হোম অর্থ ও বাণিজ্য প্রবাসী দিবস: রেমিট্যান্স নিয়ে দুই মন্ত্রীর আক্ষেপ

বাণিজ্য ডেস্ক:

বিদেশে রেকর্ডসংখ্যক জনশক্তি রফতানি করেও আশাব্যঞ্জক রেমিট্যান্স আসছে না। বিষয়টিকে হতাশাজনক বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। এজন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রী।

শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) দেশে প্রথমবারের মতো ‘প্রবাসী দিবস’ পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দুই মন্ত্রী কথা বলেন।

বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, আমরা বিদেশে প্রচুর লোক পাঠাচ্ছি। গত বছরও ১১ থেকে সাড়ে ১১ লাখ মানুষ গেছে। এবারও গত বছরের রেকর্ড ভেঙে ১২ লাখেরও বেশি মানুষ যাবে বলে আশা করছি। তবে যে হারে কর্মী বিদেশ যায় সেই হারে রেমিট্যান্স আসে না।

রেমিট্যান্স আনার দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রণালয় অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের কাজ করছি। এখন তারা তাদের কাজ করলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে।’

তবে এ বিষয়ে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, আমাদের লোকেরা তাদের পরিবারের জন্য দেশে টাকা পাঠান। সেই সুযোগে সরকার রেমিট্যান্স পায়। তবে এর প্রবাহ খুব বেশি না। রেমিট্যান্সে আমরা সপ্তম। আমাদের চেয়ে অনেক অল্প সংখ্যক লোকের দেশ ফিলিপিন কিংবা মেক্সিকো অনেক বেশি রেমিট্যান্স পায়। এর একটি বড় কারণ হলো আমাদের যেসব প্রবাসী যাচ্ছেন, তাদের বিরাট সংখ্যক দক্ষতা সম্পন্ন নয়।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীও একই সুরে বলেন, ‘আমরা মানুষ কিন্তু অনেক পাঠিয়েছি। গত বছরও রেকর্ড হয়েছিল। এ বছরও রেকর্ড হয়েছে। আমার বিশ্বাস সামনের বছরও রেকর্ড হবে। কারণ, সারা বিশ্বে কর্মী চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আমরা দক্ষতা উন্নয়ন ট্রেন্ডে ফেল করছি।’

মন্ত্রী বলেন, আমরা যত কর্মী পাঠাচ্ছি তার অর্ধেকের বেশি অদক্ষ কর্মী। এটা আমাদের পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের দক্ষ কর্মী পাঠাতে হবে। আর এটা রিক্রুটিং এজেন্সির ভূমিকা ছাড়া সরকার একা করতে পারবে না। আমরা যদি প্রচুর পরিমাণ দক্ষ কর্মী তৈরি করতে পারি তাহলে অন্যান্য শ্রমবাজার আমাদের থেকে চেয়ে কর্মী নেবে। নতুন নতুন শ্রমবাজার রিক্রুটিং এজেন্সির চেয়ে মন্ত্রণালয় বেশি খুঁজে বের করছে এবং শ্রমবাজারগুলো খোলার চেষ্টা করছে। তবে নতুন শ্রমবাজারে দক্ষ কর্মী প্রয়োজন অদক্ষ কর্মীর প্রয়োজন নেই।

এ সময় বিদেশে প্রবাসী কর্মীরা অনেক সময় দূতাবাসের যথাযথ সহায়তা পান না বলেও অভিযোগ করেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমাদের প্রবাসীদের সব সমস্যার সমাধানের জন্য দূতাবাসেই যেতে হয়। দূতাবাস ছাড়া তাদের আর কোনো জায়গা নেই। পাশাপাশি কর্মীরাও দূতাবাস থেকে সব ধরনের সেবা পাচ্ছে। তবে কিছু অভিযোগ মাঝে মাঝেই আসে। অভিযোগের সমাধানে আরও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এ বিষয়ে আব্দুল মোমেন বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রায়ই অভিযোগ করা হয় পাসপোর্ট দিতে দেরি করছে, অভিযোগ করা যায় এনআইডি তারা পান না। অভিযোগ করা হয় বিদেশে অনেক প্রবাসী গিয়ে চাকরি পাচ্ছে না। মধ্যপ্রাচ্য থেকে চাকরির অভাবে ৩৫ শতাংশ ফিরে আসে। কিন্তু এগুলোর সব দায় দেয়া হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। কিন্তু আসল বিষয় হলো পাসপোর্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইস্যু করে না। পররাষ্ট্র শুধু তথ্য বায়োমেট্রিক ডাটা সংগ্রহ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেয়। তারা (স্বরাষ্ট্র) যাচাই-বাছাই করে পাসপোর্ট তৈরি করে। পাসপোর্ট পাওয়ার পর পররাষ্ট্র সঙ্গে সঙ্গে তা বিতরণ করে। কিন্তু বাজারে কথা আছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাসপোর্ট দিতে দেরি করে।

কর্মীদের বিদেশ গিয়ে চাকরি না পাওয়ার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিদেশে গিয়ে অনেকে চাকরি পান না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাকরি জোগাড় করে না। বিএমইটি আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানাত-এ রকম একটা কোম্পানি থেকে চাহিদা এসেছে ওদের যাচাই-বাছাই করা দরকার। সম্প্রতি এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খবরই দেন না তারা। তারপর আমরা জানি না, এটা ভুয়া কোম্পানি না কি, তার কোনো তথ্যও পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার অনুরোধ জানান মন্ত্রী।

আলোচনা সভা শেষে ২০২৩ সালের ৫৯ জন সিআইপিকে (এনআরবি) সম্মাননা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি ৫ জন প্রবাসীর সন্তানকে শিক্ষবৃত্তি দেয়া হয়। আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের সভাপতি আবুল বাশার ও সিআইপি এনআরবি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহাতাবুর রহমান।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন