জাতীয় ডেস্ক:
মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে তিন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বিকাল পর্যন্ত এই ঘটনা ঘটে।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলছে তুমুল যুদ্ধ। সামরিক জান্তা বাহিনীর বিওপি বা চেকপোস্ট দখলে নিতে মরিয়া বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মি। এ নিয়ে শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে থেমে থেমে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
তাদের ছোড়া গুলি, মর্টারশেল ও রকেট লাঞ্চারের বিস্ফোরিত অংশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম তুমব্রু সীমান্তবর্তী এলাকায় বসতঘরের উপরে এসে পড়ে। এতে কোনো হতাহত না হলেও রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) ভোর থেকে গোলাগুলির ঘটনা যুদ্ধের রূপ নেয় ব্যাপক আকারে।
মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণ, মর্টারশেল নিক্ষেপ ও রকেট লাঞ্চারের বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা। তাদের ছোড়া গুলির আঘাতে তুমব্রু হিন্দু পাড়ার বাসিন্দা রবীন্দ্র ধর, কোনার পাড়ার বাসিন্দা শামসুল আলম ও এক নারী আহত হয়েছে। তুমুল লড়াইয়ের এক পর্যায়ে বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির লাগাতার আক্রমণে ক্যাম্প ছেড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় সামরিক জান্তা বাহিনীর সদস্যরা।
বিকাল নাগাদ জান্তা বাহিনীর ৩৯ সদস্য ক্যাম্প ছেড়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্পে এ আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে ব্যাপক এ গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে পুরো এলাকার বাসিন্দারা। ভয়ে ঘর থেকে কেউ বের হচ্ছে না। অনেকেই প্রাণের ভয়ে নিরাপদে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। অনেকেই আতঙ্ক, উৎকণ্ঠায় নির্ঘুম রাত ঘরে বসেই কাঠিয়েছে। ভয়ে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতেও পারছে না অভিভাবকরা। এছাড়াও কৃষকরা কৃষি ক্ষেতে যেতে ও দৈনন্দিন কাজ করতেও ভয় পাচ্ছে এলাকাবাসী।
এদিকে সীমান্তে উত্তেজনার কারণে ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। নিরাপত্তার কারণে কয়েকটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং সীমান্তের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তুমব্রু বাসার এলাকার বাসিন্দা রূপলা ধর বলেন, রোববার ভোর ৮টা থেকে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ হচ্ছে। পরিবারের সবাই না ঘুমিয়ে বসে আছি। অনেক ভয় হচ্ছে। কখন কোন সময় কী হয় তা আমরা জানি না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পাশের এলাকার এক ঘরের চালের উপর বিস্ফোরিত রকেট লান্সার এসে পড়েছে শুনেছি। অনেকের উঠানে গুলিও এসে পড়েছে। এ ঘটনায় ঘরের বাহিরে যেতেও ভয় হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তুমব্রু কোনার পাড়ার বাসিন্দা ভুলু বলেন, রাত ১১টার দিকে মর্টারশেলের বিস্ফোরিত অংশ আমার ঘরের চাল ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়ে। একটুর জন্য আমাদের পরিবার প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। আমরা খুব ভয়ে আছি, ঘরেও নিরাপদে থাকতে পারছি না।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক (ডিসি) শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনায় সীমান্তবর্তী এলাকা ঘুমধুম-তুমব্রুতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিরাপত্তা জনিত কারণে ৫টি বিদ্যালয় সাময়িক ভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাসিন্দাদের চলাচল সীমিত ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকার বেশ কয়েকটি সড়কে যান চলাচলও বন্ধ রাখা হয়েছে।
সীমান্তে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে প্রশাসনের পাশাপাশি বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।