জাতীয় ডেস্ক:
চলতি অর্থ বছর শেষ হতে বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। এরই মধ্যে তড়িঘড়ি করে দরপত্র আহ্বান এবং অফিস শুরুর আগে খুব অল্প সময়ে আরএফকিউইউয়ের দরপত্র জমাদানের প্রক্রিয়া শেষ করেছে বান্দরবান গণপূর্ত বিভাগ।
২০ ও ২১ জুন সকালে ইজিপি টেন্ডারের মাধ্যমে মোট ৮ টি প্রকল্পের দরপত্র গ্রহণের কার্য সম্পাদন করা হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের এমন তড়িঘড়ি করে প্রকল্পগুলোর দরপত্র জমাদানের সময় ও প্রক্রিয়া নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে স্থানীয় ঠিকাদাররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, চলতি জুন মাসের মধ্যে প্রাপ্ত বাজেটের টাকা শেষ করতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে বান্দরবান গণপূর্ত বিভাগ ইজিপি টেন্ডারে ২০ জুন বান্দরবান জেলায় আরএফকিউইউয়ের মাধ্যমে ৭টি এবং ২১ জুন ১টি প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করে। ইজিপির লাইভ টেন্ডারে প্রকল্পের দরপত্র জমাদানের জন্য সময় দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টা। শুধু তাই নয়, বেশিরভাগ প্রকল্পের দরপত্র জমাদানের সময় শেষ হয়েছে অফিস শুরুর আগেই।
দুই লাখ টাকা করে ৮ টি প্রকল্পের জন্য মোট বরাদ্দ ১৬ লাখ টাকা। প্রকল্পগুলো হলো- বান্দরবান গণপূর্ত অফিসের পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও পানি সাপ্লাই মেরামত কাজ, গণপূর্ত অফিসের কাঁটা তার ও সীমানা প্রাচীর মেরামত, বান্দরবান জেলাপ্রশাসক কার্যালয়ের পয়নিষ্কাশন পানি সাপ্লাই ও ড্রেন মেরামত, বান্দরবান শিশু পরিবারের ইলেকট্রিসিটি মেরামত ফ্যান তার পরিবর্তন, ডেঙ্গু মশা প্রতিরোধে বান্দরবান জেলখানার উঠান ও ড্রেন পরিষ্কার, ডেঙ্গু মশা প্রতিরোধে বান্দরবান সার্কিট হাউসের উঠান ও ড্রেন পরিষ্কার এবং বান্দরবান সদর হাসপাতালের বিভিন্ন বৈদ্যুতিক কাজের মেরামত ট্রান্সফরমারের তার পরিবর্তন। এর মধ্যে একটি প্রকল্পে দরপত্র জমাদানের সময় শুরু হয়েছে ভোর ৬ টা ৫৫ মিনিটে এবং শেষ হয়েছে সকাল ৮ টা ২৫ মিনিটে। যা অফিস সময় শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়েছে।
এছাড়াও ৩ টি প্রকল্প ৭ টা ৩০ থেকে ১০ টা পর্যন্ত এবং বাকিগুলোও ৮ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত চালু ছিল যে কারণে বেশিরভাগ প্রকল্পে ঠিকাদাররা দরপত্র জমা দিতে পারেন নি। অফিসের এমন কাণ্ডে হতবাক স্থানীয় ঠিকাদাররাও।
গণপূর্ত বিভাগ বান্দরবানের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার কামরুজ্জামান বলেন, ‘এভাবে দরপত্র দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। কাজ না করে জুন মাসের মধ্যে বিল উত্তোলন করতে এটা করেছে তারা। ভোরবেলা অল্প সময়ের জন্য টেন্ডার আহবান করেছে। যাতে অন্য কোনো ঠিকাদার দরপত্র সাবমিট করতে না পারে। অফিসের লোকজন নিজেদের পছন্দমতো কোটেশন দিয়ে কাজগুলো সম্পন্ন দেখিয়ে বিল উত্তোলন করে নেবে।’
স্থানীয় ঠিকাদার মেহেদী হাসান জানান, ‘এটা শুধুমাত্র আইওয়াশ। প্রকল্পের নাম দিয়ে টাকা মারতে নামমাত্র এ দরপত্র দেয়া হয়েছে। না হলে অফিস শুরু হওয়ার আগে দরপত্র ওপেন করা হয়েছে। আর সর্ট টাইমে আবার শেষ করে দেয়া হয়েছে। সে সময় অনেকে ঘুম থেকেও ওঠেনি। কারণ জুন মাস শেষ হয়ে গেলে এ টাকা আর উত্তোলন করতে পারবে না। আর ২০ তারিখ দরপত্র আহবান করা হয়েছে, তাহলে তারা কাজ শেষ করবে কখন, বুঝে নেবে কখন? সময় আছে মাত্র ৪/৫ দিন। এটা আসলে কাগজে কলমে প্রকল্প দেখিয়ে বিল উত্তোলন করার একটি পায়তারা ছাড়া আর কিছুই না।’
এবিষয়ে বান্দরবান গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী সুমিত রায় বলেন, ‘আমাদের হাতে সময় নেই। জুন মাসে কাজের চাপ বেশি। তাই তাড়াহুড়া করে প্রকল্পগুলো দরপত্র আহ্বান করে কাজ শুরু করে দেয়া হয়েছে। তবে প্রকল্পের নিয়ম মেনেই সব করা হয়েছে। যারা রেসপনসিভ লাইসেন্স কোটেশন জমা দিয়েছে সেখান থেকেই যোগ্যতার ভিত্তিতে কাজ দেয়া হয়েছে। আর ইজিপি প্রক্রিয়ার মধ্যে এটি গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে করা সম্ভব হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্ষাকাল এসে যাওয়ায় বিভিন্ন দপ্তর থেকে ফোন আসছে কাজগুলো তাড়াতাড়ি করার জন্য। তাই একটু তাড়াহুড়া করে করতে হয়েছে। তবে আগে এভাবে অল্প সময়ে করা হয়নি বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, শুধু আরএফকিউইউ ই নয়, এ দপ্তরের বিভিন্ন দরপত্র নিজেদের পছন্দের ঠিকাদারদের দেয়ার জন্য বিভিন্ন কাজের দরপত্রে এধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বলেও স্থানীয় ঠিকাদারদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।