খেলাধূলা ডেস্ক :
সাকিব আল হাসান। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনেও দেশের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন তিনি। কিন্তু বাইশগজে তার একের পর এক কীর্তি যেমন দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে, তেমনি নানা সময়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে কম সমালোচনার জন্ম দেননি সাকিব। জুয়াড়ির কাছ থেকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েও সেটি চেপে যাওয়ায় বছর কয়েক আগেই একবার আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়েছিলেন। এবার জুয়াড়ি প্রতিষ্ঠান বেটউইনার ডট কমের ‘কথিত’ নিউজ সাইট বেটউইনার নিউজের শুভেচ্ছাদূত হলেন। কিন্তু একবার ভাবলেনও না, বাংলাদেশের আইনে জুয়া নিষিদ্ধ। আর তাই এ জাতীয় (জুয়া) প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে, এমন কিছুর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়াও নীতি-নৈতিকতা বিরুদ্ধ।
জানা গেছে, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে (প্রায় ১০ কোটি টাকা) বেটউইনার নিউজের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন সাকিব। বিষয়টি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দৃষ্টিগোচর হলে স্বাভাবিকভাবেই ভালোভাবে নেয়নি তারা। সাকিবকে চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়, চুক্তি থেকে সরে আসতে। কিন্তু তিনি নিজের সিদ্ধান্তেই বহাল থাকলেন। যুক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন, অন্যান্য দেশের ক্রিকেটারদেরও এমন চুক্তিবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি। কিন্তু এমন যুক্তি দেখানোর আগে সাকিবের এটা জানা উচিত ছিল, অন্য অনেক দেশে স্পোর্টস বেটিং (জুয়া) বৈধ হলেও বাংলাদেশে সেটি অবৈধ। এমনকী সাকিব যে বেটউইনার নিউজের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন, সেটিতে বাংলাদেশ থেকে ঢোকারও এক্সেস (অনুমতি) নেই।
দিন কয়েক পরই শুরু হচ্ছে এশিয়া কাপের ক্রিকেটযজ্ঞ। তারপর বিশ্বকাপ। বড় আসরগুলোকে সামনে রেখে ভারত ও পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীরা যখন দল গোছাচ্ছে, ঠিক তখন একজন ক্রিকেটারকে নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে দেশের ক্রিকেটের নীতিনির্ধারকদের। তবে স্বস্তির খবর হচ্ছে, বারবার বিসিবির ‘ছাড়’ পেয়ে যাওয়া সাকিব এবার আর পার পেলেন না। তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বৈঠকে বসেছিলেন ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে। তারপরই তিনি জানিয়েছিলেন, চুক্তি বাতিল না করলে ক্যাপ্টেন্সি দূরে থাক, জাতীয় দলেই জায়গা হবে না সাকিবের। আর এমন কঠিন বার্তার পরই সময় সংবাদ জানতে পারে, পিছু হটছেন সাকিব। চুক্তি বাতিল করেছেন জুয়াড়ি প্রতিষ্ঠানের ‘কথিত’ নিউজ সাইটের সঙ্গে।
এখানেই হয়তো প্রসঙ্গটার ইতি হতে পারতো কিন্তু তারপরও কিছু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। একজন চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার কিভাবে একটি অবৈধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিতে জড়ায়, তাও আবার বোর্ডের অনুমতি ছাড়া। দ্বিতীয়ত, বোর্ড যখন তাকে সরে আসতে বলেছে, তারপরও কোন মন্ত্রবলে বা ক্ষমতায় তিনি গড়িমসি করেন। অথচ বিসিবির নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনো কোম্পানি-প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করলেই সেটি বোর্ডকে জানাতে হয়, অনুমতি নিতে হয়, এমনকি চুক্তিপত্র বোর্ডে জমা দিতে হয়।
সাকিব চুক্তি বাতিল করায় বিসিবি হয়তো এখন তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারে। ভাবতে পারে, অবাধ্য ছেলেকে বশে আনা গেছে অবশেষে। কিন্তু এটারও কি সুযোগ আছে? বোর্ডের নিয়ম লঙ্ঘন করায় কেন শাস্তির মুখোমুখি হবেন না তিনি। এমন প্রশ্ন উঠাও অযৌক্তিক নয়।
শেষ পর্যন্ত চুক্তি বাতিল করেছেন সাকিব। কিন্তু আসল কাজটা তো হয়ে গেছে বেটউইনারের। দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে বেটউইনার নিউজের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বানিয়ে তারা বেটউইনারের প্রচার চেয়েছিল। সে প্রচার তারা এরই মধ্যে পেয়ে গেছে, আর কিছুর দরকার নাই। অসাধুরা এর মাধ্যমে এখন নতুন এক জুয়াড়ি সাইটেরও সন্ধান পেল।
ক্রিকেটার সাকিবের দেশের বিজ্ঞাপনের বাজারেও তুমুল চাহিদা। কিন্তু তারপরও কেন এই ক’টা টাকার লোভ সামলাতে পারলেন না তিনি। বৈধ কোনো কোম্পানির বিজ্ঞাপন বা স্পন্সরশিপ নিয়েই হয়তো টাকাটা উসূল করতে পারতেন। কিন্তু তারপরও কেন করলেন? শোনা যায়, বেটউইনার নিউজ প্রথমে অন্য আরেকজন ক্রিকেটারকে প্রস্তাব দিয়েছিল। তিনি রাজি না হওয়ায় সাকিবকে প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রস্তাবটা লুফে নিতে এক মুহূর্ত ভাবেননি মিস্টার সেভেন্টি ফাইভ।
কখনো প্রেসমিটে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলে, সমর্থকদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করে কিংবা আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে সম্মান না দেখিয়ে স্ট্যাম্পে লাথি মেরে বারবার তিরস্কৃত হওয়ার নজির গড়েছেন সাকিব। এবার আরেকবার দেশের ক্রিকেটে বাজে উদাহরণ দেখালেন। তার মতো সিনিয়র একজন ক্রিকেটার এমনটা করলে আগামী দিনের খেলোয়াড়রা কী করবে?