তরুণদের টার্গেট করে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তৈরি করা ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে সদস্য এবং অর্থ সংগ্রহ করাই ছিল জঙ্গিদের মূল লক্ষ্য।
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র চার জঙ্গিকে চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় বেশ কিছু ভিডিও ক্লিপ।
গ্রেফতার চার জঙ্গি সদস্য হলেন: শেখ আহমেদ মামুন ওরফে রমেশ, শামিম মিয়া ওরফে বাকলাই ওরফে রাজান, নিজাম উদ্দিন হিরন ও জহিরুল ইসলাম ওরফে আহমেদ (পেশায় চিকিৎসক)।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি র্যাবের গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব-৭ চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত আরও চার জঙ্গিকে ধরে। তাদের মধ্যে আল আমিন ওরফে মিলদুকের কাছে পাওয়া মোবাইল ফোনে আনিছুর রহমান ও আবদুল্লাহ মাইমুনের বক্তব্যের ভিডিও পাওয়া যায়। তথ্যমতে, ভিডিওটি গত বছরের নভেম্বরের। ভিডিওটি তাদের গ্রুপের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। গত ২২ জানুয়ারি জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রণবীরকে আটক করা হয়। তখন তার মোবাইল ফোন থেকে ৮ মিনিটের একটি ভিডিও উদ্ধার করা হয়। ভিডিওতে মোট ২৯ জঙ্গিকে শনাক্ত করা হয়। এবার পাওয়া ৭ মিনিটের ভিডিওতে ২৩ জঙ্গিকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জন আগের ভিডিওতেও ছিলেন। অর্থাৎ এই ভিডিওতে নতুন চার জঙ্গির (গ্রেফতার হওয়া) উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
আল মঈন বলেন, ‘নতুন ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে আমরা দেখতে পাই, গহীন জঙ্গলে অস্ত্র হাতে চলছে জঙ্গি প্রশিক্ষণ। তরুণদের আকৃষ্ট করতে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ভিডিওবার্তা ছড়ানো হচ্ছে। আহ্বান করা হচ্ছে জঙ্গি সংগঠনে যোগদানে। অপরদিকে নিজেদের অস্তিত্ব দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে জানান দেয়ার উদ্দেশ্যেও এই ভিডিও তৈরি করা হতে পারে। সংগঠনটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, অর্থাৎ আমির আনিছুর রহমান, অর্থ ও মিডিয়া শাখার প্রধান রাকিব, দাওয়াতি শাখার প্রধান আবদুল্লাহ মাইমুনকে গ্রেফতার করা গেলে এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যাবে। তবে এখন পর্যন্ত জানা গেছে, দুটি ভিডিওর নেপথ্যে কণ্ঠ দিয়েছেন আল আমিন ওরফে বাহাই। তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে নিখোঁজ শিক্ষার্থী রিয়াসাত রায়হান ওরফে আবু বক্করের প্রাইভেট টিউটর। আর ভিডিও সম্পাদনা করেছেন পাভেল নামের আরেক জঙ্গি।
ধর্মান্তরিত তরুণের জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেয়ার বিষয়ে র্যাবের মুখপাত্র বলেন, পার্থ কুমার দাস ২০১৮ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ঢাকার কাকরাইলে চাকরি করার সময় পলাতক জঙ্গি সিরাজের মাধ্যমে তিনি উদ্বুদ্ধ হন। পরে তাকে বলা হয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে চাকরিসহ দাওয়াতি কার্যক্রমে তাকে নেয়া হবে। সেই কথা অনুযায়ী তিনি পাহাড়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছিলেন।
পাহাড় থেকে জঙ্গিদের সমতলে চলে আসার প্রসঙ্গে আল মঈন বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিরা বলছেন, আমিরের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজেদের নিরাপত্তার জন্য আপাতত তারা আত্মগোপনে থাকছেন। এখন তারা শুধু আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে সমতলে এসেছেন, না অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে, তা পরে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে। সবশেষ গ্রেফতার চারজনের সঙ্গে আরও চার-পাঁচজনের একটি দল ছিল। তারা বান্দরবানের দুর্গম এলাকা থেকে চারদিন হেঁটে শহরে আসেন। ভেঙে ভেঙে তারা চট্টগ্রামের দিকে আসছিলেন।
র্যাব জানায়, গত বছরের ২৩ আগস্ট কুমিল্লা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আট তরুণ নিখোঁজের সূত্র ধরে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা এবং অন্যান্য ব্যাটালিয়ন গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। একপর্যায়ে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের খোঁজ পাওয়া যায়। এই সংগঠনের ৫৫ জন সদস্য পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ছত্রছায়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের গহীন অরণ্যে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য চট্টগ্রামে গত ৩ অক্টোবর থেকে র্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলছে। র্যাবের অভিযানে এ পর্যন্ত ৫৯ জন জঙ্গি এবং জঙ্গি প্রশিক্ষণে সহায়তার অভিযোগে ১৭ জন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া র্যাব এই সংগঠনের দুই সদস্যকে জঙ্গিবাদের পথ থেকে ফিরিয়ে এনে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে।
র্যাব জানায়, ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্য ছিল জঙ্গি দলটির।