জাতীয় ডেস্ক:
জামালপুরের সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু এক সময় মুদি দোকানদার ছিলেন। তার নানা অপকর্মের চিত্র উঠে এসেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, অভাবের তাড়নায় ইউনিয়নের কামালেরবাতি গ্রামের মৃত শাহেদুল হক মাস্টারের ছেলে বাবু চেয়ারম্যান অতীতে রাজমিস্ত্রির কাজও করেন। রাজনীতির ব্যানারে যুক্ত হয়ে রাতারাতি পাল্টে যায় তার অবস্থা।
সাধুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য আমেনা বেগম বলেন, ‘ও আমারে পরিষদে যাবার দেয় নাই। কোনো কিছু করতে দেয় নাই। ও একটা লুইচ্চা। একাত্তরের যুদ্ধে যত মা বোনের ইজ্জত না গেছে, এই চেয়ারম্যানের সময়ে তার চেয়ে বেশি এই এলাকার মেয়েদের ইজ্জত নষ্ট হয়েছে। স্কুলের গাছ কেটে বাসার ফার্নিচার বানাইছে। পালং খাট বানাইছে। ভারতীয় ইয়াবার ব্যবসা করে। ঢাকা থেকে লোক এনে ডলার দেবে বলে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে। জাল ডলার বিক্রির হোতা বাবু। ও শালিস বৈঠকে টাকা নেয়। টাকা ছাড়া পরিষদের কোনো মিটিং করে না।’
চেয়ারম্যান হওয়ার পর বাবু চেয়ারম্যান সম্পদ গড়ে তুলতে তার আত্মীয় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম ভাঙানো অভিযোগ সাধারণ মানুষের। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিক সুবিধা নিতে হলেও মানুষকে দিতে হতো বাড়তি টাকা। তার ভয়ে এলাকার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে রাজধানী চলে গেছে।
পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ( প্রশাসন) মোখলেছুর রহমান পান্নার চাচাতো ভাই পরিচয় দিয়ে এলাকার মানুষকে জেল খাটিয়েছে।
চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে একে একে নানা অপকর্মের পর তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচারের জেরে বাবু চেয়ারম্যানের আক্রমণে প্রাণ দিতে হয় সাংবাদিক নাদিমকে। এ ঘটনায় দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় বাবু চেয়ারম্যানকে। দল বদল করে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন তালুকদার বাবলু বলেন, বাবু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিসহ মারামারির অভিযোগে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যার তিন দিন পর শনিবার দুপুরে বকশীগঞ্জ থানায় ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেছেন তার স্ত্রী মনিরা বেগম।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে। শনিবার পঞ্চগড় থেকে তাকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
নাদিম হত্যা মামলার ২ নাম্বার আসামি ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাতকে বকশীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তবে এখনও গ্রেফতার হয়নি নাদিমের হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়া রিফাত।
নাদিম হত্যায় চেয়ারম্যান বাবুসহ এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে বাবু ছাড়া অন্যদের পরিচয় জানা যায় নি। গ্রেফতার অন্য ১০ জন চেয়ারম্যান বাবুর অনুসারী বলে জানা গেছে।
পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে নাদিমের ওপর হামলাকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে। পুলিশের পাঁচটি দল মাঠে কাজ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও আটক করা হবে।
সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম অনলাইন পোর্টাল বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমের জামালপুর ও একাত্তর টিভির বকশিগঞ্জ প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বুধবার (১৪ জুন) রাত ১০টার দিকে জামালপুরের বকশীগঞ্জের পাটহাটি মোড়ে মোটরসাইকেল থামিয়ে কিল ঘুষি মারা হয় সাংবাদিক নাদিমকে। এ সময় তাকে টেনে হিঁচড়ে রাস্তার অপর প্রান্তে নিয়ে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে পালিয়ে যায় অপরাধীরা। সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর নেতৃত্বে তার ছেলেসহ কয়েকজন এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
শুক্রবার (১৬ জুন) সকাল ১০টায় উপজেলার বকশীগঞ্জের নূর মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় নাদিমের। বেলা সাড়ে ১১টায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।