হোম জাতীয় বিলুপ্তির পথে উরুন গাইন

জাতীয় ডেস্ক:

বড় বট গাছের গুল আর শাল গাছের ডাল দিয়ে তৈরি হতো উরুন গাইন। এখন সেই বট গাছও নেই আর নেই শাল গাছের সেই শক্তিশালী ডালও। হয়তো এভাবেই একদিন সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হবে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য উরুন গাইন।

সরেজমিনে জানা যায়, বিয়ের আনন্দ মানেই গায়ে হলুদ। আর এ কাঁচা হলুদ বাটার জন্য গ্রাম বাংলার গৃহবধূদের কাছে জনপ্রিয় উরুন গাইন। ঐতিহ্য ধরে রাখা আর সবাই মিলে এক সাথে হলুদ বাটা যায়, তাই আজও উরুনের চাহিদা রয়েছে গ্রাম বাংলার গৃহবধূদের কাছে।

এক সময় প্রতিটি বাসা বাড়িতে মিলতো উরুন। কিন্তু সিলপাটা ও নানা রকম আধুনিক যন্ত্রপাতি এসে কমে যায় উরুনের চাহিদা। তবে উরুনে অনেক বেশি সুবিধা থাকায় শহরের অনেক বাসা বাড়িতে এখনও রয়েছে উরুন গাইনের ব্যবহার। বাড়ির গৃহবধূরা বলছে, উরুনে যে কোনো কাজ করতে সময় কম লাগার পাশাপাশি উরুনের তৈরি জিনিসের স্বাদ অনেক বেশি।

উরুন ব্যবহারকারী ময়না ও জেলি জানান, চালের আটা উরুনে গুঁড়া করে সে আটা দিয়ে পিঠা তৈরি করলে খুব সুস্বাদু হয়। এছাড়া বিভিন্ন মসলা গুড়া ও ভর্তা করা অনেক সুবিধা।

বিয়ে বাড়িতে হলুদ বাটা বা গুঁড়ো করার কাজে ব্যবহার হচ্ছে উরুন গাইন। ছবি: সময় সংবাদ

উরুন কিনতে আসা আব্বাস আলী জানান, হাট বাজারগুলোতে আগের মতো আর উরুন পাওয়া যায় না। দু’এক জন কারিগর ৮ থেকে ১০টা উরুন নিয়ে বসে থাকলেও দাম অনেক বেশি। এখন ছোট্ট একটা উরুনের দাম ১ হাজার টাকা। অথচ আগে ২ থেকে ৩ শত টাকায় পাওয়া যেত।

উরুন বিক্রেতা মতাব্বর জানান, বেশি দামে গাছ কিনে উরুন বানাতে হয়। আবার শ্রমিক মজুরি অনেক বেশি। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে উরুন বিক্রি করতে হচ্ছে। তাছাড়া উরুনের চাহিদা অনেক কমে গেছে।

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে এক সময় প্রতিমাসে উরুন বিক্রি হতো এক হাজারের অধিক। কিন্তু বর্তমানে মাসে বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৯০ টি।

উরুনের কারিগর কাশেম আলী জানান, একত্রিত হয়ে এক সময় এখানে প্রায় ২৫টি পরিবারের কারিগড়রা তৈরি করতেন উরুন গাইন। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন তৈরি করছেন মাত্র তিনজন। ক্রেতাদের চাহিদা না থাকায় দিন দিন কমে যাচ্ছে উরুন তৈরির কারিগরের সংখ্যা। নতুন করেও কোনো কারিগর আগ্রহ প্রকাশ করছে না উরুন তৈরিতে। ফলে এ পেশার পুরাতন কারিগররা চিন্তিত ঐতিহ্যবাহী উরুনের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন