হোম অন্যান্যসারাদেশ থানায় অভিযোগ করার ১০দিন পর থেকে ধর্ষিতা নিখোঁজ!

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি :

কুলিয়ারচর থানায় লিখিত অভিযোগ করার ১০দিন পর থেকে ধর্ষিতা নারী পোষাক শ্রমিকের খোঁজ মিলছেনা বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়।

জানা যায়, প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ ও দুইটি বাচ্চা নষ্ট করার অভিযোগে উপজেলার বীর কাশিমনগর গ্রামের মোঃ লিটন মিয়ার পুত্র মেহেদী হাসান ইমন (২৫) নামে এক গার্মেন্টস শ্রমিকের বিরুদ্ধে গত ২৫ মে কুলিয়ারচর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করে ওই নারী (২০) পোষাক শ্রমিক।

তার বাড়ি উপজেলার উছমানপুর ইউনিয়নের খৈলাজুড়ি গ্রামে। অভিযোগ এন্ট্রি নং-১৬৬-৮৭৬/২১। অভিযোগের ১০দিন পর গত ৪ জুন শুক্রবার থেকে ওই ধর্ষিতার খোঁজ মিলছেনা। ধর্ষিতা সহ ধর্ষিতার মায়ের মোবাইল ফোন বন্ধ। অভিযোগের ২০দিন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত থানায় কোন মামলা রুজু হয়নি।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মেহেদী হাসান ইমন (২৫) এর সাথে ঢাকা উত্তরা একটি গার্মেন্টসে কাজ করতো ওই মেয়েটি। কাজ করার সুবাদে মেহেদী হাসান ইমনের সাথে পরিচয় হয় তার। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।

একদিন মেয়েটির মামার বাড়ি কুলিয়ারচর উপজেলার উছমানপুর ইউনিয়নের খৈলাজুড়ি গ্রামে এক অনুষ্ঠানে আসেন তারা দু’জন। ওখানে ফুসলিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে তিন দিন মেয়েটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে একাধিকবার ধর্ষণ করে ইমন।

মামার বাড়ির মান সন্মানের কথা চিন্তা করে তখন এসব কথা কাউকে জানাতে পারেনি মেয়েটি। ঢাকায় গিয়ে মেয়েটি প্রেমিক ইমনকে চাপ দেয় বিয়ে করার জন্য। মেয়েটির চাপের মুখে পড়ে ঢাকা উত্তরায় একটি ভাড়াটিয়া বাসায় নিয়ে মেয়েটির হাতে আংটি ও নাকে নাকফুল পড়িয়ে বিয়ের নাটক সাজিয়ে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে মেয়েটিকে।

এর পর থেকে মেয়েটিকে ভাড়াটিয়া বাসায় রেখে স্ত্রী হিসেবে যৌন মিলন করতে থাকে ইমন। এক পর্যায়ে মেয়েটি গর্ভবতী হয়েছে জেনে ইমন কৌশলে মেয়েটিকে ঔষধ খাইয়ে বাচ্চা নষ্ট করে ফেলে। আবারো মেয়েটির গর্ভে বাচ্চা এসেছে জেনে এক রকম জোর করে মেয়েটিকে আবারো ঔষধ খাইয়ে দ্বিতীয় বাচ্চাটিও নষ্ট করে ফেলে। তখন মেয়েটি কাবিন করার জন্য চাপ দেয় ইমনকে।

ইমন মেয়েটিকে বিয়ে করেনি আর করবেওনা বলে জানিয়ে দেয়। ইমন মেয়েটির সাথে দুই বছর যাবৎ প্রতারণা করে তাকে নিয়মিত ধর্ষণ করেছে বুঝতে পেরে এঘটনা তাদের গার্মেন্টসের এমডিকে জানান। এমডি ইমনকে অনুরোধ করেন মেয়েটিকে বিয়ে করতে। এমনকি মেয়েটিকে বিয়ে করলে ইমনের বেতন দ্বিগুণ করে দিবে বলেও প্রস্তাব দেন এমডি। ইমন এতে রাজি না হওয়ায় চাকুরী হারতে হয়েছে।

স্বামীর অধিকার পেতে মেয়েটি স্থানীয় উছমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নিজাম ক্বারীর মাধ্যমে ইমনের বাড়ি সালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ্ মাহবুবুর রহমানকে বিষয়টি অবগত করে বিচার দাবী করেন। এতে কোন ফল না পেয়ে মেয়েটি বাদি হয়ে গত ২৫ মে কুলিয়ারচর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করে।

অভিযোগ করার পর এক দিকে থানায় মামলা রুজু না হওয়ায় অপর দিকে ইমন ও তার পরিবারের সদস্য এবং একটি প্রভাবশালী মহলের চাপে দিশেহারা হয়ে পরে মেয়েটি। এর পর গত ১০ জুন শুক্রবার থেকে মেয়েটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।

এ ব্যাপারে উছমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নিজাম ক্বারী বলেন, মেয়েটি আমার নিকট অভিযোগ করেছে। ইমন নামে এক গার্মেন্টস শ্রমিক তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে উছমানপুর খৈলাজুড়ি ও ঢাকা উত্তরায় একাধিকবার ধর্ষণ করেছে। যার ফলে দুটি বাচ্চা গর্ভে এলে তাও নষ্ট করে দিয়েছে ইমন। ইমনের সাথে বিয়ে পড়ানোর বহু চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়ে থানায় অভিযোগ করতে বলেছি মেয়েটিকে।

এ ব্যাপারে অভিযোগ তদন্তকারী অফিসার এস.আই মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, তদন্তকালে জানা যায়, ঘটনাস্থল ঢাকা উত্তরা। তাই মেয়েটিকে ঢাকা উত্তরা থানায় অভিযোগ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকে মেয়টি আর কোন যোগাযোগ করেনি। বর্তমানে মেয়েটির কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা। তার বড়িতেও নেই। মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন