এবারের ঈদযাত্রায় ট্রেনের শতভাগ টিকিট অনলাইনে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া কাউন্টার থেকেও দেয়া হয়েছে স্ট্যান্ডিং টিকিট। বিনা টিকিটে ট্রেনযাত্রা বন্ধে টিকিট ছাড়া কাউকে প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে না দেয়ার সিদ্ধান্তও এবার পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে।
কমলাপুর রেল স্টেশনে টিকিট ছাড়া কাউকেই প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি আত্মীয় পরিচয় দিয়েও প্রবেশ করতে পারছেন না কেউ। বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) এমন চিত্রই দেখা গেছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এবার তারা খুব কঠোর। ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণ বন্ধ করতেই এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কমলাপুর রেল স্টেশনের প্রবেশপথে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও রেলওয়ের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। প্রত্যেক ব্যক্তির প্রবেশের সময় টিকিট চেক করা হচ্ছে, কারো সঙ্গে টিকিট না থাকলে তাকে ফিরিয়ে দিতে দেখা গেছে।
কমলাপুরে এক ব্যক্তি রেলে কর্মরত তার চাচার সঙ্গে দেখা করতে এলে তাকেও প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তিনি লোক শ্রেণির ইনচার্জ মোস্তফা কামালের কাছে যেতে চান। বেশ কিছুক্ষণ সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। ওই ব্যক্তি দাবি করেন, তিনি কি ভ্রমণে যাচ্ছেন যে টিকিট লাগবে, ভেতরে তার চাচার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন।
এবার নতুন পদ্ধতিতে কালোবাজারি বন্ধে মার্চ থেকে নিবন্ধিত যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে যার নামে টিকিট, তার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়।
এরপর একজন যাত্রী সর্বোচ্চ যে চারটি টিকিট কাটবেন, সবার নাম থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়। অন্য বছর টিকিট কাটার ক্ষেত্রে এত বিধিনিষেধ ছিল না। আর ঈদযাত্রায় বিপুলসংখ্যক মানুষ ভ্রমণ করেছে স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটে।
এবারও স্ট্যান্ডিং টিকিট থাকবে। তবে শর্তের কারণে নিবন্ধন না থাকলে কাটতে পারবেন না কেউ।
আজ (বৃহস্পতিবার) উত্তরবঙ্গের ট্রেনগুলোতে কিছুটা ভিড় থাকলেও পূর্বাঞ্চলের ট্রেনগুলো ছিল বেশ ফাঁকা। এর অন্যতম কারণ, শতভাগ অনলাইন টিকিটিং সিস্টেম। যারা ১০ এপ্রিল অনলাইনে আগাম টিকিট কেটেছিলেন, তারাই যাত্রা করছেন। অনলাইন টিকিট ছাড়াও ট্রেন ছাড়ার দুই ঘণ্টা আগে পাওয়া যাচ্ছে স্ট্যান্ডিং টিকিট। ২৫ ভাগ টিকিট এর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অন্যান্যবারের তুলনায় এবার ট্রেনে ঘরমুখী মানুষ ঝামেলা ছাড়া বাড়ি যেতে পারছেন। কালোবাজারির মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট কেনা বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে স্টেশনের বাইরে তেমন বিশৃঙ্খলা নেই। এমনকি ট্রেনের ভেতরের পরিবেশও স্বস্তিদায়ক। তাই ঈদযাত্রায় ট্রেনে ভ্রমণ করতে পেরে উচ্ছ্বসিত যাত্রীরা। অনলাইনের টিকিট ঝামেলা পেরিয়ে যারা নিশ্চিন্তে উঠে বসেছেন ট্রেনে, তাদের ঈদ আনন্দ যেন শুরু হয়ে গেছে তখন থেকেই।
রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেসের যাত্রী আলী হোসেনের কাছে এবারের ঈদে ট্রেন যাত্রাটা একেবারেই অন্যরকম। ঈদ পালন করতে নিজের শহরের উদ্দেশে রাজধানী কমলাপুর স্টেশন ছেড়েছেন তিনি।
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি সময় সংবাদকে বললেন, ‘অন্য বছর সারা রাত স্টেশনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতাম। কিন্তু ভিড়ের কারণে সিটে বসতে পারতাম না। স্টেশনে ঢোকার পথেই টিকিট চেক করল কয়েকবার। কোনো ভিড় ছাড়া ট্রেনে উঠলাম, সহজেই এসে সিটে বসলাম। এত স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা আমি এর আগে কখনো দেখিনি।’