জাতীয় ডেস্ক:
সেবা গ্রহিতাদের কাছে আতঙ্ক আর ভোগান্তির নাম-সার্ভার বন্ধ। কখনো জাতীয় পরিচয়পত্র আবার কখনো জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভার বন্ধ থাকায় সমস্যায় জর্জরিত নাগরিকরা। নিরাপত্তার স্বার্থে বারবার সার্ভার বন্ধ রাখা হয় বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও প্রযুক্তি বিশ্লেষক ও অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল ইসলাম জানান, বারবার সার্ভার বন্ধ করলে নিরাপত্তার বদলে সেবাগ্রহিতাদের দুর্ভোগ বাড়বে। সম্প্রতি সময় সংবাদের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
ফয়সাল আহমেদ নামে এক ব্যক্তি জন্ম নিবন্ধনে থাকা ভুল সংশোধন করতে অনলাইনে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে যান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে। তবে তাকে আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভারে সমস্যা থাকায় সংশোধন সম্ভব না।
শুধু ফয়সাল নন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব বাসিন্দাই কখনো সার্ভার বন্ধ থাকা আবার কখনো নিবন্ধনের জন্য আদায়কৃত ফি’র হিস্যা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় মাসের পর মাস ধরে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ও সংশোধন করতে পারছেন না। ফলে কারও বিদেশ যাত্রা, চিকিৎসা আর ব্যবসাসহ আটক আছে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
এসব সমস্যা তুলে ধরা হলে সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, মেয়র নিবন্ধকের দায়িত্ব পালন করেন; তাই আদায়কৃত ‘ফি’ দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পাওয়ার কথা থাকলেও তা জমা হচ্ছে সরকারি কোষাগারে। এ নিয়ে চলছে দুপক্ষের দ্বন্দ্ব। তবে অল্পদিনের মধ্যেই জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত সমস্যা থেকে নগরবাসী মুক্তি পাবে বলে আশ্বাস দিয়েছে সিটি করপোরেশন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, সার্ভারের জটিলতা, জন্ম নিবন্ধন অর্ন্তভুক্ত করা বা তাদের সার্টিফিকেট প্রদান করা-আমি আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধান করে দিতে পারব। জনগণ সেবা পাবেন।
এদিকে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই দুই মাসে দুই দফায় বন্ধ রাখা হয় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সার্ভার। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ে ১৭১টি প্রতিষ্ঠান ও ১২কোটি নাগরিক। হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি থেকে সার্ভারকে নিরাপদ রাখতেই বারবার সার্ভার বন্ধ করা হচ্ছে বলে দাবি নির্বাচন কমিশনের (ইসি)।
নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, ঝুঁকি থাকলে তো ঝুঁকি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার নেয়ার অধিকার প্রত্যেকের থাকে, সেটা অব্যাহত থাকবে। সার্ভার ডাউন হতে পারে, সাময়িক স্থগিত হতে পারে, অনেক কিছুই হতে পারে।
তবে ঝুঁকি এড়াতে সার্ভার বন্ধ রাখা কোনো সমাধান নয় বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য-প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল ইসলাম।
তার মতে, বন্ধ করার ফলে নিরাপত্তার চেয়ে সেবাগ্রহিতাদের ভোগান্তিই বাড়ে।
তিনি আরও বলেন, কেউ আক্রমণ করল না, কিন্তু আমি আমার সার্ভিসটা সচল রাখতে পারলাম না, এটা কিন্তু নিরাপত্তার দূষণ হচ্ছে। এটা মানে আক্রমণের যেটাকে অসচল করার কথা ছিল, বন্ধ রাখার কথা ছিল সেটা আপনি নিজ থেকে বন্ধ রাখছেন। এখানে হ্যাকারও তো দরকার হচ্ছে না, অ্যাটাকেরও দরকার হচ্ছে না। আপনি আপনার সার্ভিস নিজ থেকে বন্ধ রাখছেন।
সার্ভার নিরাপদ রাখতে শুরু থেকেই রক্ষণাবেক্ষণ ওপর জোর দিয়েছেন এ বিশেষজ্ঞ।