হোম রাজনীতি জাতীয় পার্টির ইশতেহার: ক্ষমতায় গেলে যা যা করবে

রাজনীতি ডেস্ক:

‘শান্তির জন্য পরিবর্তন, পরিবর্তনের জন্য জাতীয় পার্টি’ স্লোগানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। ক্ষমতায় এলে নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার এবং এককেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তন করে প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা প্রণয়নের অঙ্গীকার করে ২৪ দফার এই ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের অঙ্গীকার করা হয়েছে; কালো আইন বাতিল, জনসংখ্যা কমানো, বেকারত্ব ও বাজার ব্যবস্থায় গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা নাগাদ জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ২৪ দফা এ ইশতেহার ঘোষণা করেন।

জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় গেলে যা যা করবে–

সরকার হবে দুই স্তর বিশিষ্ট, বিভাগগুলো হবে প্রদেশ
সংসদ নির্বাচন হবে আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে
অনিয়ম, দুর্নীতি, দীর্ঘসূত্রতা ও অব্যবস্থার মূল কারণ উদঘাটনে কমিশন গঠন করা হবে
নিবর্তনমূলক কালো আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করা হবে
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বাজেট ও সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ছাড়া ফ্লোর ক্রসিংয়ের সুযোগ তৈরি করা হবে
এরশাদের গুচ্ছগ্রাম, পথকলি ট্রাস্ট ফিরিয়ে আনা হবে
স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য থাকবে রেশনিং ব্যবস্থা
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে বিশেষ ‘স্বাস্থ্যনীতি’ হবে
কর্মমুখী শিক্ষায় বেশি জোর দেওয়া হবে
মেয়েদের স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করা হবে
স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা বেকার তরুণ-তরুণীরা পাবেন ভাতা

আট পৃষ্ঠার ইশতেহারে দুর্নীতি বন্ধের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এতে প্রাধান্য পেয়েছে কর্মমুখী শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি। বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর ওই পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ীই সরকার পরিচালনা করছে।

এছাড়া দেশের চলমান বাস্তবতায় বিকেন্দ্রীকরণ, বিচারব্যবস্থা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের ঘোষণাও রয়েছে দলটির নির্বাচনী ইশতেহারে।

এতে আরও বলা হয়েছে, উপজেলায় স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে দলটি নির্বাচনব্যবস্থার পরিবর্তন করবে। সেই সঙ্গে এতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতেও গুরুত্ব থাকছে। পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের রূপরেখাও দেয়া হয়েছে এ ইশতেহারে।

পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন করে উপজেলা আদালত ও পারিবারিক আদালত চালুর প্রতিশ্রুতিও রয়েছে জাতীয় পার্টির ইশতেহারে।

সরকারের পাশাপাশি প্রশাসনিক ও বিচারবিভাগের সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরে সেখানে বলা হয়, বিচার বিভাগকে সম্পর্ণ পৃথকীকরণ করতে সংবিধানের ১১৬ নং অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হবে। নিম্ন আদালত ও বিচারকের সংখ্যাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়াবে জাতীয় পার্টি।

বিচার প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থায় অনিয়ম, দুর্নীতি, দীর্ঘসূত্রতা ও অব্যবস্থার মূল কারণ উদঘাটন করতে ‘জরুরি’ ভিত্তিতে জাতীয় পর্যায়ে কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দলটি।

এই কমিশন ছয় মাসের মধ্যে সুপারিশ দেবে। একটি জাতীয় আইন কমিশন গঠন করবে দলটি দেশের আইনজ্ঞদের সমন্বয়ে।

সরকার গঠন করতে পারলে নিবর্তনমূলক কালো আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জাতীয় পার্টি। বাজেট ও সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ছাড়া ফ্লোর ক্রসিংয়ের সুযোগ তৈরি করতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার প্রতিশ্রুতিও ইশতেহারে রয়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির সংস্কার করার পরিকল্পনা তুলে ধরে ইশতেহারে বলা হয়, এরশাদের করে যাওয়া গুচ্ছগ্রাম, পথকলি ট্রাস্ট পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।

চুন্নু বলেন, তারা ক্ষমতায় গেলে কৃষক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ভর্তুকি দেওয়া হবে। ধান, চাল, পাট, আখ, চা, তামাক আলুসহ সকল কৃষিপণ্যের ‘লাভজনক মূল্য’ নিশ্চিত করা হবে। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য থাকবে রেশনিং ব্যবস্থা।

ইশতেহারে চাঁদাবাজি বন্ধ, দুর্নীতি দমনসহ সকল আইন যুগোপযোগী, বিদেশি শ্রমের নতুন বাজার তৈরি এবং শিল্পায়নকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

ক্ষমতায় গেলে পাঁচ বছরের মধ্যে ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ সেবা নিশ্চিত করবে জাতীয় পার্টি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে বিশেষ ‘স্বাস্থ্যনীতি’ প্রণয়ন করবে।

জাতীয় পার্টি অঙ্গীকার করেছে, ক্ষমতায় গেলে কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন তারা প্রণয়ন করবে না। সাধারণ শিক্ষার চেয়ে কর্মমুখী শিক্ষায় বেশি জোর দেওয়া হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর, ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে বিজ্ঞান শিক্ষার সমন্বয় করা হবে, কমানো হবে শিক্ষা উপকরণের দাম। মেয়েদের স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করা হবে।

গ্রাম ও শহরে ওয়ার্ড পর্যায় থেকে বেকার তরুণ-তরুণীদের তালিকা প্রণয়ন করে যোগ্যতা অনুসারে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র নিরূপণ করবে জাতীয় পার্টি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা বেকার তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত সরকারিভাবে তাদের ভাতা দেয়ার অঙ্গীকারও ইশতেহারে রয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন