হোম অর্থ ও বাণিজ্য পোশাক শিল্প বর্তমানে সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে: বিজিএমইএ

বাণিজ্য ডেস্ক:

কিছুদিন ধরে দেশের পোশাক শিল্প অধ্যুষিত কিছু কিছু এলাকায় স্বাভাবিক শ্রম পরিস্থিতি নেই উল্লেখ করে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, পোশাক শিল্প বর্তমানে এক সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

রোববার (১২ নভেম্বর) বিজিএমইএ সভাকক্ষে আয়োজিত পোশাক শিল্পে নূন্যতম মজুরি ও বর্তমান শ্রম পরিস্থিতি বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিজিএমইএ সভাপতি।

তিনি বলেন, করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে না দাঁড়াতে শুরু হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। সেই ধাক্কায় বিশ্বে রেকর্ড মূল্যস্ফীতির যে চাপ তৈরি হয়, তা এখনও শেষ হয়নি। মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে উন্নত দেশগুলো সংকোচনশীল মূদ্রানীতি নেয়ায় আমাদের পণ্যের খুচরা বিক্রি কমে গেছে। কারণ প্রধান বাজারগুলোর পোশাক আমদানি কমে এসেছে। এরই মধ্যে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে আবারও ঘোরতর অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়ে আমাদের দেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে পোশাক শিল্পের জন্য নতুন আরেকটি শঙ্কার সৃষ্টি করেছে।

এরপরেও পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে ফারুক হাসান বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে শ্রমিক ভাইবোনরা একরকম চাপে রয়েছেন। তাই তাদের জীবনকে স্বাচ্ছন্দময় করতে সরকার গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনা করে ৭ নভেম্বর ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা ঘোষণা করেছে। নতুন মজুরি কাঠামো অনুযায়ী, মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়েছে।

তিনি বলেন, আমরা গত ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছিলাম যে সরকার নতুন যে বেতন কাঠামো ঘোষণা করবেন, আমরা পোশাক শিল্পের সব উদ্যোক্তা সেটিই মেনে নিবো, শিল্পে যত প্রতিকূলতাই থাকুক না কেন। কাজেই আমরা ঘোষিত মজুরি মেনে নিয়েছি। যত কষ্টই হোক, এই মজুরি বাস্তবায়ন করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

যদিও বর্তমান প্রেক্ষাপটে পোশাক শিল্পের বাস্তবতায় এই মজুরি বাস্তবায়ন করা অনেক উদ্যোক্তার জন্যই অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হবে জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, নতুন মজুরি কাঠামো আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।

সময়ের পরিক্রমায় ন্যূনতম মজুরি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেলেও শিল্পের সক্ষমতা সে অর্থে খুব বেশি বাড়েনি দাবি করে তিনি বলেন, ২০২৩ সালের প্রথম ৯ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক পোশাক আমদানি ভ্যাল্যুতে কমেছে ২২ দশমিক ৮১ শতাংশ। যেখানে বাংলাদেশ থেকে তাদের আমদানি কমেছে প্রায় ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। একই সময়ে সারা পৃথিবী থেকে আমদানি কমেছে ২৫ দশমিক ১৬ শতাংশ আর বাংলাদেশ থেকে কমেছে ২৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এরমধ্যে শুধুমাত্র আগষ্টেই বাংলাদেশ থেকে ভ্যালুতে কমেছে ৩৩ দশমিক ৭১ শতাংশ ও সেপ্টেম্বরে ৩৪ দশমিক ৭২ শতাংশ।

ইউরোপের বাজার নিয়ে তিনি বলেন, ২০২৩ সালের প্রথম ৮ মাসে ইউরোপের বৈশ্বিক আমদানি কমেছে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং বাংলাদেশ থেকে কমেছে ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। এর মধ্যে শুধুমাত্র আগষ্ট মাসেই কমেছে ২৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।

চলতি বছরের অক্টোবর মাসের সামগ্রিক রফতানি চিত্র তুলে ধরে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, অক্টোবরে দেশের সামগ্রিক রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ কমেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে পোশাক রফতানির কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রকৃত রফতানি পারফরমেন্স ২৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ নিচে নেমে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের অন্যতম প্রধান বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের পোশাকের দরপতন শুরু হয়েছে। যেটি শিল্পের জন্য নতুন শঙ্কা তৈরি করছে। সার্বিকভাবে বিশ্ববাজার থেকে গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হওয়া পোশাকের দর ৮ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ কমেছে। একই মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হওয়া পণ্যের দর কমেছে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

পোশাক খাতের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক কারণের জের ধরে পোশাক শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে। বিগত ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সময়ে গ্যাসের মূল্য বেড়েছে ২৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বিদ্যুতের মূল্য বেড়েছে ২১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ফলে গত ৫ বছরে পোশাক শিল্পে উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। শুধু তাই নয়, উন্নত দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাংক সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে আমাদের ক্রেতাদেরও কস্ট অব ফান্ড বেড়ে গেছে। যার চাপ বহন করতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের।

ফারুক হাসান বলেন, উদ্যোক্তারা কিন্তু অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেই অনেক ঝুঁকি নিয়ে এই শিল্প পরিচালনা করছেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন এবং অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। এমন অনেক উদ্যোক্তা আছেন, যারা লোকসান দিয়েও কারখানা সচল রেখেছেন, শুধুমাত্র ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য। তারা শ্রমিকদেরকে বেতন দিচ্ছেন ঋণের বোঝা মাথায় রেখে।

এদিকে বিভিন্ন সময়ে হরতাল, অবরোধ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক মন্দা, প্রকৃত রফতানিমূল্য প্রত্যাবাসিত না হওয়া, ক্রয়াদেশ বাতিল, ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়া হয়ে পড়াসহ বিভিন্ন কারণে অনেক উদ্যোক্তা ঝরে গেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার ৮৮৫টি পোশাক কারখানা বিজিএমইএ’র সদস্যপদ নিলেও কালের পরিক্রমায় ৩ হাজার ৯৬৪টি সদস্য কারখানা বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। অবশিষ্ট ২ হাজার ৯২১টি সদস্য কারখানার মধ্যে ২ হাজার ৩৩৯টি কারখানা বিজিএমইএতে তাদের সদস্যপদ নবায়ন করেছে। এই ২ হাজার ৩৩৯টি সদস্য কারখানার মধ্যে মাত্র ১ হাজার ৬০০টি সদস্য কারখানা ক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি অর্ডার এনে কাজ করছে। অর্থাৎ, আমাদের এ মুহুর্তে সরাসরি রফতানিকারক কারখানার (সরাসরি অর্ডার নিয়ে কাজ করা) সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ৬০০টি।

তিনি বলেন, সদস্যপদ নবায়ন করা ২ হাজার ৩৩৯টি কারখানার মধ্যে ১ হাজার ৬০০ কারখানা বাদে বাকি কারখানাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কারখানা বিভিন্ন ব্যাংক দেনা ও দায়ের কারণে সরাসরি ব্যাক-টু-ব্যাক খুলতে পারছে না। ফলে তারা ক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি অর্ডার নিতে পারছে না। এই সদস্য কারখানাগুলো মূলত সাব-কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে। অবশিষ্ট কারখানাগুলো ব্যাংক দেনা ও আর্থিক সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। তবে তারা আগামীতে দেনা পরিশোধ করে ব্যবসায় ফিরে আসতে ইচ্ছুক।

তিনি আরও বলেন, এ পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, শিল্পের উত্থানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বন্ধ কারখানার সংখ্যাও বাড়ছে। শুধুমাত্র করোনা মহামারির কারণে ২০২০-২১ সালে বন্ধ হওয়া কারখানার সংখ্যা ৩১৭টি এবং পরবর্তীতে অন্যান্য কারণে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে না পারার কারণে ২৬০টি কারখানা বন্ধ হয়েছে।

শিল্পের অভ্যন্তরের গভীরতম সংকটের বিষয়টি গণমাধ্যমে সেভাবে উঠে আসছে না উল্লেখ করে ফারুক হাসান বলেন, কতখানি সংকটের মধ্যে থেকে, কতখানি অনিশ্চয়তা সঙ্গে নিয়ে কারখানাগুলো চলছে; তা বন্ধ হওয়া কারখানার পরিসংখ্যানই বলে দেয়। কোন উদ্যোক্তাই চান না, তার অক্লান্ত কষ্টে তিলে তিলে গড়া উঠা শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাক। কিন্তু বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কিছু বিষয় আছে, যার প্রভাব থেকে শিল্প চাইলেও বের হতে পারে না, শিল্পকে তা গ্রহণ করতেই হয়। এটিই এ শিল্পের কঠিন বাস্তবতা।

দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা যখন ‘বৈশ্বিক ও আর্থিক’ এই দ্বিমূখী চাপের মধ্যে থেকেই টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছি, ঠিক তখন শিল্পকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা অপতৎপরতা। বিশেষ করে, আমাদের শান্ত শ্রমিক গোষ্ঠিকে উসকানি দিয়ে অশান্ত করা হচ্ছে।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে মজুরি বাড়ানোর পরও আন্দোলনের নামে বিভিন্ন জায়গায় কারখানা ভাংচুর করা হচ্ছে। মজুরি ঘোষণার পর থেকে বেশ কিছু কারখানায় অজ্ঞাতনামা কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক অযৌক্তিক দাবিতে বেআইনিভাবে কর্মবিরতি পালন করে কর্মকর্তাদের মারধর করেছে, কারখানার ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলো এ ব্যাপারে আমাদেরকে ভিডিও ফুটেজ দিয়েছে, মামলার কপিও আমাদেরকে দিয়েছে। আপনারা চাইলে আপনাদেরকে এসব ফুটেজ, মামলার কপি দিতে পারি।

উদ্ভূত পরিস্থিতে আশুলিয়া, কাশিমপুর, মিরপুর ও কোনাবাড়ি এলাকার প্রায় ১৩০টি পোশাক কারখানার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কারখানার সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে কারখানার সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানান তিনি। ফারুক হাসান বলেন, যেসব কারখানা শ্রমিকরা কাজ করতে আগ্রহী, সেগুলোতে কাজ চলছে। তাদের কাজ চলমান থাকবে।

নতুন মজুরি বাস্তবায়ন নিয়ে তিনি বলেন, নতুন মজুরি বাস্তবায়ন আমাদের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ হলেও আমরা এটি বাস্তবায়ন করবো। এক্ষেত্রে ক্রেতা, শ্রমিক, সরকার এবং সবার সহযোগিতা কামনা করছি। তবে এখানে একটি কথা না বললেই নয় যে, শিল্পের সক্ষমতা বিবেচনায় রেখেই নূন্যতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের সক্ষমতার মূলে রয়েছে শ্রমিকদের মূল্য সংযোজন। কারণ আমাদের এখানে কোনো তুলার মতো কাঁচামাল নেই।

ফারুক হাসান বলেন, বিগত ৫ বছর ধরে শিল্পে একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে, যার জন্য আমরা আন্তর্জাতিকভাবে অভিনন্দনও পাচ্ছি। তবে অনেকেই আছেন, যারা আমাদের এই উন্নতিতে খুশি হতে পারছেন না। এই শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি যে কোনভাবেই হোক বিঘ্নিত করতে চান তারা। তবে শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে যারা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বেন, তারা হলেন আমাদের এই শিল্পের প্রাণ আমাদের শ্রমিক ভাইবোনেরা।

কোনো কারণে এ শিল্পখাত অস্তিত্ব হারালে লাখ লাখ শ্রমিক ভাইবোন কর্মহীন হয়ে পড়বে, যা কাম্য নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন,
মনে রাখা জরুরি, কোনো কারণে এ বিশাল শ্রমগোষ্ঠী কর্মহীন হয়ে পড়লে এদের জন্য যে অন্য খাতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে, এরকম কোনো খাত এখন পর্যন্ত আমাদের গড়ে উঠেনি। এছাড়া সবচেয়ে বিপদজনক হলো, এতো শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়লে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে যে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হবে, তা মোকাবেলার সক্ষমতা এ অর্থনীতির নেই।

ফারুক হাসান বলেন, আজকের এই সংবাদ সম্মেলন থেকে আবারও বলছি, দেশ ও শিল্পের স্বার্থে, শ্রমিক ভাইবোনদের কর্মসংস্থানকে সুরক্ষিত রাখতে, যদি কোনো কারখানায় শ্রমিক ভাইবোনেরা কাজ না করেন, কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে যান, কারখানা ভাংচুর করেন, তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ, শ্রমিক ভাই-বোন ও সম্পদের নিরাপত্তা রক্ষায় শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন।

তিনি বলেন, যতদিন না শ্রমিক ভাংচুর বন্ধ হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারছে– ততোদিন পর্যন্ত কারখানা কর্তৃপক্ষ শিল্প ও সম্পদ রক্ষায় ১৩ (১) ধারায় কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন। প্রতিটি উদ্যোক্তার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে বহিরাগতদের হাত থেকে তার নিজস্ব শিল্প ও সম্পদ রক্ষা করার।

নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখার বিষয়ে ফারুক হাসান বলেন, যেহেতু বর্তমানে পোশাকখাতে অনেক কারখানায় কাজ কম, ক্রেতারা নতুন করে অর্ডার দেয় বন্ধ রেখেছেন, তাই আমরা নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখতে বলেছি। পরিস্থিতি অনূকূলে এলে আবার নতুন নিয়োগদান করা হবে।

এক্ষেত্রে তিনি বলেন, আপনারা দেখছেন যে ব্যাংক দেনা, অর্ডার ক্যানসেলেশন বা যে কোনো কারণে কারখানা বন্ধ হয়ে গেলেও মালিককে ঠিকই মজুরি পরিশোধ করতে হয়। তাই বর্তমানে যখন কাজ কম, তখন আমরা কারখানাগুলোকে বলছি নতুন করে নিয়োগ না দিতে। এ মুহূর্তে নতুন নিয়োগ কারখানাগুলোর ওপর বাড়তি বোঝা সৃষ্টি করবে। কোন কারখানার যদি কাজ বেশি থাকে, তাহলে সে কারখানাটি যে কারখানায় কাজ কম, সেখান থেকে কাজ করিয়ে নিবে। এতে করে কম কাজের কারখানাগুলোকে সাহায্য করা হবে এবং সব কারখানার কাজের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় থাকবে এবং যে ওভার ক্যাপাসিটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা কিছুটা প্রশমিত হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শিল্পকে নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে জানিয়েছে ফারুক হাসান বলেন, এতে করে শিল্প ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষূণ্ন হচ্ছে। এ ধরনের কার্যক্রম দেশোদ্রোহিতার শামিল। বলা হয়েছে, ইপিলিয়ন কারখানায় ৩ জন মারা গেছে, যা মোটেও সত্য নয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সরকারের প্রতি আমাদের একান্ত অনুরোধ, যারা এ ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন।

এক্ষেত্রে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এ শিল্পকে নিয়ে যারা চক্রান্ত করছে, তাদেরকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিন। সেই সঙ্গে শিল্প-কারখানা চালানোর জন্য আমাদেরকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিন। রাজনীতি ও অর্থনীতি একে অপরের পরিপূরক। তাছাড়া এ মূহুর্তে প্রবাসী আয়খাতে মন্থর ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থায় রফতানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প বিশেষ মনোযোগের দাবি রাখে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন