশের ব্যবসায়ি শিবপুর গ্রামের সীতানাথ রায়ের ছেলে পরিমল রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরবর্তীতে আব্দুল হালিম তার ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদনে উল্লেখ করেন যে তাকে নির্যাতন চালিয়ে পুলিশ ওই স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করে। ২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মামলার যুক্তিতর্ক শুনানী শেষে বিচারক মোতাজ্জিদুর রহমান মামলাটির পূণঃতদন্তের নির্দেশ দেন।

একপর্যায়ে মামলার শেষ তদন্তকারি কর্মকর্তা তালা থানার উপ-পরিদর্শক লুৎফর রহমান ২০১৩ সালের ২৪ অওেক্টাবর পূর্বের অভিযোগপত্র বহাল রেখে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধিত ২০০৩ এর ৯(২) ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তবে ২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আদালত থেকে জামিন পাওয়ার কয়েক মাস পর আব্দুল হালিম ভারতে পালিয়ে যায়।

মামলার ১৬ জন সাক্ষীর জেরা ও জবানবন্দি এবং নথি পর্যালোচনা শেষে বিচারক এমজি আযম পলাতক আসামী আব্দুল হালিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের পর হত্যা ও লাশ গুম করার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধিত ২০০৩ এর ৯(২) ধারায় ও দন্ডবিধির ২০১ ধারায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ্বন্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় কাঠগোড়ায় উপস্থিত পরিমল রায়কে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।

খালাস পাওয়ার পর আদালতের বারান্দায় পরিমল রায় বলেন, তাকে বিনা অপরাধে ১৯ বছর আদালতে আসতে হয়েছে। এরপরও ন্যয় বিচার হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

এ মামলায় আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাড. বসির আহম্মেদ ও অ্যাড. মনিরউদ্দিন। অপরদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন বিশেষ পিপি অ্যাড. জহুরুল হায়দার বাবু।

সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাড. জহুরুল হায়দার বাবু আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন