হোম অর্থ ও বাণিজ্য ডুবে গেছে ৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকার গম

বাণিজ‌্য ডেস্ক :

লক্ষ্মীপুরের তেলির চরে মেঘনার মোহনায় ‘এমভি তামিম’ নামের একটি জাহাজ ডুবে পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে ৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকার ১ হাজার ৬০০ টন গম। এখনো উদ্ধার হয়নি জাহাজটি।

লক্ষ্মীপুরের রামগতির তেলির চর এলাকার মেঘনা নদীর মোহনায় তলা ফেটে ডুবে গেছে ‘এমভি তামিম’ নামের একটি লাইটার জাহাজ। জাহাজটিতে ১ হাজার ৬০০ টন গম ছিল, যার আনুমানিক মূল্য ৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বলে জানা গেছে। জাহাজের সব হেজে পানি ঢুকে পড়ায় বর্তমানে জাহাজে থাকা সব গমই নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান জাহাজের মাস্টার আবদুল মালেক।

তবে জাহাজে থাকা ১২ জন নাবিকের সবাই অক্ষত আছেন এবং তারা বর্তমানে একই মালিকের ‘এমভি বুশরা-বিভা-২’ নামক অপর একটি জাহাজে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়।

আবদুল মালেক জানান, রয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিকানাধীন ও শাহ আমানত শিপিংয়ের পরিচালনাধীন জাহাজটি ১৬ মে ভোর ৫টার দিকে চট্টগ্রামের বহির্নোঙরের একটি বড় জাহাজ থেকে সমতা শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিকসের দেওয়া নাবিল অটোফ্লাওয়ার মিলের জন্য গম বোঝাই করে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। একই দিন বেলা ৩টার দিকে বঙ্গোপসাগরের মেঘনা নদীর মোহনা এলাকায় পৌঁছলে সাগরে প্রচণ্ড ঘূর্ণন থাকায় হঠাৎ শক্ত কিছুর সঙ্গে আঘাত লেগে জাহাজটি সামনের দিকের তলা ফেটে যায়। এতে মুহূর্তেই জাহাজের প্রথম হেজে পানি ঢুকে পড়ে। এ সময় জাহাজে থাকা নাবিকরা পাম্প চালিয়ে পানি নিষ্কাশন করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সাগর উত্তাল থাকায় পানির তোড়ে জাহাজটি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলা তেলিরচর ও ঘাসিয়ার চরের মাঝামাঝি একটি খালের মুখে ঢুকে পড়ে। প্রায় দুদিন জাহাজটিকে রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন নাবিকরা। এদিকে মালিকপক্ষ থেকে আরেকটি জাহাজ পাঠিয়ে গমগুলো খালাস করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তারা।

অবশেষে বুধবার (১৮ মে) বিকেলে জোয়ারের কারণে পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় জাহাজের তিনটি হেজই পানির নিচে চলে যায়। শুধু মাস্টার ব্রিজটার কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। এতে জাহাজে থাকা সব গমই পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান জাহাজের মাস্টার আবদুল মালেক।

তিনি বলেন, ‘মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানির কারণে আমাদের ১২ জন নাবিককে একটি ট্রলার প্রথমে উদ্ধার করে কিনারায় নিয়ে আসে। নতুবা গভীর সাগরে ডুবে মরা ছাড়া কোনো উপায় থাকত না। মালিকপক্ষ থেকে আরেকটি জাহাজ পাঠানোর পর বর্তমানে আমরা নিরাপদে আছি।’

তিনি আরও জানান, জাহাজটি স্রোতে তেলিরচরের কিনারার দিকে চলে যাওয়ায় জাহাজ চলাচলের পুরো চ্যানেলটি ক্লিয়ার আছে। এতে অন্যান্য জাহাজ চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না ও দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজটিও উদ্ধারে সহজ হবে।

রামগতি উপজেলার চর আবদুল্লাহর ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মনজুর বলেন, ‘রামগতি থানার ওসি সাহেবের কাছ থেকে জাহাজ দুর্ঘটনার কথা শোনার পর আমি আমার দুজন চৌকিদার নোমান ও রঘুকে দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজের কাছে পাঠিয়েছি। তারা সেখানে সারা রাত পাহারা দিয়েছেন এবং উদ্ধার হওয়া নাবিকদের খোঁজ খবর নিয়েছেন। বর্তমানে তারা নিরাপদে আছেন।’

চৌকিদার নোমান বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব বলার পর আমি আর রঘু চৌকিদার একটি ট্রলার নিয়ে রাত দেড়টার দিকে দুর্ঘটনাস্থলে যাই। সারা রাত সেখানে অবস্থান করি। আমরা জাহাজে উঠেছি। প্রথমে জাহাজের একটি হেজে পানি ছিল, কিন্তু রাত ৩টার জোয়ারে পানি বেশি হওয়ায় জাহাজের তিনটি হেজেই পানি ঢুকে গেছে। তবে ভাটায় পানি নেমে গেলে জাহাজটি দেখা যাবে। জোয়ারের তোড়ে জাহাজটি খালের ভেতর ঢুকে পড়ায় গভীর সাগরে তলিয়ে যাওয়ার আর সম্ভাবনা নেই।’

রামগতির বড়খেরী নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘জাহাজডুবির কথা আমরা শুনেছি। আমাদের ট্রলার বিকল থাকায় তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে ট্রলারের ব্যবস্থা করে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ বা নাবিকদের যাতে নিরাপত্তার কোনো সমস্যা না হয়, এ জন্য আমরা লোক পাঠিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি।’

জাহাজের পক্ষ থেকে ইদ্রিস খান নামের একজনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্ঘটনার বিষয়ে রামগতি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে বলে জানান রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন