হোম জাতীয় ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে চালু হচ্ছে মেট্রোরেলের আরও দুই স্টেশন

জাতীয় ডেস্ক:

ডিসেম্বর মাসের ১২ থেকে ১৪ তারিখের মধ্যে মেট্রোরেলের আরও দুটি স্টেশন কারওয়ানবাজার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চালু হতে পারে। সব স্টেশন চালুর পর সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মতিঝিল-উত্তরা উত্তর প্রতি ১০ মিনিট পর পর ট্রেন চলবে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সব স্টেশন চালুর পর পুরোদমে ট্রেন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে পুরোদমে উত্তরা-মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেন পরিচালনার কথা জানিয়েছেন ডিএমটিসিএল সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ। তিনি কালবেলাকে বলেন, চলতি মাসেই উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচলের সময় বাড়তে পারে। বর্তমানে এই অংশে সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলাচল করছে।

তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ধাপে ধাপে স্টেশনগুলো চালু করার। সব স্টেশন আগে চালু করে তারপর সময়ের সঙ্গে সমন্বয় শেষে পুরোদমে ট্রেন চলাচল শুরু করতে চাই। জানুয়ারি মাসের মধ্যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেট্রোরেল পরিচালনা করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

মেট্রোরেল পূর্ণাঙ্গ চালু হলে সময়ও বাড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, অবশ্যই আমাদের ইচ্ছে আছে পুরোপুরি মেট্রোরেল চালু হলে সময়ও বাড়ানোর। তখন রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। আর যাদের র‌্যাপিড পাস আছে তারা সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলাচল করতে পারবেন।

উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের মোট ১৬টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি স্টেশন চালু করা হয়েছে। বাকি রয়েছে আরও ৪টি স্টেশন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শুক্রবার মেট্রোরেলের সাপ্তাহিক ছুটি।

মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সকাল ৭.১০ ও ৭.২০ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দুটি ট্রেন চলছে। এমআরটি ও র‌্যাপিড পাস ব্যবহারকারীরা এই ট্রেনে চলাচল করতে পারবেন। এ ছাড়া সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলা সব ট্রেনে সব ধরনের যাত্রীরা চলাচল করতে পারেন। এরপর ১১.৪০, ১১.৫০, ১২টা ও ১২.১২ মিনিটে মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত চারটি ট্রেন ছেড়ে যায় নিয়মিত। এমআরটি ও র‌্যাপিড পাস যাদের রয়েছে তারা এই চার ট্রেনে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন।

গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের অংশ উদ্বোধন করেন। আর গত ৪ নভেম্বর তিনি উদ্বোধন করেন আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ।

২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কমলাপুর পর্যন্ত অংশেই ট্রেন চলাচল চালুর ঘোষণা আছে সরকারের। প্রায় ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেট্রোরেল চালুর মধ্য দিয়ে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে।

২০৩০ সালের মধ্যে মোট ছয়টি রুটে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত অংশের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এই রুটটি যুক্ত করবে পূর্বাচলকেও। সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত আরেকটি রুটের নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের কথা ছিল গত ১০ সেপ্টেম্বর। সেটি পিছিয়ে গেছে।

গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত রুটটিতে অর্থায়ন চূড়ান্ত হয়েছে। সেটি আগামী মার্চের মধ্যে চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে পারে। অন্য দুটি রুট হলো এমআরটি-৪ যেটি কমলাপুর থেকে যাবে নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে এবং এমআরটি-২, যেটি গাবতলী থেকে নিউমার্কেট হয়ে যাবে নারায়ণগঞ্জের কলকুঁড়ি। এটি যুক্ত করবে সদরঘাটকেও। তবে এই দুটির অর্থায়ন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত নকশা, কিছুই এখনো ঠিক হয়নি।

ঢাকার প্রথম মেট্রোরেলের (এমআরটি লাইন-৬) উত্তরা-আগারগাঁও অংশে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন শুরু হয় গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর। প্রথমে কিছুদিন সীমিত পরিসরে চলার পর চলতি বছরের ৩০ মার্চ পুরোদমে শুরু হয় যাত্রী পরিবহন।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রতিদিন ৯০ হাজার থেকে এক লাখ যাত্রী এ অংশ ব্যবহার করছে। মেট্রোরেল ব্যবহার করা এ যাত্রীদের নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।

চলমান এ গবেষণার প্রাথমিক ফলে উঠে এসেছে, মেট্রোরেলের ৫৯ দশমিক ৪১ শতাংশ যাত্রী আগে যাতায়াতের জন্য পাবলিক বাস ব্যবহার করত। মেট্রো চালুর পর বাস ছেড়ে তারা যাতায়াতের ক্ষেত্রে ট্রেন বেছে নিয়েছে।

‘মডেলিং প্রিরিসিভড সার্ভিস কোয়ালিটি অব মেট্রোরেল অব ঢাকা সিটি ইউজিং স্ট্রাকচারাল ইকুয়েশন অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক গবেষণাটি পরিচালিত হচ্ছে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামানের তত্ত্বাবধানে।

চলমান এ গবেষণার অংশ হিসেবে গত ১৭ জুলাই থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভ্রমণ করা যাত্রীদের ওপর জরিপ চালানো হয়। জরিপে অংশ নেয় ২ শতাংশ মেট্রো ব্যবহারকারী।

গবেষণায় উঠে এসেছে, মেট্রোরেল ব্যবহারকারীদের বেশির ভাগ আগে যাতায়াতের জন্য বাস ব্যবহার করত। বাস ছেড়ে মেট্রোরেলে এসেছে এমন যাত্রীর পরিমাণ ৫৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। বাসের পর মেট্রোরেলে সবচেয়ে বেশি যাত্রী আসছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে।

জরিপে অংশ নেওয়া ১৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ যাত্রী জানিয়েছে, মেট্রোরেল চালুর আগে তারা যাতায়াতের জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশা ব্যবহার করত।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন