অনলাইন ডেস্ক :
ভূমধ্যসাগরে অভিবাসন প্রত্যাশীদের নৌকাডুবির ঘটনায় ১৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। তাদের উদ্ধার করেছে ইতালির কোস্টগার্ড। গতকাল সোমবার (১৩ মার্চ) তাদের উদ্ধার করে ইতালি উপকূলে নেওয়া হয়। অভিবাসন প্রত্যাশীদের উদ্ধার নিয়ে ইতালি প্রশাসনের সমালোচনার মধ্যেই এ খবর এলো। খবর রয়টার্সের।
ইতালির কোস্টগার্ড বলছে, লিবিয়া উপকূল থেকে ছেড়ে আসা নৌকাটি বৈরি আবহাওয়ায় রোববার ডুবে যায়। এ ঘটনায় ৩০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সম্ভবত তারা মারা গেছেন।
এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ইতালির ক্যালিব্রিয়া উপকূলে অভিবাসন প্রত্যাশীদের নৌকাডুবির ঘটনায় ৭৯ জন মারা গেছে। এরপর থেকে এ পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরে অভিবসান প্রত্যাশীদের এটিই বড় দুর্ঘটনা।
সাগরে ভাসমান অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন অ্যালার্ম ফোন এ ঘটনার জন্য ইতালির প্রশাসনকে দুষছে। তাদের দাবি, গত শনিবার নৌযানটি বিপদে পড়েছে বলে জানানোর পরও ইতালি কর্তৃপক্ষ সময়মতো সেখানে তাদের কোস্টগার্ডকে পাঠায়নি।
গত রোববার বিবৃতিতে অ্যালার্ম ফোন বলে, ‘ইতালি কর্তৃপক্ষ ভূমধ্যসাগরে ভাসমান এসব অভিবাসন প্রত্যাশীদের এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। তারা তাদের ইতালিতে নিতে চায়নি। লিবিয়ার কোস্টগার্ড তাদের উদ্ধার করবে ও তাদের দেশে ফিরিয়ে নিবে এমন চিন্তায় তারা সময় ক্ষেপণ করেছে।’ তবে, ইতালির কোস্টগার্ড বলেছে, নৌযানটি যেখানে ডুবেছে, তা তাদের আওতাভুক্ত এলাকা নয়। আর ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি বলেছেন, ‘নৌযানটি ডুবে যাওয়া ঠেকাতে সাধ্যমতো ব্যবস্থা নিয়েছে রোম।’
দাতব্য সংস্থা মেডিটারেনিয়া সেভিং হিউম্যানসের তথ্য মতে, লিবিয়ার বেনগাজি বন্দর থেকে প্রায় ১১০ মাইল উত্তর-পশ্চিমের সাগর এলাকায় নৌযানটি ডুবে গিয়েছিল।
এই যৌথ উদ্ধার অভিযানে যুক্ত লিবিয় কোস্টগার্ডের এক ঊর্ধ্বতনের সঙ্গে ফোনের একটি কথোপকথন প্রকাশ করে জার্মান ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা সি-ওয়াচ। এতে দেখা যায়, ওই সময় পর্যন্ত বেনগাজি থেকে কোনো টহল বোট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়নি।
এদিকে, উদ্ধার অভিযানে সাহায্য করতে ভূমধ্যসাগরের ওই এলাকায় থাকা একটি বাণিজ্যিক জাহাজকে অনুরোধ করেছিল রোম। তবে, অভিবাসন প্রত্যাশীদের নৌযানটি থেকে বাণিজ্যিক জাহাজে মানুষদের নেওয়ার সময় এটি ডুবে যায়।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ক্যালিব্রিয়া উপকূলের অদূরে নৌকাডুবির ঘটনার পর থেকেই ইতালির উদ্ধার জাহাজ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই ইস্যুটি গত অক্টোবরে ক্ষমতায় আসা ইতালির ডানপন্থী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। কারণ, তারা ক্ষমতায় এসে অভিবাসন প্রত্যাশীর সংখ্যা কমানো নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
চলতি বছর অর্থাৎ, ২০২৩ সালের এ পর্যন্ত সাগর পথ পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইতালিতে ঢুকেছে ২০ হাজার অভিবাসী, যা ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় তিনগুণ বেশি। শুধু এ মাসের এক থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত ইতালিতে সাগর পথ দিয়ে প্রবেশ করেছে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি অভিবাসী।
হঠাৎ করে অভিবাসন প্রত্যাশীর সংখ্যা বাড়ার কারণ হিসেবে রুশ ভাড়াটে সৈন্যদল ওয়াগনার গ্রুপকে দায়ী করছে ইতালির ডানপন্থী সরকার। তাদের দাবি, গ্রুপটি লিবিয়াসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জাহাজ চলাচল করাচ্ছে। ইউক্রেনকে সহায়তা করায় তারা ইতালিতে অভিবাসীদের অবৈধভাবে প্রবেশ করাতে চাচ্ছে।