হোম অন্যান্যসারাদেশ যশোরে ভবদহ অঞ্চলে আবারও জলাবদ্ধতা

যশোরে ভবদহ অঞ্চলে আবারও জলাবদ্ধতা

কর্তৃক
০ মন্তব্য 86 ভিউজ

রিপন হোসেন সাজু, মণিরামপুর (যশোর) :
যশোরের ভবদহ অঞ্চলে আবারও জলাবদ্ধতার দেখা দিয়েছে। জলাবদ্ধতা যেন পিছু ছাড়ছে না যশোর ভবদহ অঞ্চলের মানুষের। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য তৈরি বিল খুকশিয়ার জোয়ারাধার (টিআরএম) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ১০ বছরেও বিল কপালিয়ায় প্রস্তাবিত জোয়ারাধার চালু করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এই অবস্থায় জোয়ারের সঙ্গে আসা পলি জমে এই অঞ্চলের পানিনিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম শ্রী, হরি ও টেকা নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

এলাকার ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ ও ভোগ করছে জলাবদ্ধতা , জোয়ারাধার চালু না হাওয়ার কারণে আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগেই পলি জমে ওই ৩টি নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে পড়ছে। এখন বৃষ্টির পানি জমে বাড়েদা, বাজুকুলটিয়া, মশিয়াহাটি, হাটগাছা, ডুমরতলা কয়েকটি ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে । জলাবদ্ধতা যেন পিছু ছাড়ছে না যশোর ভবদহ অঞ্চলের মানুষের। ভবদহ সুইচ গেট দিয়ে পার হয় ২৭ টা বীলের পানি। কিন্তু নানা কারণে অনাকারণে এ সুইচ গেট আজ ভবদহবাসীর কাছে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বীলের পানি নামতে পারেনা ভবদহ নদী দিয়ে কারণ নদীতে পলি জমে,নদীর তলদেশ উচু হয়েছে। ফলে এ সকল বীলের পানি নামতে পারে না। সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।

যশোরে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি বলেছেন , ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে টিআরএম প্রকল্পের বিকল্প নেই।।তিনি বুধবার (১২ আগষ্ট) বিকেলে যশোরের অভয়নগরে ভবদহের ২১ ভেন্ট সুইসগেট চত্বরে ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসন শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ইতি পূর্বে নানা প্রকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে ভবদহ সংষ্কারের জন্য কিন্তু তা কোন কাজে আসেনী,অন্যদিকে নদী পরিণত হয়েছে খালে। ফলে হালকা বর্ষাতেই সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় , বাড়েদা, ,বাজে কুলটিয়া মশিয়াহাটি, হাটগাছা, ডুমরতলা গ্রাম ঘুরে দেখা যায় প্রায় অর্ধ শতাধিক বাড়িতে ইতি মধ্য পানি উঠেছে। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সমন্বায়ক কানু বিশ্বাস জানান পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নিতে চলেছে,এখনই যদি বাড়িতে পানি উঠে পড়ে তবে জলাব্ধতার হতে বেশি দেরি নাই, ভবদহ পানি নিষ্কাশণ সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রণজিত বাওয়ালী জানান একটি মহল ভবদহে নানা প্রকার ব্যাসার প্রতিষ্ঠানে রুপান্ত্রিত করেছে,সকল বাধা অতিক্রম করে টি আর এম সিস্টেম চালু না করতে পারলে আমরা স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার হব। তাই আমাদের এখনই টি আর এম এর ব্যবস্থা করতে হবে।

যশোর ও খুলনার ৩৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকার ১০ লাখ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার নাম ভবদহ সুইসগেট। ভবদহ সমস্যার সমাধানের নামে প্রজেক্টের পর প্রজেক্ট গ্রহণ করা হলেও হয়নি কাজের কাজ। বর্তমানে ভবদহ সুইসগেটের ২১ কপাটের মধ্যে ১৮ কপাটই পলি জমে বন্ধ। স্থানীয়দের ধারণা, সংস্কার না হলে প্রতিবারের মত বর্ষা মৌসুমে ভবদহ অঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে। পলি পড়ে এই অঞ্চলের মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্য হারিয়েছে। জোয়ারের সময় হাঁটুপানি হলেও ভাটার সময় পুরোটাই শুকিয়ে যায়। আবারও ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এলাকাবাসীর, তাছাড়া অতিরিক্ত বর্ষা হলে,যশোরের তিনটি উপজেলার ১০ লক্ষাধিক মানুষ জলাবদ্ধতার মধ্যে পড়বে।

প্রতি বর্ষা মৌসুমে পানির কাছে হেরে যাচ্ছে যশোরের ভবদহ অঞ্চলের মানুষ। খেতের ফসল, ঘেরের মাছ সবই কেড়ে নিয়েছে এই পানি। কেড়ে নিয়েছে থাকার জায়গাটুকুও। বর্ষা মৌসুমে কবর দেওয়ার জায়গাও পাওয়া যায় না। সর্বগ্রাসী ভবদহ ভেঙেচুরে চুরমার করে দিয়েছে লাখো পরিবারের সাজানো-গোছানো ঘর-গৃহস্থালি। জনগণের সহমত পক্ষান্তরে সরকারি অর্থ লোপাটের কারখানা হিসেবে পরিচিত হয়েছে যশোরের দুঃখ ভবদহ।

জানা গেছে, জয়েন্ট পাকিস্তান আমলের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ভবদহ সুইসগেট। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইযুব খানের শাসনামলে সবুজবিপ্লব বাস্তবায়নের জন্য যশোরের মনিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর ও সদর উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া, ফুলতলা ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় এক লাখ ২৮ হাজার হেক্টর জমি লবণাক্ততার হাত থেকে রক্ষার জন্য ২৭টি বিলের পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনে ভবদহ সুইসগেট নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিলো। নেহালপুর ইউনিয়নসংলগ্ন টেকা-মুক্তেশ্বরী নদীর ওপর ভবদহ নামক স্থানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পানি উন্নয়ন বোর্ড ভবদহ সুইসগেট নির্মাণ করে (১৯৬২-৬৩)। তখন এলাকায় ব্যাপক ফসল হতে থাকে। ১৯৮২ সালে প্রথম সুইসগেটে জোয়ারের পানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় নদীর তলদেশে পলিমাটি জমতে থাকে। তখন থেকে শুরু হয় ব্যাপক ফসলহানি। রাস্তাঘাট ও স্কুল-কলেজে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সামাজিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগব্যবস্থাও ভেঙে পড়ে। তখন থেকে ভবদহের দুঃখ শুরু হয়।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন