হোম অন্যান্য বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিনেও আপত্তি!

বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিনেও আপত্তি!

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 22 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:
নারীদের প্রয়োজন ও সচেতনতা বৃদ্ধির কথা ভেবে একটি কর্নারে প্রাণ- আরএফএল গ্রুপের স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্য ব্র্যান্ড ‘স্টে-সেফ’ স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রদর্শন করা হয়। বইমেলায় কেন ‘গোপন পণ্য’ বিক্রি করা হচ্ছে, সে নিয়ে আপত্তির ভিত্তিতে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান প্রদর্শনী ও বিক্রি বন্ধ করে অন্য কোনও পণ্য সেখানে উপস্থিত করতে প্রাণ- আরএফএলকে চিঠি দেয়। এর ভিত্তিতে রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) প্রতিষ্ঠানটি মেলা থেকে তাদের পণ্যটি তুলে নেয়। বাংলা একাডেমি বলছে, ‘বই ছাড়া অন্যকিছু বিক্রির সুযোগ বইমেলায় নেই বিধায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে’, তবে চিঠির বিষয়ে তারা কিছু জানে না। আর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে— বাংলা একাডেমির সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তারা চিঠি দিয়েছে। আর ‘স্টে-সেফ’ নামে পণ্যের বিষয়ে এর উৎপাদক প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয়— ‘মেলায় এটি বিক্রি করা হচ্ছিল, এমন নয়। এটি ফ্রি দেওয়া হচ্ছিল।’

রবিবার ফেসবুকে চিঠিটি ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। চিঠিতে লেখা আছে, ‘‘প্রাণ- আরএফএল গ্রুপের নারী ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্য ব্র্যান্ড ‘স্টে-সেইফ’ বইমেলা প্রাঙ্গণে দুটি স্টল পরিচালনা করছে। ১১ ফেব্রুয়ারির পর কয়েক দফায় ন্যাপকিনকে গোপন পণ্য বলে আখ্যা দিয়ে এর প্রকাশ্য প্রদর্শনী বা বিক্রি বন্ধে দাবি ওঠে। পরপর কয়েকদিন অনেক মানুষ দলগতভাবে এসে এই দাবি জানিয়ে যায়। বাংলা একাডেমি, পুলিশ, আনসারসহ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ভলান্টিয়ারদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি ঠান্ডা করা হয়। ১৩ ফেব্রুয়ারি স্টল দুটি খুলে দিলে কিছু গ্রুপ সরাসরি বাংলা একাডেমিতে অভিযোগ করে।’’ এসব কারণে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে চিঠিটি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়। এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ব্যবসায়িক স্বার্থকে বিবেচনায় রেখে ‘স্টল দুটি অন্য পণ্য (যেমন শিশু শিক্ষা সরঞ্জাম) দিয়ে প্রতিস্থাপনের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে’ বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রাণ-আরএফএল প্রতিষ্ঠানটির অ্যাসিসট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার তৌহিদুজ্জমান বলেন, ‘‘আমরা চিঠিটি পেয়েছি। এটাকে কেন্দ্র করে কোনও ইস্যু হোক, তা আমরা চাই না। যেহেতু আপত্তি উঠেছে, সেহেতু আজকের মধ্যে আমরা ‘স্টে সেফ’ কর্নার সরিয়ে ফেলছি। তবে এই পণ্য আমরা সেখানে বিক্রি করতাম না, ফ্রি স্যাম্পলিং করতাম। অনেক নারী মেলায় আসে, তাদের প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে এটা করা হয়েছিল, এখন আমরা কুইট করছি।’’

কিছু মানুষের দাবির ভিত্তিতে ন্যাপকিনের স্টল বন্ধের বিষয়ে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সরকার আমিনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বইমেলায় ডাইপার বা অন্যান্য পণ্য বিক্রি করা যাবে। এটাতো আর বাণিজ্য মেলা না। এটা নিয়ে আমরা স্পন্সরকে বলেছি, আপনারা স্পন্সর করেছেন, ভালো। কিন্তু এসব পণ্য বিক্রি করা যাবে না। বই ছাড়া অন্যান্য পণ্য বিক্রির নীতিমালা নেই। চিঠির ব্যাপারে কিছু জানি না।’’

পণ্য সরিয়ে ফেলতে বলে প্রাণ- আরএফএলকে লেখা ভাইরাল হওয়া চিঠিটিতে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের স্বাক্ষরকারী পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী রাকিব হাসান রাজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কী থাকবে বা কী থাকবে না সেটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আমরা কেউ না। আমরা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে আছি। একাডেমি কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে চিঠি ইস্যু করতে বলেছে, আমরা করেছি।’

নারী অধিকারকর্মী মারজিয়া প্রভা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ ১০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে এতটুকু বলতে পারি— মাসিক সংক্রান্ত নানাবিধ ট্যাবু এখানে ভেঙেছে। মেয়েরা সচেতন হয়েছে এবং সুস্থভাবে মাসিক ব্যবস্থাপনা শিখেছে। সরকারি এবং বেসরকারি/ এনজিও স্বাস্থ্যকর্মীরা কমিউনিটিতে প্রতিনিয়ত এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রচারণা করছে বলেই মাসিক সুরক্ষা নিয়ে মেয়েরা সচেতন। মেয়েরা আগে ফার্মেসি থেকে প্যাড কিনতে লজ্জা পেতো। এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্যাড বিক্রি বেড়েছে। স্কুলে প্যাডের ব্যবস্থা থাকছে। তাই কমিউনিটিতে স্যানিটারি প্যাড নিয়ে যে ট্যাবু কাজ করতো, তা এখন সেই অর্থে নেই। নিজেদের প্রয়োজনেই এই ট্যাবু ভেঙেছে। তাহলে কাদের কাছে এই জিনিস নিষিদ্ধ লাগে? এই প্রশ্নটা আমার সবার প্রথমে মাথায় এসেছে। বাংলা একাডেমি আজকে তার এই অনুমতিপত্রের মাধ্যমে স্যানিটারি প্যাড নিষিদ্ধতার মতো সমাজে অস্বাভাবিক বিষয়টি বৈধতা দান করেছে। তারা নিজেরাও এটাকে নিষিদ্ধ বিষয় হিসেবে সাব্যস্ত করে মাসিক বিষয়টিকে আবার ট্যাবুর জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।’

তিনি বলেন, ‘‘তাদের এই নতজানু নীতি একটি সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে এরকম নানাবিধ স্বাভাবিক বিষয়কে ‘নিষিদ্ধ’ করার পক্ষে সমর্থনের ভূমিকা পালন করছে।’’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন