হোম অন্যান্যসারাদেশ ডিজিটালাইজেশনের সঠিক পথেই এগোচ্ছে বাংলাদেশ

ডিজিটালাইজেশনের সঠিক পথেই এগোচ্ছে বাংলাদেশ

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 97 ভিউজ

সংকল্প ডেক্স :

এরিখ অস এখন বাংলালিংকের সিইও। একসময় গ্রামীণফোনের সিইওর দায়িত্বও পালন করেছেন। প্রায় দুই দশক ধরে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তিগত উন্নয়ন দেখছেন নিবিড়ভাবে। সম্প্রতি ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে সমকালের সঙ্গে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথযাত্রায় টেলিযোগাযোগ খাতের অবস্থান নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি।করোনা মহামারি টেলিকম খাতকে কতটা প্রভাবিত করেছে? এই প্রভাব কতটা ইতিবাচক বা নেতিবাচক বলে আপনি মনে করেন? করোনা মহামারির কারণে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি।

তবে একজন টেলিকম বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি এটিকে শিক্ষণীয় একটি বিষয় হিসেবে নিতে চাই। মহামারির মতো বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের চাহিদা কীভাবে পরিবর্তিত হয়, তা এই সময়ে আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছি। এ ছাড়া বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা ব্যবহার করে এই চাহিদা কীভাবে পূরণ করা সম্ভব, সে সম্পর্কেও আমাদের ধারণা হয়েছে। গত দুই প্রান্তিকে টেলিকম অপারেটরদের আয় কিছুটা কমলেও এই সময়ে ডিজিটাল সেবার ওপর গ্রাহকদের নির্ভরশীলতা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে। গ্রাহকরা উপলব্ধি করেছেন, সব পরিস্থিতিতেই ডিজিটাল সেবা তাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখতে পারে।করোনা মহামারির এই সময়ের চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণের উপায় কী?দেশের সব অপারেটর ও সরকারি কর্তৃপক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে করোনা মহামারির এ ধরনের প্রভাবগুলো অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।

তবে মহামারি অব্যাহত রয়েছে বলে এ ব্যাপারে সতর্ক থেকে নিজেদের প্রস্তুত রাখতে হবে। আমার বিশ্বাস, আগামীতে টেলিকম খাতের নীতিমালা পুনর্বিবেচনা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে এই খাতকে কর্তৃপক্ষ সামনে এগিয়ে নেবে। এই বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ডেটা থেকে বাংলালিংকের আয় ও ডেটা ব্যবহারকারীর সংখ্যা আগের বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় যথাক্রমে ৩০.৩ শতাংশ ও ৩.৩ শতাংশ বেড়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে বাংলালিংকের সেলফ কেয়ার অ্যাপ ‘মাই বাংলালিংক’ ও ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ ‘টফি’ ব্যবহারকারীর সংখ্যাও এই বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় যথাক্রমে ৫৮ শতাংশ ও ৬২ শতাংশ বেড়েছে। এই ফলাফল প্রমাণ করে, গ্রাহকদের চাহিদা বিবেচনা করে ডিজিটাল সেবা দিলে তারা সব পরিস্থিতিতেই এই সেবা নেবেন।

 টেলিকম খাতে এসএমপি নীতিমালার বাস্তবায়নকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেসব প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এসএমপি নীতিমালার বাস্তবায়ন অন্যতম। টেলিকম খাতে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করতে উদ্যোগটি জরুরি ছিল। তবে এ জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলো এসএমপি অপারেটরের আধিপত্য রোধে যথেষ্ট কার্যকর নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এ ক্ষেত্রে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। কয়েক মাস আগে আমরা এসএমপি অপারেটরকে সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনার নামে আগ্রাসী বিপণন কৌশল প্রয়োগ করতে দেখেছি। টেলিকম খাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য এ ধরনের আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। উচ্চ মাত্রার কর ও অন্যান্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এমনিতেই ছোট অপারেটরগুলোকে চাপে রেখেছে। এমন অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার পর্যাপ্ত সহযোগিতা ছাড়া আমাদের পক্ষে কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

 বাংলালিংকসহ দেশের সব অপারেটরই প্রয়োজনের তুলনায় কম স্পেকট্রাম নিয়ে সেবা দিচ্ছে। এ কারণে গ্রাহকরা মানসম্মত সেবা পাচ্ছেন না। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?মানসম্মত টেলিকম সেবা নিশ্চিত করার একটি প্রধান পূর্বশর্ত হলো পর্যাপ্ত পরিমাণ স্পেকট্রাম। ২০১৮ সালে ১০.৬ মেগাহার্জ স্পেকট্রাম কেনার পর বাংলালিংকের সেবার মান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে। বর্তমানে গ্রাহকপ্রতি স্পেকট্রাম প্রদানের ক্ষেত্রে আমরা দেশের বেসরকারি অপারেটরগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছি। কর্তৃপক্ষ সাশ্রয়ী মূল্যে স্পেকট্রাম বিক্রয় করলে আমাদের পক্ষে সেবার মান বাড়ানো আরও সহজ হবে। আশা করছি, বিষয়টির দিকে কর্তৃপক্ষ নজর দেবে। সরকার যদি এর মূল্য কমাতে চায়, তাহলে অবশ্যই আমরা সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাব। তবে আশা করব, যেসব অপারেটর আগে নিলামের মাধ্যমে স্পেকট্রাম কিনেছিল তাদের হ্রাসকৃত মূল্য অনুযায়ী সেই সময় পরিশোধিত অর্থের একটি অংশ ফেরত দেওয়া হবে। অন্যান্য ব্যান্ডের নতুন স্পেকট্রামের মূল্যও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমানো উচিত। কারণ, ৫জি-এর মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জন্য আরওবেশি পরিমাণ স্পেকট্রাম প্রয়োজন হবে।

 ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যাত্রার প্রায় সম্পূর্ণটাই আপনি দেখেছেন। আপনি কি মনে করেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সঠিকভাবেই এগোচ্ছে সরকার?সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়া সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ব্যাপারে সরকারের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে দেশে শক্তিশালী প্রযুক্তিগত অবকাঠামো তৈরির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টেলিকম অপারেটররা সরকারের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করে এই উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। একটি দেশের মানুষ কীভাবে নিজেদের প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ডিজিটাল জীবনযাত্রাকে গ্রহণ করছে, তাও ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার একটি অংশ। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রেও অভাবনীয় উন্নতি সাধন করেছে।

 বাংলাদেশের টেলিকম খাতের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ এবং মতামত কী?নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে আরও অপারেটরবান্ধব করার জন্য কর্তৃপক্ষ কিছু বিষয় বিবেচনায় নিতে পারে। প্রথমত, সাশ্রয়ী মূল্যে স্পেকট্রাম ক্রয় আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি আমাদের নতুন ব্যবসায়িক সুযোগ সৃষ্টিতে সহযোগিতা করতে হবে। কর্তৃপক্ষকে এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে যেখানে টেলিকম খাত সংশ্নিষ্ট সব পক্ষ আরও সুসংহতভাবে কাজ করতে পারে।

বাংলাদেশে ৫জি সেবা চালু হওয়ার ব্যাপারে আপনি কী ভাবছেন?৫জির মতো উন্নত সেবার সংযোজন বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। তবে বর্তমান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এটি ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের জন্য লাভজনক নয়। ৩জি ও ৪জি সেবা চালু করতে আমাদের যে বিনিয়োগ করতে হয়েছে, সে তুলনায় আমাদের আয়ের পরিমাণ অনেক কম। এমন অবস্থায় ৫জি চালু করা হলে তা আমাদের জন্য আরেকটি আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। এ কারণে, ৫জি চালুর আগে সঠিক নীতিমালা গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা না হলে আমাদের পক্ষে এই ক্ষেত্রে অবদান রাখা কঠিন হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন