হোম জাতীয় মেডিকেলের প্রশ্নফাঁস: গ্রেফতার সাত চিকিৎসক যেখানে কর্মরত ছিলেন

জাতীয় ডেস্ক:

প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ২০২০ সালের একটি মামলায় তদন্তে নেমে সাতজন চিকিৎসকসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গত ৩০ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ ও বরিশাল জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

রোববার (১৩ আগস্ট) মালিবাগ সিআইডির সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত আইজিপি সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ডা. ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধান (৫০), ডা. সোহেলী জামান (৪০), ডা. মো. আবু রায়হান, ডা. জেড এম সালেহীন শোভন (৪৮), ডা. মো. জোবাইদুর রহমান জনি (৩৮), ডা. জিল্লুর হাসান রনি (৩৭), ইমরুল কায়েস হিমেল (৩২), জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া মুক্তার (৬৮), রওশন আলী হিমু (৪৫), আক্তারুজ্জামান তুষার (৪৩), জহির উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী (৪৫), আব্দুল কুদ্দুস সরকার (৬৩)।
গ্রেফতার চিকিৎসকরা যেখানে কর্মরত ছিলেন

ডা. ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধান (৫০)। তিনি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম মাস্টার মাইন্ড। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ফেইম নামে একটি কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়ান। কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁস করে গত ২০ বছরে অবৈধভাবে শত শত শিক্ষার্থীকে মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন। ডা. ময়েজ প্রশ্ন ফাঁস ও মানিলন্ডারিংয়ের মামলাতে এজাহারনামীয় আসামি। তিনি চিহ্নিত ছাত্র শিবির নেতা এবং পরবর্তীতে জামায়াতের ডাক্তার হিসেবে পরিচিত।

প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের আরেক অন্যতম সদস্য ডা. সোহেলী জামান (৪০)। তিনি জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ফেইম নামক কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে স্বামী ডা. ময়েজের সঙ্গে এই চক্রে জড়ান।

চক্রের আরেক সদস্য ডা. মো. আবু রায়হান। তিনি ঢাকা ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০০৫ সালে প্রশ্ন পেয়ে ঢাকা ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হন তিনি। পরে এই প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি প্রাইমেট নামে একটি কোচিং সেন্টার চালাতেন। এছাড়া কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রাকটিস করেন।

ডা. জেড এম সালেহীন শোভন (৪৮) মেডিকেল প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম মূলহোতা। প্রশ্ন ফাঁস মামলায় তিনি এজহারনামীয় আসামি। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করে থ্রি ডক্টরস নামে একটি কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়ান। তিনি ২০১৫ সালে একবার র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। ডা. সালেহীন শোভন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ছাত্রদলের পদধারী নেতা ছিলেন।

মেডিকো নামে একটি ভর্তি কোচিং সেন্টারের মালিক ডা. মো. জোবাইদুর রহমান জনি (৩৮)। তিনি ২০০৫ সাল থেকে এই চক্রে জড়িত। এই কারবার করে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন। প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে শত শত শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। ডা. জোবাইদুর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। পরবর্তীতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি যুবদলের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক।

চক্রের আরেক সদস্য ডা. জিল্লুর হাসান রনি (৩৭)। তিনি জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালের (নিটোর) চিকিৎসক। তিনি ২০০৫ সাল থেকে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। ২০১৫ সালে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে তিনি রংপুর থেকে র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। রংপুর মেডিকেলে অধ্যয়নকালে তিনি ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। বর্তমানে তিনি ড্যাবের সঙ্গে জড়িত এবং আহত বিএনপি নেতাদের চিকিৎসায় গঠিত টিমের একজন চিকিৎসক।

আরেক সদস্য ডা. ইমরুল কায়েস হিমেল (৩২)। তিনি এই চক্রের সঙ্গে জড়ান তার বাবা আব্দুল কুদ্দুস সরকারের মাধ্যমে। তিনি ময়মনসিংহের বেসরকারি কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করেন। ২০১৫ সালে টাঙ্গাইলের আকুর টাকুর পাড়ায় নিজ শ্বশুর বাড়িতে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পড়িয়ে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে অবৈধভাবে মেডিকেলে ভর্তি করান।

এ বিষয়ে সিআইডি প্রধান জানান, ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র পেয়ে যারা চিকিৎসক হয়েছেন বা বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে পড়ছেন তাদের অনেককেই চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগিরই তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সিআইডি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন