হোম অন্যান্যসারাদেশ বাড়ি বাড়ি ধরনা দিচ্ছেন চৌগাছার কলেজ শিক্ষকরা

বাড়ি বাড়ি ধরনা দিচ্ছেন চৌগাছার কলেজ শিক্ষকরা

কর্তৃক
০ মন্তব্য 118 ভিউজ

যশোর অফিস :

চলতি সেশনে এইচএসসিতে এখনো ভর্তি শুরু হয়নি। অথচ করোনার মধ্যেও চলছে চৌগাছার কলেজগুলোর ছাত্র সংগ্রহের প্রতিযোগিতা। নিজের কলেজে ভর্তি করানোর জন্য ছয় সাতজন শিক্ষক দল বেঁধে ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছেন।

শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার ৬৭টি স্কুল ও ২১টি মাদরাসা থেকে মোট তিন হাজার ৫৪৪ জন ছাত্রছাত্রী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে দুই হাজার ৯৫৬ ছাত্র-ছাত্রী পাশ করেছে। এদের মধ্যে ১৫৮ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে । এ উপজেলায় মোট ১১টি কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে একটি সরকারি, চারটি বেসরকারি ডিগ্রি ও অনার্স পর্যায়ের কলেজ আর বাকি ছয়টি এইচএসসি পর্যায়ের। এসব কলেজে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক শাখা মিলে দুই হাজারেরও বেশি আসন রয়েছে।

ভর্তির জন্য এসব কলেজের শিক্ষকরা নিয়মিত দল বেঁধে ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে যাচ্ছেন। তাদের এভাবে দল বেঁধে বাড়ি বাড়ি যাওয়ায় করোনা সংক্রমণ বিস্তৃত হয় কি না তা নিয়ে অভিভাবকরা আতঙ্কিত। করোনার কারণে যারা অন্যের বাড়িতে পর্যন্ত যাচ্ছেন না, তাদের বাড়িতে এভাবে দলে দলে লোকজন আসায় তারা পড়েছেন বিপাকে। আবার কলেজের সম্মানিত শিক্ষক হওয়ায় তারা এ বিষয়ে কিছু বলতেও পারছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সরকারি কলেজের শিক্ষকরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে জিপিএ ৫ ও জিপিএ ৪ পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে যাচ্ছেন। তারা বই, উপবৃত্তি, কলেজের ফান্ড থেকে বৃত্তি, ফ্রি প্রাইভেট, হোস্টেলে থাকাসহ নানা প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন। তবে এসব প্রতিশ্রুতি পরে আর রক্ষা হয় না বলে কলেজের সাবেক ছাত্ররা অভিযোগ করেন।

এবছর এ উপজেলায় নতুন করে চারটি কলেজ এমপিওভুক্ত হয়েছে। এসব কলেজের শিক্ষকরা বলেন, সরকারি কলেজসহ প্রতিষ্ঠিত বড় বড় কলেজের শিক্ষকরা ছাত্র ভর্তিতে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। তাদের চাপে নতুন এমপিওভুক্ত কলেজ বাঁচানোর তাগিদে ছাত্র ভর্তিতে বাড়ি বাড়ি যেতে হচ্ছে।

কলেজগুলোর শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে আসছেন। উদ্দেশ্য কলেজে ভর্তির আবেদনপত্র নিজেরাই পূরণ করে দেওয়া। ছাত্র ছাত্রীরা আবেদনপত্র পূরণ করলে দশটা পর্যন্ত কলেজের নাম দেওয়ার সুযোগ পাবে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কলেজের কোনো শিক্ষক এই কাজটি করলে ভর্তিচ্ছুর সামনে আর কোনো বিকল্প থাকবে না।

রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আতিয়ার রহমান নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘এ বছর গ্রামের স্কুল থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে আমার ছেলে পাশ করেছে। শুনেছি এখনো ভর্তির সময় হয়নি। কিন্তু আমার বাড়িতে কয়েকটি কলেজের চার-পাঁচজন করে শিক্ষক কয়েকবার এসেছেন। আমি তাদের কিছু বলতেও পারছিনে।’

উজিরপুর গ্রামের শিক্ষার্থী সাকিবুল ইসলাম বলে, আমি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাশ করেছি। যশোরে ভর্তি হতে চাই। কিন্তু বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকরা এসে আমাকে আর আমার বাবাকে বার বার নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। বিষয়টা আমার জন্য চরম বিরক্তিকর।’

পাতিবিলা গ্রামের আশাদুল ইসলাম বলে, আমি এ বছর মাদরাসা থেকে পাশ করেছি। আমি মাদরাসাতেই পড়তে চাই। কিন্তু বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকরা আমার বাড়িতে এসে আমাদের বার বার বলছে, মাদরাসায় পড়লে চাকরি হবে না। তারা আমাকে নিজেদের কলেজে নিতে চেষ্টা করছে।

জিসিবি অদর্শ কলেজে অধ্যক্ষ আবু জাফর শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠিত কলেজগুলো যদি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বাড়ি বাড়ি না যেত তাহলে আমরা করোনার এ সময়ে বেরই হতাম না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে কলেজের স্বার্থে আমরা নিজেদের টাকায় এসএসসির ট্রান্সক্রিপ্টের টাকা ও বই-খাতা পর্যন্ত কিনে দিচ্ছি।

চৌগাছা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় কলেজের সংখ্যা এখন অনেক। ভালো ছাত্র ভর্তি করতে অনেকেই বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। তবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র কালেকশন করা ঠিক না। তিনি বলেন, ছাত্র কালেকশনের একটা ভালো দিকও আছে। কালেকশন প্রতিযোগিতার কারণে উপজেলার অনেক গরিব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী খুবই অল্প খরচে লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম রফিকুজ্জামান বলেন, এ পরিস্থিতিতে তারা (শিক্ষকরা) বিষয়টি মোটেও ঠিক করছেন না। সরকার যেখানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার উপর জোর দিচ্ছে সরকার, সেখানে দলে দলে এভাবে কারো বাড়িতে যাওয়া তো কোনোভাবেই ঠিক না। আমি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন