হোম রাজনীতি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: সংঘাত সহিংসতা চলছেই, প্রচার শেষ কাল

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: সংঘাত সহিংসতা চলছেই, প্রচার শেষ কাল

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 90 ভিউজ

রাজনীতি ডেস্ক:

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার শেষ হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার সকাল ৮টায়। প্রচারের শেষ সময়ে এসে অনেক আসনে জমজমাট হয়ে উঠেছে নির্বাচনী পরিবেশ। আবার নানা হিসাবনিকাশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণাও দিয়েছেন কোনো কোনো প্রার্থী। অন্যদিকে প্রচারের শেষ মুহূর্তে এসে প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে উত্তাপও বাড়ছে। গতকাল এবং তার আগের দিনও দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্য অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে ৩০০ আসনে ২ হাজার ৭১৬ প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েন ৭৩১ জন। ১ হাজার ৯৮৫ জনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে ৫৬০টি আপিল আবেদন জমা পড়ে। আপিল শুনানির মধ্য দিয়ে ২৭৫ জন তাদের প্রার্থিতা ফিরে পান। আর রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বাছাইয়ে বৈধ পাঁচজনের প্রার্থিতা আপিলে বাতিল হয়ে যায়। ২৮৫টি আপিল আবেদন নামঞ্জুর করে নির্বাচন কমিশন। ফলে শেষ পর্যন্ত বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ২৬০-এ। নির্দিষ্ট দিনে মনোনয়ন প্রত্যাহার শেষে মোট প্রার্থী সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৯৬-এ। এর মধ্যে ভোটে অংশগ্রহণকারী ২৭টি দলের বাইরে ৩৮২ স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন। এ মুহূর্তে ৩০০ আসনে ১ হাজার ৯৭০ জন প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন। ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সারা দেশে একযোগে ভোট গ্রহণ করা হবে। এরই মধ্যে ভোটের দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপিসহ নিবন্ধিত ১৬টি রাজনৈতিক দল ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ভোট ঠেকানোর আন্দোলনে মাঠে রয়েছে।

শেষ সময়ে নির্বাচনী প্রচারে ভোটারের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিচ্ছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। রাত-দিন বিবেচনায় না নিয়ে নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন তারা। মিছিল, সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠকসহ নানাভাবে গণসংযোগে ব্যস্ত রয়েছেন। এসব কর্মসূচিতে একে অন্যের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত হচ্ছেন অনেকে। কোথাও কোথাও সহিংসতায় জড়াচ্ছেন প্রার্থীর সমর্থকরা। মঙ্গলবার বরিশাল-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে ফাইয়াজুল হক রাজুর নির্বাচনী মিছিলে হামলা হয়। এতে তার ৪০ কর্মী আহত হন বলে দাবি করেছেন ফাইয়াজুল হক। এ সময় নৌকার সমর্থকরা ১৬টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে। এ ছাড়া মিছিলকারীদের লক্ষ্য করে পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয় বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার রাতে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী ইউনিয়নে নৌকার ক্যাম্পে হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফয়সাল বিপ্লবের সমর্থকরা এই হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ নৌকার প্রার্থীর। একই দিন রাতে নেত্রকোনা-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাজহারুল ইসলামের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ আব্দুল্লাহ বিন কুদ্দুস শোভনের পথসভায় হামলা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বড়াইগ্রাম উপজেলার চান্দাই ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এ ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুই সমর্থক আহত হয়েছেন। নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় আব্দুল ওয়াদুদ সরকার নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। ঝিনাইদহ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুলের নির্বাচনী অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের এই হামলার সঙ্গে জড়িত বলে থানায় করা এজাহারে উল্লেখ করা হয়। মঙ্গলবার রাতে ঝিনাইদহ শহর-সংলগ্ন ঝিনুকমালা আবাসনে এই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাটি ঘটে। হামলায় ঝিনুকমালা আবাসনের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম আহত হন।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার বৈন্যা মোড়ে নৌকার প্রার্থীর কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এতে আহত হন বৈন্যা গ্রামের হোসেন আলী (৫০) ও বাবু মিয়া (৩৫)। গাইবান্ধার পলাশপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক কর্মীকে মারধর করা হয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের পূর্ব গোপালপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া একই দিন গভীর রাতে মাদারীপুরের কালকিনিতে নৌকার একটি নির্বাচনী ক্যাম্প পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

এর আগে বিভিন্ন সময় নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হামলা, সংঘর্ষের বেশ কিছু ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এসব সংঘাত-সহিংসতায় অন্তত তিনজন নিহত এবং বহুসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক আহত হয়েছেন।

এদিকে নানামুখী চাপের মুখে নির্বাচনের পাঁচ দিন আগে মঙ্গলবার ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) আরও পাঁচ প্রার্থী। তারা হলেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর) আবদুল মান্নান তালুকদার, হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনের শংকর পাল, দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ) আসনের মাহবুব আলম, টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের জহিরুল ইসলাম ও গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) সামসুদ্দিন খান। নির্বাচনী প্রচার শুরু হওয়ার পর ভোট থেকে এখন পর্যন্ত জাপার ১১ প্রার্থী সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন। তাদের কেউ কেউ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অসহযোগিতা, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ এবং ‘চাপ ও হুমকির’ কথা জানিয়েছেন।

নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ তাদের সমর্থকদের এ পর্যন্ত ৪৩৬টি শোকজ ও তলব নোটিশ দিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে সর্বোচ্চ ১১৬টি এবং সিলেট অঞ্চলে সর্বনিম্ন ১৬টি নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশের জবাবে এ পর্যন্ত ২৭৩ প্রার্থী ও তাদের সমর্থক অনুসন্ধান কমিটির কাছে সরাসরি অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক শোকজ, তলব, সতর্ক ও জরিমানার পরও প্রার্থীদের বাগে আনতে পারছে না ইসি। কমিশনের রক্তচক্ষুর আড়ালে সারা দেশে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হুমকি-ধমকি, হামলা, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ নানাভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন বেপরোয়া প্রার্থীরা। এসব অভিযোগে গতকালও কয়েক প্রার্থী ও তাদের সমর্থককে শোকজ করেছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। এ ছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে ইসিতে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে কমিটি।

ইসির সংশ্লিষ্ট শাখার তথ্য অনুসারে, তপশিল ঘোষণার পর থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন সহিংসতা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় পাঁচ শতাধিক শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তাদের মধ্যে আবার অন্তত ৭০ জনই বর্তমান সংসদ সদস্য। জাতীয় পার্টির ১৫ জনসহ অর্ধশতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীকেও শোকজ করা হয়েছে। শোকজ নোটিশ পাওয়া বাকিদের মধ্যে আছেন দলের কর্মী-সমর্থক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই তালিকায়ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থক বেশি। বারবার আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে নিয়মিত আদালতে মামলাও হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ইসির নির্দেশে ঝিনাইদহ-১ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে নিয়মিত আদালতে কয়েকটি মামলা করা হয়। গতকাল তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালত। এ ছাড়া মামলা হয়েছে চট্টগ্রাম-১৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। ক্ষমতাসীন দলের আলোচিত দুই প্রার্থী কুমিল্লা-৬ আসনের আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও বরগুনা-১ আসনের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে নির্বাচন কমিশনে ডেকে যথাক্রমে ১ লাখ ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে শেষবারের মতো সতর্ক করা হয়েছে। বেপরোয়া প্রার্থীদের লাগাম টানতে মঙ্গলবার এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রার্থিতাও বাতিল করে ইসি। যদিও গতকাল তিনি উচ্চ আদালত থেকে আবার প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন