হোম জাতীয় পণ্য পাঠান, বদনাম যেন না হয়: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় ডেস্ক :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদেশে পণ্য পাঠানোর জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করবে সরকার। কিন্তু পণ্য পাঠানোর পর ক্রেতা দেশ থেকে যেন কোনো ধরনের অভিযোগ না আসে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনার কথা তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

বর্তমানে রপ্তানি পণ্য তালিকায় বাংলাদেশ থেকে পাট, চা, চামড়া, চিংড়ি, তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। এসব পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে দেশে আসছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। প্রচলিত রপ্তানি পণ্যের তালিকার বাইরে এখন বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের অপ্রচলিত পণ্যও বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

দেশের সীমিতসংখ্যক রপ্তানিকারক অত্যন্ত স্বল্প পরিসরে এসব অপ্রচলিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করছেন। এসব অপ্রচলিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে প্লাষ্টিকের পরিত্যক্ত সামগ্রীর চিপস (প্লাষ্টিকের গুঁড়া), টেক্সাটাইল ববিন, প্লাষ্টিক ষ্ট্রীপ, পুরাতন কম্পিউটার এবং টিভির প্লাষ্টিক কভার, মাছের পোটকা, শুঁটকি, মাছের আঁশ, গরুর ভুঁড়ি, ফুলের ঝাড়ু, টেক্সটাইল ওয়েষ্টেজ, জুটকটন, রিরোলিং মিলের স্ক্র্যাপ, নারিকেলের ছোবড়াসহ বিভিন্ন ধরনের অপ্রচলিত পণ্য।

বেশ কয়েক বছর আগেও এসব পণ্য পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকত অথবা নষ্ট হয়ে যেত। এসব পণ্যের বাজার খোঁজার সঙ্গে উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করতেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এসময় পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বিভিন্ন সময়ে রপ্তানি করা পণ্য নিয়ে নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই এমন নির্দেশনা দিয়েছেন সরকার প্রধান।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় ৫ হাজার ৪শ ৪১ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক।

অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে টাকার অংকে সবচেয়ে বড় প্রকল্প ময়মনসিংহের কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ প্রকল্প। দেশি বিদেশি অর্থায়নে ৩ হাজার ২শ ৬৩ কোটি টাকা খরচে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতুটি নির্মাণ করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা প্রকল্পটি।

পরিকল্পনা কমিশন মনে করছে আলাদা এসএমভিটি লেনসহ ৪ লেনের সংযোগ সড়ক ও সেতু নির্মাণের মাধ্যমে ময়মনসিংহ বিভাগের আওতাধীন উত্তরাঞ্চলের জেলাসহ এ অঞ্চলের স্থলবন্দর, ইপিজেড এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর সাথে ঢাকার নিরাপদ, উন্নত ও ব্যয় সাশ্রয়ী যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, শিল্প উন্নয়ন,নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ঐ অঞ্চলের জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নেও সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

একনেক ব্যয় ও মেয়াদ বাড়িয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দুর্যোগ সহনশীলতা প্রকল্পটির। মূল অনুমোদিত ৭শ ৪৬ কোটি ৫ লাখ টাকা থেকে সংশোধনী এনে ৬৬ কোটি টাকা ও এক বছর বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পটির মেয়াদ। এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকা শহরে দুটি জরুরি অপারেটিং সেন্টার, এবং ১০টি জোন অফিসে স্যাটেলাইট কন্ট্রোল রুম স্থাপন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে সড়ক পরিবহন বিভাগের মাদারগঞ্জ-কয়রা-মনসুরনগর -সরিষাবাড়ী-ধনবাড়ী সড়ক উন্নয়ন নামের একটি প্রকল্প। সরকার মনে করছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলা থেকে টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি উপজেলা পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন, যানজটমুক্ত ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হবে। এর ফলে ঐ এলাকার শিল্প ও বাণিজ্যে গতি আসবে এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬শ ৮৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। চলতি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ এর মধ্যে শেষ হওয়ার কথা সব কাজ।

এছাড়া দারিদ্র্য বিমোচনে প্রযুক্তি নির্ভর সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা নামের একটি প্রকল্পেও অনুমোদন দিয়েছে একনেক। পরিকল্পনা কমিশন মনে করছে, সরকারের “আমার গ্রাম,আমার শহর” শীর্ষক কর্মসূচি অনুযায়ী প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নাগরিক সুবিধা সম্প্রসারণের জন্য বায়োগ্যাস প্লান্টের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করে দেশের ইকোসিস্টেমের উন্নয়ন এবং যুবকদের আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে প্রকল্পটি। দেশের ৬৪টি জেলার ৪শ ৯২টি উপজেলায় সরকারি তহবিলের ২শ ৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা খরচে তিন বছর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর।

প্রকল্পের আওতায় ৬৪ হাজার বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন, প্রতি খামারে ২ জন হিসেবে ১ লাখ ২৮ হাজার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ১ লাখ ৪৭ হাজার যুবককে প্রশিক্ষণ ও ১শ ২৫ কোটি টাকার ঋণ তহবিল গঠন করবে অধিদপ্তর।

এছাড়া, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ক্লাইমেট স্মার্ট মৎস্যচাষ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটিতেও দেওয়া হয়েছে চুড়ান্ত অনুমোদন। প্রকল্পের আওতায় ৮ বিভাগের ১৮টি জেলার ২৯টি উপজেলায় ক্লাইমেট স্মার্ট মৎস্যচাষ প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, ব্যবসাবান্ধব সাপ্লাই চেইন এবং বাজার নেটওয়ার্ক প্রসারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের বাজারে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি এবং স্টেকহোল্ডারদের জীবিকার মানোন্নয়নসহ টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে মৎস্য অধিদপ্তর। ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ব্যয় ১শ ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

সভায় ১শ ৮০ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দিনাজপুর জেলার ঢেপা,পুনর্ভবা ও টাঙ্গন নদীর তীর সংরক্ষণ ও ৭শ ৭৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের গ্রিড উপকেন্দ্র ও সঞ্চালন লাইনের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আলাদা দুটি প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে একনেক। সভাশেষে অনুমোদিত প্রকল্প, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও ব্যয়ের বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন