হোম জাতীয় রায়েন্দা-মাছুয়া ফেরিঘাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ

জাতীয় ডেস্ক:

বাগেরহাটের শরণখোলায় রায়েন্দা-মাছুয়া ঘাটে ফেরিতে যানবাহন পারাপারে অতিরিক্ত টোল আদায় ও নির্ধারিত সময়ে ফেরি না চালানোর অভিযোগ উঠেছে ইজারাদারের বিরুদ্ধে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন যানবাহন চালক ও যাত্রীরা।

ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে নির্ধারিত সময়ে ফেরি চলাচল ও সড়ক বিভাগের নির্ধারিত টোল আদায়ের দাবি জানিয়েছেন ফেরির যাত্রীসহ যানবাহন চালকরা। তবে সড়ক বিভাগ বলছে, নির্ধারিত টোলের অতিরিক্ত আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। অতিরিক্ত টাকা নিয়ে ইজারাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানা যায়, খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার শরণখোলা ও বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর বলেশ্বর নদীতের ফেরি চলাচল শুরু হয়। তখন দুই এলাকার সংসদ সদস্যরা এ ফেরি উদ্বোধন করেন। পিরোজপুর সড়ক বিভাগের কাছ থেকে দরপত্রে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ২০২৩ সালের ৭ আগস্ট থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য ১১ লাখ টাকায় মেসার্স তালুকদার স্টোর নামে একটি প্রতিষ্ঠান ফেরিঘাটটি ইজারা নেয়।

মাছুয়া ফেরিঘাট থেকে সকাল ৮টা, বেলা ১১টা এবং দুপুর ২ টায় এবং রায়েন্দা ঘাট থেকে সকাল ৯টা, দুপুর ১২ টা এবং বিকেল ৪টায় ফেরি চলাচল করবে। কিন্তু সরেজমিনে জানা যায়, বেশিরভাগ দিনে নির্ধারিত সময়ে ফেরি চলাচল করে না। কিন্তু ফেরি চালু হওয়ার পরে যাতায়াতকারীদের সুবিধার থেকে অসুবিধা বেশি হয়েছে।

যাতায়াতকারীদের দাবি, ফেরিতে যানবাহনের নির্ধারিত টোলের চেয়ে ৪ থেকে ৫ গুণ টোল আদায় করছে ইজারাদার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ গুনেরও বেশি টোল আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া নির্ধারিত সময় ফেরি চলাচলের করছে না। ফলে অনেক সময় সাধারণ যাত্রী ও যানবাহনগুলো ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অনেকের আবার বাধ্য হয়ে প্রমত্তা বলেশ্বর নদী খেয়া পারাপার হতে হয়। এতে একদিকে অর্থ ও অপরদিকে সময় নষ্ট হয়। এ থেকে পরিত্রাণ চান যাত্রীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিএনজিচালিত অটোরিকশার নির্ধারিত টোল ১৫ টাকার স্থলে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। মোটরসাইকেলের নির্ধারিত টোল ৫ টাকার স্থলে ২০ থেকে ২৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য যানবাহন থেকেও বাড়তি টোল আদায় করা হচ্ছে।

ফেরির যাত্রী সোহরাব হাওলাদার বলেন, একদিন আসে তিন ট্রিপ দেয়, আবার দুইদিন পরে কয় ফেরি নষ্ট হয়েছে। এতদিন ছাড়ত ৬টায়, এখন আবার কয় ৮টায় ছাড়বে। কিন্তু যাত্রী ও চালকরা তো আসবে ৬টায়।

মঠবাড়িয়া এলাকার অটোভ্যান চালক হারুণ অর রশীদ বলেন, প্রতিমাসে কয়েকবার মঠবাড়িয়া থেকে অটোতে আসতে হয় রায়েন্দায়। ফেরি চালুর প্রথম দিকে নিত ৫০ টাকা। কিছুদিন পরে ৭০ টাকা, এখন নিচ্ছে ১২০ টাকা।

শরণখোলা সরকারি ডিগ্রি কলেজের স্নাতক (সম্মান) ২য় বর্ষের তনিমা আক্তার শিক্ষার্থী বলেন, ফেরির সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে সময় ঠিক থাকে না। এখানে এসে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অনেক সময় আমরা সামান্য টাকা নিয়ে আসি, ৫০ টাকা দিয়ে ট্রলারে পার হওয়ার মতো সুযোগ আমাদের থাকে না। যার ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রলার পার হতে হয়।

মোটরসাইকেল চালক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘ফেরি অনেক সময় আগে ছেড়ে দেয়, আবার অনেক সময় আছে যে, ১২ টায় ছাড়ার কথা থাকলে ছাড়ে দেড়টায়। এছাড়া মোটরসাইকেল পারাপারে ৫ টাকা টোল থাকলেও, ফেরিতে আমাদের ২০ টাকা, অনেক সময় ৩০ টাকাও দিতে হয়। আমরা চাই নির্ধারিত সময় ফেরি চলাচলের পাশাপাশি সরকারি নির্ধারিত টোল আদায় করা হোক। তাইলেই আমরা এই ফেরির সুবিধা ভোগ করতে পারব। এখন মনে হয় ফেরি গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজমল হোসেন মুক্তা বলেন, দুই উপজেলার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য ফেরি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু ইজারাদার ইচ্ছেমতো ফেরি চালাচ্ছে। তাছাড়া টোল বেশি আদায় করছে। ফেরির সুবিধা মানুষকে দিতে হলে, ইজারাদারের জুলুম বন্ধ করার দাবি জানান তিনি।

পিরোজপুর সড়ক বিভাগের কাছ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ইজারা নেওয়া ফারুক তালুকদারের প্রতিনিধি সাদ্দাম তালুকদার সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

ফেরির ইজাজাদার মেসার্স তালুকদার স্টোরের পক্ষে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আসলে ফেরিতে কোনো যানবাহনের কাছ থেকে অতিরিক্ত টোল আদায় করা হয় না। নষ্ট বা যান্ত্রিক ত্রুটি থাকলে, ফেরি চলাচলের সময় হেরফের হয়।’

পিরোজপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ বলেন, ‘ফেরিতে অতিরিক্ত টোল আদায়ের কোনো অভিযোগ আমার কাছে নেই। যদি অভিযোগ পাই তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যাত্রীদের সতর্ক হওয়ার জন্য দুইপাশের ঘাটে এবং ফেরিতে সরকার নির্ধারিত টোলের তালিকা ঝুঁলিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন