আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র একটি গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সংঘর্ষের ভয়াবহতা রক্ষা পেতে গত বুধবার থকে ১০ হাজারের বেশি বার্মিজ নাগরিক দেশটি ছেড়ে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছেন। থাই কর্তৃপক্ষের বরাতে আজ শুক্রবার (৭ এপ্রিল) এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
প্রতিবেদনে ব্রিটিশ গণমাধ্যমটি বলছে, জান্তা সমর্থিত মিলিশিয়া গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা শে কোক্কো শহর থেকে পালাচ্ছে সেখানকার বাসিন্দারা। যদিও সংঘর্ষের বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি জান্তা বাহিনী।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নোবেলজয়ী নেতা অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই দেশটি বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত। সামরিক বাহিনীর শাসন ব্যাপক সশস্ত্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। জান্তা সরকারের ক্ষমতার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও তারা এখনও দেশটির বিশাল এলাকায় কর্তৃত্ব আরোপ করতে পারেনি।
সর্বশেষ কয়েক দশক ধরেই মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকাগুলোতে সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে লিপ্ত দেশটির সামরিক বাহিনী। সম্প্রতি অভ্যুত্থানবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেসের (পিডিএফ) সঙ্গে সামরিক বাহিনীর লড়াই বেড়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য মতে, জান্তা সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে মিয়ানমারের কয়েক হাজার নাগরিক নিহত হয়েছে, বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১৪ লাখ বাসিন্দা। দেশটির মোটর জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের সাহায্যের প্রয়োজন।
বিবিসি বলছে, গত বুধবার শে কোক্কোতে অবস্থিত সামরিক বাহিনী বাহিনীর চেকপোস্টে হামলা চালায় সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী ক্যারেনি ন্যাশনালিটিজ ডিফেন্স ফোর্স (কেএনডিএফ)। এরপরেই জান্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের নতুন সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। নতুন সহিংসতায় দুপক্ষের অন্তত ৮০ যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।
নতুন করে থাইল্যান্ডে যাওয়া বার্মিজরা দেশটির সীমান্তবর্তী মাও সেত ও মে রামাত অঞ্চলে রয়েছেন। ওই দুটি অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মঠ ও রাবাম ফার্মগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন তারা। সেখানে দ্রুত মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছে অধিকার কর্মীরা।
মাও সেত অঞ্চলের একটি মঠে ৫০০-এর বেশি মিয়ানমার নাগরিকরা আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে স্বেচ্ছাসেবীর দায়িত্ব পালন করা বার্মিজ নাগরিক থি হাতওয়ে বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদে আমাদের আরও দাতা প্রয়োজন।’
থাইল্যান্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় কারেন প্রদেশের মায়াওয়াদ্দি শহরের আশপাশের অঞ্চলকে কেন্দ্র করে বর্তমানে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। মিয়ানমারের এই অঞ্চলটি থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী এলাকা।
এদিকে, আগামী দুসপ্তাহের জন্য মায়াওয়াদ্দি ও কাওকারেয়িক যা এশিয়ান হাইওয়ে নামে পরিচিত সীমান্তবর্তী রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছে কেএনএলএ। আর শে কোক্কোর সীমান্তবর্তী এলাকায় সামরিক বাহিনী ও বর্ডার গার্ড ফোর্স মোতায়েন করেছে জান্তা সরকার। ওই এলাকার লোকজনকে বাড়ি থেকে না বের হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছে তারা।
সম্প্রতি সময়ে বিরোধীদের দমনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক ও গ্রামে অভিযান চালাচ্ছে জান্তা বাহিনী। গত সপ্তাহের প্রথম দিকে ভার্চুয়ালিভাবে ক্লাস নেওয়ায় ১৫ শিক্ষককে আটক করেছিল সামরিক বাহিনী। ওই স্কুলগুলো পরিচালিত হতো ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) নামে পরিচিত মিয়ানমারের ছায়া সরকারের মাধ্যমে।