মিলন হোসেন বেনাপোল :
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোও। এর ফলে ব্যক্তিমালিকানাধীন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে চরম বিপর্যয়ের মুখে। স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বাড়ি ভাড়া, শিক্ষকসহ কর্মচারীদের বেতন জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা। ছুটি আরও দীর্ঘ হলে স্কুল টিকবে কি না, তা নিয়েই শঙ্কায় রয়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক ও শিক্ষকদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের স্কুল ফি ছাড়া এসব কিন্ডারগার্টেনের আয়ের অন্য কোনো উৎস নেই বললেই চলে। আবার শিক্ষকদেরও আয়ের অন্যতম উৎস টিউশনি। এর সবই এই করোনায় বন্ধ। ঈদের ছুটির পর স্কুল চালু করা সম্ভব না হলে এসব পরিবারের আয়-রোজগার একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে।শার্শা উপজেলায় বেশ কয়েকটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের মালিক ও শিক্ষকরা বলছেন, সেক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে তারা কোনোভাবেই বের হতে পারবেন না।
বেনাপোল গাজিপুর মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ মোজাফফার হোসেন বলেন, গত ১৭ মার্চ থেকে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের আয়-রোজগারও। দুই মাস ধরে সবার বেতন-ভাতা বন্ধ। কিন্তু প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা স্কুলের ঘর ভাড়া। সেটার জন্য বাড়িওয়ালা চাপ দিচ্ছেন। অভিভাবকদের কাছ থেকে স্কুলের বেতন আদায় করা যাচ্ছে না। স্কুলের ঘর ভাড়াও পরিশোধ করতে পারছি না।
শিক্ষক রিপন হোসেন বলেন, আমাদের স্কুলটিতে নিম্ন আয়ের মানুষের সন্তানেরা লেখাপড়া করে। বেতন অনেক কম। শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকা দিয়ে স্কুলের ঘর ভাড়াসহ শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। প্রতি মাসে কিছুটা ঘাটতি থাকে। পরীক্ষার ফি নিয়ে সেসব ঘাটতি পূরণ করা হতো। এর মধ্যে দুই মাস স্কুল বন্ধ থাকায় বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়ে গেল। শিক্ষকদের বেতন বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে তাদের চরম হতাশায় দিন কাটছে। এ অবস্থায় সরকারের একান্ত সহযোগিতা ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
বেনাপোল সানরাইজ স্কুলের সহকারী শিক্ষক মোঃ ইমামুল হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দিন ধরে স্কুল বন্ধ। লকডাউনের কারণে প্রতিষ্ঠানের আয়-রোজগারও একদম বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য আমাদের মতো এসব প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটা অবদান রয়েছে। তাই করোনার এই দুর্যোগে সরকারের উচিত আমাদের সহায়তা করা। সরকারই আমাদের অভিভাবক। সরকার আমাদের বিষয়টি বিবেচনা করবে, এমনটাই প্রত্যাশা করছি।
শিক্ষক ইয়ানুর রহমান বলেন, এসব প্রতিষ্ঠান ৯৯ শতাংশ ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত বলে মাসিক সম্পূর্ণ আয়ের ৪০ শতাংশ ঘর ভাড়া ও ৪০ শতাংশ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতায় চলে যায়। বাকি ২০ শতাংশ বা তারও বেশি গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ভর্তুকি দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। আশঙ্কা করছি, শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এসব প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখাই হবে দূরুহ কাজ।
এ পরিস্থিতিতে সরকারের সহায়তা কামনা করে তিনি আরো বলেন, স্কুলের বেতন-ভাতা তো বটেই, আমাদের অনেকের শেষ আশ্রয়স্থল প্রাইভেট টিউশনিও বন্ধ। এই করোনা মহামারিতে প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতায় পোশাককর্মী, কৃষকসহ বিভিন্ন খাতের মানুষ ব্যাংক থেকে নানাভাবে সাহায্য পাচ্ছেন। কিন্তু আমরা যারা ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালিয়ে আসছি, আমাদের কী হবে? আমাদের তো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণও দেয় না। ফলে সরকারের সহায়তা ছাড়া বিকল্প নেই। সরকারের সাহায্যের ওপরই এসব প্রতিষ্ঠানের আগামী দিনের পথচলা নির্ভর করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অফিসার বলেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুলে অর্থনৈতিক সহায়তার বিষয়ে আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে ভার্চুয়াল ক্লাস শুরু করেছি। এখন মোবাইল, রেডিও ও অনলাইন— এই তিনটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যেন সব শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে পারি, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।
প্রে