হোম জাতীয় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাওয়া ভবনে টাকা দিতে হতো: মৎস্য সম্পদমন্ত্রী

জাতীয় ডেস্ক:

আগে বিদেশি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এসে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তো। হাওয়া ভবনে টাকা দেয়া ছাড়া তারা কোনো ব্যবসা করতে পারতো না বলে অভিযোগ করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

শনিবার (১০ জুন) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘অ্যাকুয়াকালচার অ্যান্ড সি-ফুড শো ২০২৩’ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‌একটা সময় বাংলাদেশে বিনিয়োগকারীরা আসতে সাহস পেতেন না, তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় টাকা দিতে হতো। হাওয়া ভবনে টাকা দিতে হতো। কিন্তু সেই অবস্থার পরিবর্তন এসেছে। এখন বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে।

বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন ভালো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন দাবি করে শ ম রেজাউল আরও বলেন, এখানে যারা বিনিয়োগ করতে আসেন, তাদের এখন উৎসে করে ছাড় দেয়া হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। শুধু দেশের বাইরে না, এখানে যারা উৎপাদন করেন, তাদেরও সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে।

বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দরজাও উন্মুক্ত উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এখানে কেউ বিনিয়োগ করতে এলে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আমরা তো অনেক দেশে যাই, একজন মন্ত্রীকে পাওয়া কঠিন। আর বাংলাদেশ এমন চমৎকার রাষ্ট্র, যারাই আগ্রহ করে আসেন, তাদের সঙ্গে শুধু মন্ত্রী-সচিবরাই না, খোদ প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন, সহযোগিতা করেন।’

বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে বিদেশের বাজার ধরা সম্ভব উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশে সারা বিশ্বের সবচেয়ে সুস্বাদু মাছ বাংলাদেশে উৎপন্ন হয়। একটা সময় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান উৎস ছিল জনশক্তি রফতানি। একটা সময় ছিল সোনালী আঁশ, তারপর এলো তৈরি পোশাক খাত। মৎস্য সম্পদ নিয়েও আমাদের সামনে অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

“এই খাতে এগিয়ে যেতে হলে আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। বেসরকারি ও সরকারি সবাই মিলে কাজ করতে হবে। পৃথিবীও আগের মতো বিভাজিত নেই, বৈশ্বিক গ্রামে পরিণত হয়েছে। সবাই আমাদের উন্নয়ন অংশীদার হবে,” যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন আরও বলেন, বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ একটি চমৎকার জায়গা। বিনিয়োগবান্ধব এমন জায়গা দুনিয়ায় খুব কমই আছে। এখানে সহজে শ্রমিক পাওয়া যায়, প্রাকৃতিক সম্পদ, কাঁচামাল আছে, সরকারি ব্যবস্থাপনা আছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বাইরের বিনিয়োগকারীদের আলাদা করে জায়গা দেয়া হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য যাতে সবাই এখানে এসে বিনিয়োগ করে। যার লাভ সবাই পাবেন।

“আমাদের এখন মৎস্যখাতের বহুমুখী ব্যবহারের জায়গায় আসতে হবে। গতানুগতিক উৎপাদন কিংবা মাছ চাষ করে খাওয়াই শুধু না, বহুমুখী ব্যবহারের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সে জন্য কাঁচামাল আছে এখানে। উৎপাদনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আছে। আর সেটা প্রক্রিয়াজাত করণের সুবিধাও দিচ্ছি আমরা,” বলেন মন্ত্রী।

এ সময়ে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আসলে উৎপাদন ও রফতানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখন একটু ডলারের চাপে আছি। উন্নয়নকে টেকসই করতে হবে। বাংলাদেশ একটি আমদানিনির্ভর দেশ, এখানে রফতানির চেয়ে আমদানি বেশি হয়। যে কারণে আমদানি করতে হলেই বৈদেশিক মুদ্রা অর্থাৎ ডলার খরচ করতে হয়।

এখন রফতানি কীভাবে বেশি করা যায়; তা নিয়ে ভাবতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, রফতানির জন্য তৈরি পোশাক খাতের ওপর বাংলাদেশ অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। রফতানির ৮৫ শতাংশই তৈরি পোশাক খাতের। এটা থেকে মুক্ত হতে না পারলে একটা জায়গায় আবদ্ধ থাকতে হবে আমাদের।

তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ হলো বাজার প্রবেশটা নিশ্চিত করা। আমাদের পণ্য যাতে বিনাশুল্কে বিভিন্ন দেশে ঢুকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বাদে পৃথিবীর সব উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ আমাদের পণ্য বিনাশুল্কে প্রবেশ করতে পারে। ২০২৬ সালে আমরা যখন উন্নয়নশীল দেশ হয়ে যাবো, তখন এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ থেকে বিধিনিষেধ আসবে।

“সুখবর হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশ ও যুক্তরাজ্যসহ ২৮টি অঞ্চলে আমাদের পণ্য ২০২৯ সাল পর্যন্ত বিনাশুল্কে প্রবেশ করতে পারবে। এই সময়ের পরে যেটা হবে, আমরা হয়তো জিএসপি প্লাসের অধীনে যেতে পারব। সেটায় যদি যাই, তাহলে আমরা আরও অনেক বছর বিনাশুল্কে ওই বাজারে ঢুকতে পারব,” বলেন বাণিজ্যসচিব।

তবে তৈরি পোশাক খাত এ সুবিধা পাবে কি না তা নিয়ে ঝুঁকি আছে বলে জানান বাণিজ্যসচিব। তিনি বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এ সংক্রান্ত আইন পাসের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। আমাদের তৈরি পোশাক যাতে এসব দেশে বিনাশুল্কে যেতে পারে, সে জন্য আমরা প্রতিনিয়ত লবিং করে যাচ্ছি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন