হোম অন্যান্যসারাদেশ শার্শা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রয়োজন এর চেয়ে বেশী আসছে ফেনসিডিল ও গাঁজা

শার্শা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রয়োজন এর চেয়ে বেশী আসছে ফেনসিডিল ও গাঁজা

কর্তৃক
০ মন্তব্য 144 ভিউজ

বেনাপোল প্রতিনিধি :
প্রয়োজনের চেয়েও বেশী ফেনসিডিল আসছে শার্শা ও বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে। প্রতিদিন যশোর জেলার এই সীমান্তবর্তী দুটি থানার বিভিন্ন গ্রামের সীমান্ত দিয়ে মাদক আসছে বলে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। আর এর সাথে জড়িত রয়েছে ্এলাকার প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিরা ।

শার্শার শালকোনা, পাকশি, শিকারপুর, কায়বা, রুদ্রপুর, গোগা, অগ্রভুলোট, পাচভুলোট এবং বেনাপোলের গাতিপাড়া, দৌলতপুর, পুটখালী, সাদিপুর, রঘুনাথপুর ও ঘিবা সীমান্ত দিয়ে আসছে প্রয়োজনের চেয়েও বেশী ফেনসিডিল । দেশে মাদক সেবীদের যে চাহিদা আছে তার চেয়েও মাদক চোরাকারবারীরা বেশী বেশী আনছে সুযোগ বুঝে। এমনটি জানালেন শালকোনা গ্রামের সাবেক সরকারী চাকুরী থেকে অবসরপ্রাপ্ত হায়দার আলী।

শালকোনা গ্রামের হায়দার আলী বলেন, এত পরিমান ফেনসিডিল আসছে এটা যশোর সহ বিভিন্ন জায়গায় চলে যাচ্ছে। আমি কার নাম বলব। আমাদের গ্রামে থাকতে হবে। কেউ না কেউতো ফেনসিডিল আনছে আবার ধরাও মাঝে মধ্যে পড়ছে। তিনি বলেন, দিনের বেলায় ও এ সীমান্ত পথে মাদক আসতে দেখা গেছে। সীমান্ত পার হয়ে মাদক চলে যাওয়ার পর বিজিবি ঘটনাস্থলে পৌছায়। বলেন তাহলে তাদের সহযোগিতা ছাড়া কিভাবে এসব ফেনসিডিল প্রবেশ করে। তিনি আরো বলেন এর সাথে জড়িত রয়েছে এক শ্রেনীর জনপ্রতিনিধি ও তাদের আত্নীয় স্বজন।

ডিহি ইউনিয়য়নের বর্তমান মেম্বার তরিকুল ইসলাম তোতা বলেন, আমরা নাম বলে গ্রামে বসবাস করতে পারব না। আমাদের মত অনেক জনপ্রতিনিধি আছে তারা এর সাথে জড়িত। গত ২৮ জুন ও শালকোনার এই সীমান্ত দিয়ে ৬০০ পিছ ফেনসিডিল উঠেছে শুনেছি। বিজিবি দেখিয়েছে ৪৬০ পিছ । বাকিটা কোথায়। যদি সোর্সকে দিয়ে থাকে তবে তাও তো ঠিক হবে না দেওয়া। কারন ওই ফেনসিডিল সোর্স বিক্রি করে দিবে। এর ফলে উঠতি কিশোর কিশোরী সহ যুবসমাজ এর অধপতন হবে।

একই এলাকার ফেনসিডিল এর জন উকিল বলেন আমি আগে জনে যেতাম। এখন যাই না। তবে এ পথে অনেকে মাদক ব্যবসা করে, আমি তাদের নাম বলতে পারব না।আমি নাম বললে বাড়ি থাকতে পারব না।
ডিহি ইউনিয়য়নের চেয়ারম্যান হোসেন আলী বলেন, মাদক ব্যবসার সাথে কোন আপস নেই। যে ব্যবসা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমার গ্রামে ইউনিয়নে একজন নাম করা মাদক ব্যাবসায়ি আমি তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।ওই গ্রামের মনির ও উকিল সম্পর্কে তিনি বলেন এরা আগে জনে যেত ও দুই চারটা বাড়িতে বিক্রি করত। এখোন এরা ভাল হয়ে গেছে।

শার্শা উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা ও কায়বা ইউনিয়নের বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বলেন, শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ ফেনসিডিল ব্যাবসার সাথে জড়িত এই ইউনিয়নের রুদ্রপুর, দাতখালী ও কায়বার লোকজন। এরা সীমান্তের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ফেনসিডিল নিয়ে আসে। মাঝে মধ্যে দুই একটি চালান আটক করলেও এর বড় অংশ চলে যায় দেশের অভ্যন্তরে।

অগ্রভুলোট দিয়ে সম্প্রতি বেশী আসছে ফেনসিডিল ও ইয়াবার চালান। গত ২৬ জুন প্রায় ১৪ শত পিছ ইয়াবা সহ আবু সাইদ নামে একজন তরুনকে আটক করেছে বিজিবি। তবে ওই তরুনের এই ব্যবসার সাথে আরো কে কে জড়িত আছে তাও ক্ষতিয়ে দেখার জন্য এলাকার লোকজন দাবি জানান। স্থানীয় তবিবার রহমান মেম্বার বলেন আমি কি ভাবে বলব তার সাথে কে জড়িত আছে। এটা বিজিবি তার নিকট পেয়েছে সেই বিজিবি উদ্ধার করতে পারবে এর সাথে কে জড়িত। তবে আবুল কালাম নামে এক যুবক বলেন এই ইয়াবার সাথে তবিবুর রহমান মেম্বারের ভাই মাহবুুবর রহমান জড়িত। এটা তারই মাল। কালাম আরো বলেন অগ্রভুলোট সীমান্ত বিজিবি ক্যাম্পের এ্ফ এস গিয়াস উদ্দিন তার নিকট টাকা চেয়েছে। সে বাড়ি এসে তার নিকট টাকা চেয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন মাহবুবর ও শিমুল নামে দুইজন ফেনসিডিল ব্যবসায়ির প্রাইভেট ফেনাসিডিল দিয়ে লোড করার সময়ও বিআইপি সাগর ও গিয়াস উপস্থিত ছিল কয়েকদিন আগে।
এ ব্যাপারে বিজিবির নিজস্ব গোয়েন্দা এফএস, এফআইজি গিয়াস উদ্দিন এর কাছে তার০১৭৬৯৬২০১৭২ নং মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি টাকা চাইব কেন? আমার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। সে যদি মিথ্যা কথা বলে আমার কিছু করার নেই।

এছাড়া বেনাপোলের ভবেরবেড় ফেনসিডিল এর রাজধানী বলে পরিচিত। এখান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নানা সুযোগ সুবিধা নেওয়ার কারনে এখানে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ফেনসিডিল ব্যবসা। এখান থেকে খুচরা ও পাইকাড়ি নিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ।

সাদীপুর সীমান্তের সাবেক জনপ্রতিনিধি সুলতান আহমেদ বাবু বলেন মাদকের সাথে আমাদের কোন আপোষ নেই। আমি নিজেও কয়েকবার এই সীমান্ত দিয়ে পার হয়ে আসলে মাদক ব্যবসায়িদের বিজিবির কাছে ধরিয়ে দিয়েছি। সম্প্রতি ১০০ বোতল ফেনসিডিল বেনাপোল আইসিপি ক্যাম্পে ধরিয়ে দিয়েছি।

উল্খ্যে গত ৬ জুন গোগা সীমান্ত থেকে ৮৬ পিছ ফেনসিডিল সহ আটক হয় একজন ডাক্তার,এরপর ৯ জুন মেহেদী ও খালেদুর নামে দুইজন আটক হয় ২২ বোতল ফেনসিডিল সহ পুটখালী সীমান্তে, একই দিন ভারত থেকে মালবাহি ট্রেনে আসা ওয়াগন থেকে বিজিবি ৬৬ বোতল ফেনিসিডিল উদ্ধার করে। তবে সুত্র জানায় ওই গাড়িতে ২৫০ বোতল ফেনসিডিল ছিল। ৭ জুন পুটখালী সীমান্ত থেকে ১১১ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে বিজিবি। ১০ জুন ৫১ বোতল ফেনসিডিল সহ বেলাল নামে একজনকে আটক করে বিজিবি। ১১ জুন ৯৪ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে বিজিবি সাদিপুর সীমান্ত থেকে। ১৪ জুন ৬ কেজি গাজা উদ্ধার করে বিজিবি সাদিপুর সীমান্ত থেকে। ১৭ জুন বেনাপোলের কাগমারী থেকে একটি মোটর সাইকেল সহ সিরাজুল নামে একজনকে পুলিশ আটক করে। ২২ জুন ২ কেজি গাজা সহ শফিকুল নামে একজনকে কাশিপুর সীমান্ত থেকে আটক করে বিজিবি।২৬ জুন ৭০০ শত গ্রাম গাজা মালেক নামে একজনকে আটক করে পোর্ট থানা পুলিশ। ২৮ জুন শার্শার শালকোনা থেকে ৪৬০ পিছ ফেনসিডিল উদ্ধার করে বিজিবি। তবে সেখানে ৬০০ পিছ ফেনসিডিল ছিল বলে এলাকার একটি সুত্র জানায়।

সুত্র মতে জানা গেছে সীমান্ত এলাকায় ছাড় পেয়ে মাদক ব্যবসায়িরা এখন প্রয়োজনের চেয়ে ফেনসিডিল এনে জমা করছে। পরে এগুলো অধিক দামে বিক্রি করবে। মহামারি করোনা ভাইরাসের জন্য সীমান্ত দিয়ে অন্য পন্য কম আসলেও থেমে নেই মরন নেশা ফেনসিডিল আসা।
প্রে

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন