সোহাগ মোল্লা , মোংলা প্রতিনিধি :
ডলার সংকটের কারণে বিশ^ অর্থনীতি যখন টালমাটাল, তখন দেশীয় অর্থনীতির ওপর মারতœক প্রভাব পড়তে শুরু করে। কমে যায় আমদানি পণ্য। এতে করে ক্ষতির মুখে পড়ে দেশের অর্থনীতি। এই অবস্থায় মোংলা বন্দরে গাড়ি আমদানি কমে গেলে এক বছরে ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারায় মোংলা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
তবে আশার কথা হলো-ডলারের কিছুটা যোগান পাওয়ায় গাড়ি আমদানিতে ফিরেছেন ব্যবসায়ীরা। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে তফসিলী ব্যাংকগুলোতে ডলারের (বৈদেশিক মুদ্রা) প্রবাহ ছিল। এজন্য কিছু গাড়ি আমদানি করা হয়েছে। এই অবস্থায় মোংলা বন্দরে ৭০৩টি গাড়ি নিয়ে বৃহস্পতিবার (৪ মে) ভিড়েছে একটি বিদেশি জাহাজ। এদিন দুপুরে বন্দরের ৮ নম্বর জেটিতে মালেয়শিয়া পতাকাবাহী ‘এম ভি মালেয়শিয়া স্টার’ জাহাজটি নোঙ্গর করে। জাহাজ থেকে গাড়িগুলো রাতের মধ্যেই খালাস শেষ করা হবে।
চলতি মাসের ১৯ এবং ২১ মে বিলাসবহুল আরও গাড়ি নিয়ে আসবে আরও দুটি বিদেশি জাহাজ। গত মে মাসেও এই বন্দরে এসেছে আরও ৫০০ গাড়ি। মালেয়শিয়া স্টার জাহাজের স্থানীয় শিপিং এজেন্ট এনশিয়েন্ট স্টীম শিপের খুলনার ব্যবস্থাপক মোঃ ওহিদুজ্জামান এই তথ্য জানান।
ওগিদুজ্জামান আরও বলেন, বৃহস্পতিবার যে গাড়ি আমদানি করা হয়েছে তার মধ্যে এক্সিও, প্রিমিও, এলিয়ন, অ্যাকুয়া, প্যারাডো ও মিনিবাসসহ একাধিক ব্রান্ডের গাড়ি রয়েছে। এগুলো জাপান থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে মোংলা বন্দরে এসেছে। এর আগে এই চালানের ৫৫৯টি গাড়ি খালাস করা হয়। এর আগে ডলার সংকটের কারণে গত বছরের আগষ্ট থেকে ব্যাংকগুলো এলসি খোলার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করায় বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে গাড়ি আমদানি বন্ধ ছিল। তবে এখন ডলারের কিছুটা যোগান পাওয়া যাচ্ছে বলে গাড়ি আমদানি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স আ্যন্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারবিডা) সভাপতি হাবিবুল্লাহ ডন বলেন, ডলার সংকটের কারণে গাড়ি আমদানি করা যাচ্ছিলনা। গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ডলারের ভয়াবহ সংকট ছিল। জানুয়ারি মাসের পরে কিছু ডলার ছেড়েছে। এরপরে এলসি দেওয়ার সুবাধে এই গাড়ি আমদানি করা হচ্ছে।
তবে ডলার সংকট পুরোপুরি কাটেনি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘সংকটের পূর্বে মোংলা ও চট্রগ্রাম বন্দরে প্রতি মাসে দেড় থেকে দুই হাজার গাড়ি আমদানি করা হতো। কিন্তু গত ৮/৯ মাসে তেমন গাড়ি আমদানি করা যায়নি। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রæয়ারি থেকে ডলারের যোগান পাওয়ায় কিছুটা এলসি করেছি। সেই এলসিকৃত গাড়ি মোংলা ও চট্রগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে’। ডলারের পরিবেশ স্বাভাবিক হলে গাড়ি আমদানিও স্বাভাবিকভাবে ফিরবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ডলার সংকটে গাড়ি আমদানি কমে যাওয়ার কারণে সরকারের রাজস্ব আদায়ে প্রচুর ঘাটতি দেখা দেয় জানিয়ে এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘দুই বন্দরে বছরে ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব দিতাম আমরা। সেখানে সংকটের কারণে গাড়ি আমদানি করতে না পারায় প্রায় ৯ মাসে সরকারের এই খাত থেকে ৫০ শতাংশ রাজস্ব আদায় কমে গেছে’।
মোংলা কাস্টমস হাউসের যুগ্ন কমিশনার মোঃ মাহফুজ আহম্মেদ বলেন, কাস্টস হাউসের বছরে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হতো গাড়ি আমদানির মাধ্যমে। কিন্তু এখন সেটা নাই। ডলার সংকটের কারণে গাড়ি আমদানি অর্ধেকে নেমে আসে। সেক্ষেত্রে এক বছরে মোংলা কাস্টমসের ৪০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কমে গেছে।