জাতীয় ডেস্ক:
যশোরে ঈদ পরবর্তী প্রথম হাটে চামড়ার ব্যাপক আমদানি হয়েছে। বেচাকেনাও চলছে জমজমাট। তবে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রি করতে পারেননি তারা। এতে লোকসান গুণতে হচ্ছে।
শনিবার (১ জুলাই) যশোরের রাজারহাট চামড়ার মোকামে ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
যশোরের রাজারহাট। দেশের বৃহত্তম চামড়ার মোকাম। ঈদ পরবর্তী প্রথম হাটে চামড়ার ব্যাপক আমদানি হয়েছে। বেচাকেনাও জমজমাট।
সরেজমিনে চামড়ার মোকাম ঘুরে দেখা যায়, যশোরসহ খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা হাটে চামড়া নিয়ে এসেছেন। ছাগল ও গরুর চামড়া পৃথক করে স্তূপ করে রেখেছেন তারা। পছন্দ অনুযায়ী চামড়া ক্রয় করছেন স্থানীয় ও বাইরের আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
তবে চামড়ার বাজার দরে হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, গ্রামগঞ্জ থেকে কেনা চামড়া সংরক্ষণে লবণ খরচ বেড়েছে। ক্রয় মূল্য ও লবণ খরচ যোগ করে একটি চামড়ার যে দাম দাঁড়িয়েছে; সেই দামে বিক্রি করতে পারছেন তারা।
হাটে এ দিন ছাগলের চামড়া প্রতি পিস ১০টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হয়েছে। আর গরুর চামড়া ৪০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দাবি, লবণ ও শ্রমিক খরচ বাড়তি হওয়ায় অনেকের পুঁজি বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
নড়াইলের জয়ন্ত কুমার নামে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী বলেন, ৩৫ টাকা দরে কাঁচা চামড়া কিনেছি। সেই চামড়ায় লবণ ও শ্রমিক খরচ মিলিয়ে ৪৫ টাকা খরচ হয়েছে। ঈদের দুই দিন পর চামড়া হাটে নিয়ে এসে দাম পাচ্ছি ২৫ থেকে ৩০ টাকা ফুট। প্রতি চামড়াতে ১৫ থেকে ২০ টাকা লস হচ্ছে।
যশোরের অভয়নগর থেকে আসা সাগর আলী বলেন, আজকের হাটে ২০০ পিস গরু ও ১০০টি ছাগলের চামড়া এনেছি। গরুর চামড়া ৭০০ টাকা দরে আর ছাগলের চামড়া ২০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। গরুর চামড়া প্রতি খরচ বাদ দিয়ে ১০০ টাকা করে লোকসান হয়েছে। গড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লোকসান হবে। পরের হাটে দাম না পেলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
মণিরামপুরের ব্যবসায়ী হরেন বিশ্বাস বলেন, হাটে ৫০০ পিস গরুর চামড়া এনেছিলাম। আজকের হাটে বড় চামড়া বিক্রি করেছি ৮০০ টাকা এবং ছোটগুলো ৪০০ টাকা দরে। ৫০টি চামড়া বিক্রি হয়নি।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অদক্ষতার কারণেই লোকসান গুনছেন। খারাপ মানের চামড়া বেশি দামে ক্রয় করায় মোকামে এসে ধরা খাচ্ছেন। বাজার মন্দ নয়, সরকারি নির্ধারিত দামেই চামড়া বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় আড়তদাররা বলছেন, সরকারি চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও চামড়ার মান নির্ধারণ করে দেননি। এজন্য পাইকারি ব্যবসায়ীরা মান যাচাই করেই চামড়ার দাম নির্ধারণ করছেন। যারা ভালো মানের চামড়া এনেছেন, তারা দামও ভালো পাচ্ছেন।
আড়তদার হাসু মিয়া বলেন, ঈদের দিন দুপুর থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত তিন হাজার গরুর চামড়া কিনেছি। মানভেদে ২০০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে চামড়া কিনেছি। ৩০ ফুটের একটি গরুর চামড়া সংরক্ষণ করতে ৫ কেজি লবণ লাগে। এ বছর লবণের দাম বেশি। সংরক্ষণ খরচ বেশি পড়ে যাচ্ছে। ট্যানারির মালিকেরা তো বেশি দাম দেবে না। যে কারণে বেশি দামে চামড়া কেনাও যাচ্ছে না।
যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দীন মুকুল বলেন, শনিবার ১৫ হাজার গরু ও ছাগলের চামড়া এসেছ। যা কোটি টাকায় বেচাকেনা হয়েছে।
বাজারে কোন সিন্ডিকেট নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই বেচাকেনা হচ্ছে। চামড়া ভারতে পাচার হওয়ারও কোন সুযোগ নেই। প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। চামড়া খাতকে চাঙ্গা করতে হলে তৃণমূলের ব্যবসায়ীদের ঋণ সুবিধা ও কাচা চামড়া রফতানির উদ্যোগ নিতে হবে।